
সংগৃহীত
কখনো কি আপনি লক্ষ্য করেছেন, কিছু সহকর্মী একের পর এক প্রোমোশন পাচ্ছে, অথচ অন্যরা বছরের পর বছর একই জায়গায় আটকে থাকে? অনেক সময় এটা ভাগ্য বা পরিচিতি বলে মনে হতে পারে, কিন্তু মনোবিজ্ঞানীরা কিছু নির্দিষ্ট শক্তিশালী অভ্যাস চিহ্নিত করেছেন, যেগুলো দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার সাফল্যকে নির্ধারণ করে।এগুলো কোনো সাধারণ বৈশিষ্ট্য নয়।এগুলো হলো এমন অভ্যাস যা সেরা কর্মীদের অন্যদের থেকে আলাদা করে।
আপনি যদি আপনার ক্যারিয়ারে উন্নতি চান, কিংবা কোনো স্তরে আটকে গিয়ে মনে করেন কিছু একটা পরিবর্তন দরকার, তবে এই পাঁচটি অভ্যাস মেনে চললে অসাধারণ ফল পেতে পারেন। সবচেয়ে ভালো কথা, এগুলোর কোনোটি আপনার পারফেক্ট রিজ্যুমে বা আইভি লিগ ডিপ্লোমার ওপর নির্ভর করে না।
চলুন, দেখে নিই কীভাবে আপনি এই অভ্যাসগুলো আপনাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন।
১) তারা স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেন
অনেকেরই কিছু আকাঙ্ক্ষা থাকে-যেমন, ভালো চাকরি বা বেশি বেতন পাওয়া।কিন্তু সফল মানুষরা সুনির্দিষ্ট। তারা জানেন, আগামী ছয় মাস, এক বছর, বা পাঁচ বছরে তাদের কী অর্জন করতে হবে। এটা শুধুমাত্র একটি স্বপ্নের বোর্ড তৈরি করে বসে থাকা নয়, বরং পরিষ্কার লক্ষ্য স্থির করা এবং নিয়মিতভাবে অগ্রগতি মূল্যায়ন করা।
ড্যানিয়েল গোলম্যান, যিনি অনুভূতিমূলক বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করেছেন, তিনি লক্ষ্য নির্ধারণে আত্মমর্যাদা এবং আত্মবিশ্বাসের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। যখন আপনি আপনার শক্তি এবং দুর্বলতা সম্পর্কে জানেন, তখন আপনি বাস্তবসম্মত কিন্তু চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য স্থির করতে পারেন।
২) তারা অনুভূতিমূলক বুদ্ধিমত্তায় বিনিয়োগ করেন এবং অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন
সফল পেশাজীবীরা জানেন, একা সাফল্য পাওয়া কঠিন। তাদের একে অপরের উপর নির্ভরশীলতার সম্পর্ক থাকে,এমনকি যখন কোন বড় সিদ্ধান্ত নেবেন তখন একজন সহকর্মীর পরামর্শ নিতে হয়।
আবার অনেকেই প্রযুক্তিগত দক্ষতায় এগিয়ে থাকেন, কিন্তু তারা লিডারশিপ বা মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যান। অনুভূতিমূলক বুদ্ধিমত্তা (EQ) মানে শুধু নিজের অনুভূতির প্রতি সচেতন থাকা নয়, বরং সেগুলোকে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা এবং অন্যদের অনুভূতিও বোঝা।
যদি আপনি নিজের উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, ঘর-বাড়ির পরিবেশে ভালোভাবে কাজের পরিবেশ গড়ে তুলতে পারেন, এবং চিন্তা করে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন, তাহলে আপনি ইতিবাচকভাবে অন্যদের প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে সফল হতে পারেন।
৩) তারা কাজের পাশাপাশি আত্ম-যত্নে বিশ্বাসী
সফল মানুষরা জানেন, কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা কতটা জরুরি। তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ভারসাম্য বজায় রাখা,অর্থাৎ, তারা জানেন কখন কাজ করতে হবে এবং কখন বিশ্রাম নিতে হবে।
৪) তারা ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেন এবং স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলেন
কোনো ক্যারিয়ার পথ কখনোই একদম সোজা পথে চলে না। আপনার পথে বাধা আসবেই। হয়তো একটি প্রকল্প ব্যর্থ হয়ে যাবে বা কোনো প্রস্তাব ব্যর্থ হয়ে যাবে, কিন্তু যারা সত্যিকার সফল, তারা এগুলোকে একটি শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করেন।
ব্যর্থতা মানে পরাজয় নয়, বরং এটি হলো আরো ভালোভাবে কাজ করার সুযোগ। সফল মানুষরা তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আবারও নতুন উদ্যমে এগিয়ে যান। তারা ভাবেন, “এটা কীভাবে উন্নতি করা যায়?” পরিবর্তে, নিজেদের প্রতি দায়ী হতে গিয়ে তারা এগুলোকে উন্নতির জন্য ব্যবহার করেন।
৫) তারা কৌতূহল বজায় রাখেন এবং শিখতে থাকেন
আপনি হয়তো বর্তমানে ভালোভাবে কাজ করছেন, তবে যদি আপনি শিখতে থামিয়ে দেন, তাহলে আপনি দ্রুতই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বেন। বর্তমান কর্মজীবন খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। যারা সাফল্য ধরে রাখতে চান, তাদের জন্য শিখতে থাকা অত্যন্ত জরুরি।
এটা হতে পারে নতুন কিছু সফটওয়্যার শিখা, নতুন কোনো কোর্সে অংশ নেওয়া, অথবা কোনো নতুন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা। যারা শিখতে থাকেন তারা দীর্ঘমেয়াদি সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হন।
ক্যারিয়ারের সফলতা প্রায়ই বাইরের দিকে এলোমেলো মনে হতে পারে, তবে এই সাতটি অভ্যাস দেখায়, এর মধ্যে একটা প্রকৃত পদ্ধতি রয়েছে। স্পষ্ট লক্ষ্য আপনাকে ফোকাস রাখে, অনুভূতিমূলক বুদ্ধিমত্তা আপনাকে দলের সঙ্গে সফল করে, এবং প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করার মানসিকতা আপনাকে আরও ভালো করতে সাহায্য করে।
ধৈর্য এবং আত্ম-যত্নের সমন্বয়ে আপনি জ্বলন্ত শক্তি ধরে রাখতে পারেন, এবং ব্যর্থতার থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে উন্নত করতে পারেন। সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে আপনি সহায়তা পাবেন, আর শিখতে থাকা আপনাকে প্রাসঙ্গিক রাখবে। এগুলো সব মিলিয়ে, আপনার ক্যারিয়ারের সফলতা স্থায়ী হয়ে উঠবে।
সূত্র:https://tinyurl.com/3f6fbc63
আফরোজা