ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২

দাম্পত্য জীবন সুখী ও দীর্ঘ করতে জাপানিরা যে ৫ কৌশল মেনে চলেন

প্রকাশিত: ১০:২৭, ৮ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১০:২৮, ৮ এপ্রিল ২০২৫

দাম্পত্য জীবন সুখী ও দীর্ঘ করতে জাপানিরা যে ৫ কৌশল মেনে চলেন

ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্বব্যাপী চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার ছায়া পড়েছে ব্যক্তি সম্পর্কেও। জেদ, অহংবোধ, এবং ‘কে বড়, কে ছোট’ এই প্রতিযোগিতা এখন দীর্ঘদিনের সম্পর্কেও ফাটল ধরাচ্ছে। বিশেষ করে বৈবাহিক সম্পর্কে বোঝাপড়ার অভাব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ঘাটতি সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলছে। ফলে বর্তমান সময়ে একটি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যেন কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে জাপানের সমাজে দাম্পত্য জীবনে স্থিতি ও সুখ ধরে রাখার জন্য রয়েছে কিছু ব্যতিক্রমী চর্চা ও দৃষ্টিভঙ্গি। জাপানিরা বিশ্বাস করে, সম্পর্ক শুধু আবেগের বিষয় নয়—বরং এটি দায়িত্ব, ধৈর্য এবং কৃতজ্ঞতাভিত্তিক এক সম্মিলিত প্রয়াস। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এমনই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলের কথা উঠে এসেছে, যা অনুসরণ করে জাপানি দম্পতিরা তাদের দাম্পত্য জীবনকে রাখে সুদৃঢ় ও সুখময়।

১. ‘আইমাই’ চর্চা—অপ্রয়োজনীয় কলহ এড়িয়ে যাওয়া

জাপানি সংস্কৃতিতে যোগাযোগকে সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, সব কিছু সরাসরি না বলে পরোক্ষভাবে বা কৌশলে প্রকাশ করাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ‘আইমাই’ বলতে বোঝায়, এমন যেকোনো কথাবার্তা বা তর্ক এড়িয়ে যাওয়া, যা নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনতে পারে। সব সময় সোজাসাপ্টা কথা বলা ভালো হলেও, জাপানিরা বিশ্বাস করে—কখনো কখনো অস্পষ্ট থেকে সঙ্গীকে নিজ অবস্থান বোঝার সুযোগ দেওয়া সম্পর্ককে আরও মজবুত করে।

২. ‘গামান’—ধৈর্য ও সহনশীলতার অনুশীলন

‘গামান’ শব্দটির অর্থ হলো—জটিল পরিস্থিতিতেও ধৈর্য ধারণ করা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখে সমস্যার সমাধান করা। এটি মূলত আবেগের পরিপক্বতা, আত্মসংযম এবং সহনশীলতা চর্চাকে উৎসাহিত করে। জাপানি দম্পতিরা বিশ্বাস করে, ধৈর্য কোনো দুর্বলতা নয়; বরং এটি একটি সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার অন্যতম শক্তি।

৩. ‘ইতাদাকিমাস’—অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

জাপানে খাবারের আগে ‘ইতাদাকিমাস’ বলার একটি প্রচলন রয়েছে, যার মধ্যে নিহিত থাকে কৃতজ্ঞতা। তবে শুধু খাবার নয়, জীবনের প্রতিটি বিষয়েই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ জাপানিদের সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অংশ। সঙ্গীর ছোট খাটো কাজ কিংবা আন্তরিকতায় প্রশংসা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করার মাধ্যমে সম্পর্ক হয়ে ওঠে আরও আবেগময় ও আন্তরিক। এটি দাম্পত্য জীবনের প্রতিদিনের সাধারণ মুহূর্তগুলোকেও বিশেষ করে তোলে।

৪. ‘মা’—ব্যক্তিগত পরিসর বজায় রাখা

‘মা’ অর্থ হলো বিরতি বা ফাঁকা জায়গা। জাপানিরা বিশ্বাস করে, সারাক্ষণ একসঙ্গে থাকলেই সম্পর্ক গভীর হয় না; বরং কিছুটা ব্যক্তিগত পরিসর থাকাই সম্পর্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। প্রত্যেকে যেন নিজের মতো করে সময় কাটাতে পারে, আলাদা বন্ধু বা আগ্রহের জায়গা গড়ে তুলতে পারে—এই বিষয়গুলো সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং উভয়ের মানসিক পরিপক্বতাকে বাড়ায়।

৫. ‘ওয়া’—সম্পর্কে ঐক্য ও ভারসাম্য বজায় রাখা

‘ওয়া’ শব্দটির অর্থ হলো ঐক্য বা সুরের মেলবন্ধন। এই ধারণা জাপানি দম্পতিদের শেখায়—সঙ্গীকে নিয়ন্ত্রণ না করে বরং বোঝাপড়ার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ার প্রতি গুরুত্ব দেন তারা। অহংকার ত্যাগ করে সঙ্গীর অবস্থান থেকে পরিস্থিতি বিবেচনা করাকে ইতিবাচক ফলাফলের পথ হিসেবে দেখা হয়।

জাপানিদের এই দর্শন ও চর্চাগুলো থেকে বোঝা যায়, সম্পর্ক শুধুই ভালোবাসা বা আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি একটি নিত্যদিনের মানসিক প্রস্তুতি, যেখানে ধৈর্য, শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা এবং পরস্পরের স্বাধীনতা মেনে চলার অভ্যাস প্রয়োজন। আজকের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যেখানে বিচ্ছেদ ও মানসিক দূরত্ব বাড়ছে, সেখানে জাপানি দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারে টেকসই সম্পর্ক গঠনের একটি কার্যকর রোডম্যাপ।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সায়মা ইসলাম

×