
ব্যস্ত জীবনে সুস্থ শরীর ও প্রখর স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে সেলিব্রিটিরা নিয়মিত কিছু মাইন্ডফুল অভ্যাস অনুসরণ করেন। এই অভ্যাসগুলো শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজের দক্ষতা বাড়ায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন ৭টি কার্যকরী রুটিন, যা আপনি সহজেই প্রতিদিন অনুশীলন করতে পারেন।
সকাল শুরু করুন মেডিটেশন দিয়ে
দিনের শুরুতে মাত্র ১০-১৫ মিনিট মেডিটেশন বা ধ্যান করুন। মেডিটেশন স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অনেক ভালো কাজ করে এটি মস্তিষ্কের স্ট্রেস হরমোন কমিয়ে ফোকাস ও সৃজনশীলতা বাড়ায়। অনেক বিখ্যাত তারকারা প্রতিদিন এই অভ্যাস চর্চা করেন। বেশিরভাগ মানুষ কয়েক দিন মেডিটেশন করে এরপর ফলাফল না দেখে ধৈর্য হারিয়ে মেডিটেশন করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এর ফলাফল পেতে কিছুটা সময় প্রয়োজন তাই ধৈর্য সহকারে প্রতিদিন কিছু সময় মেডিটেশন করতে হবে।
হাইড্রেটেড থাকুন লেবু-পানি দিয়ে
গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। লেবু-পানি আপনাকে সুস্থ এবং সতেজ রাখতে একটি সহজ, সাশ্রয়ী এবং স্বাস্থ্যকর সমাধান হতে পারে। লেবু-পানিতে থাকা ভিটামিন-সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। এই অভ্যাস মেটাবলিজম সক্রিয় করে, টক্সিন দূর করে এবং ত্বক ও পেশির স্বাস্থ্য উন্নত করে। এটি শুধু পানি ঘাটতিই পূরণ করে না, বরং হজমশক্তি বাড়াতে, ত্বককে উজ্জ্বল রাখতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই এই গরমে নিজে ও পরিবারের সবাই লেবু-পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং নিয়মিত মস্তিষ্কের ব্যায়াম করুন
নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, ক্রসওয়ার্ড, বা সুডোকুর মতো মস্তিষ্কের ব্যায়াম করুন। মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ রাখার আরেকটি দুর্দান্ত উপায় হচ্ছে গণিত অনুশীলন। এটি আমাদের মস্তিষ্ককে দ্রুত চিন্তা করার জন্য চ্যালেঞ্জ করে এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করে। তাই ক্যালকুলেটর ব্যবহার না করে বিভিন্ন খরচের হিসাব করার চেষ্টা করুন।
প্রোটিন ও ফাইবারযুক্ত সকালের নাস্তা
প্রোটিন শরীরের কোষ গঠনে সহায়তা করে এবং পেশি শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। সকালের নাস্তায় প্রোটিন থাকলে তা দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভূতি দেয়, ফলে অপ্রয়োজনীয় খাবারের প্রবণতা কমে। প্রোটিনসমৃদ্ধ নাস্তায় যা রাখতে পারেন: ডিম, ডাল, ছোলা, বাদাম ও বীজ, চিজ বা পনির। অন্যদিকে ফাইবার হজমে সাহায্য করে, রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদ্রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। সকালের নাস্তায় ফাইবার থাকলে তা হজম প্রক্রিয়াকে গতি দেয় এবং শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- আপেল, কলা, টমেটো, পালং শাক, বাদাম ও রুটি।
মাইন্ডফুল ওয়াকিং বা প্রকৃতিতে সময় দিন
মাইন্ডফুল ওয়াকিং মানে হলো এমনভাবে হাঁটা, যেখানে আপনি আপনার নিজের নিশ্বাস, পায়ের স্পর্শ, চারপাশের শব্দ, গন্ধ, বাতাস—সবকিছুকে অনুভব করেন। এটি মানসিক শান্তির অন্যতম সহজ পথ। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটুন বা পার্কে সময় কাটান। প্রকৃতির সংস্পর্শ মানসিক চাপ কমায় এবং শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ায়। প্রতিদিন মাত্র ১০-১৫ মিনিট প্রকৃতির মাঝে মাইন্ডফুল ওয়াকিং আপনার মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে পারে। তাই প্রযুক্তির জগৎ থেকে কিছুটা সময় বের করে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া উচিত।
যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং করুন
যোগব্যায়াম ও স্ট্রেচিং শরীরের পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, এটি মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ক্লান্তি দূর করে মানসিক প্রশান্তি আনে। রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, হজমে সহায়তা করে এবং ব্যথা কমায়। নিয়মিত এই চর্চা দীর্ঘমেয়াদে শরীর ও মনের ভারসাম্য রক্ষা করে।
রাতে ডিজিটাল ডিটক্স
ঘুমানোর কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে মোবাইল, ল্যাপটপ বন্ধ করুন। এর পরিবর্তে বই পড়ুন বা গান শুনুন। এই অভ্যাসগুলো কোনো জটিল রুটিন নয়, বরং ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন দীর্ঘমেয়াদি সুফল। আজ থেকেই এই অভ্যাসগুলো চর্চার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলুন সেলিব্রিটিদের মতোই!
রবিউল হাসান