ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

পরিবারের প্রথম কোটিপতি হতে মেনে চলুন ওয়ারেন বাফেটের ৫ টিপস

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ৮ এপ্রিল ২০২৫

পরিবারের প্রথম কোটিপতি হতে মেনে চলুন ওয়ারেন বাফেটের ৫ টিপস

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের অন্যতম শ্রদ্ধেয় বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট আজ শুধু এক নাম নয়, একটি প্রতিষ্ঠান। যার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৬৫ বিলিয়ন ডলার, তিনি নিজেই বলেছেন—এই পথ শুরু করেছিলেন শূন্য থেকে। উত্তরাধিকারসূত্রে না পেয়ে, কঠোর নিয়ম, মিতব্যয়িতা, বিচক্ষণ বিনিয়োগ আর অদম্য ধৈর্যের জোরেই তিনি গড়ে তুলেছেন এই অঢেল সম্পদ। আশ্চর্যের বিষয়, আমেরিকার ৮৮% কোটিপতিরাও তার মতোই প্রথম প্রজন্মের ধনী—অর্থাৎ, তারা নিজের চেষ্টাতেই কোটিপতি হয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে, যদি আপনিও পরিবারে প্রথম কোটিপতি হতে চান, তাহলে বাফেটের পাঁচটি মূলমন্ত্র অনুসরণ করাই হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত। দেখে নিন সেই সফলতার পরীক্ষিত ৫টি টিপস:

১. মিতব্যয়ী হোন: সাশ্রয়েই শুরু ধনসম্পদের পথ
ওয়ারেন বাফেটের জীবনযাপনই তার মিতব্যয়িতার প্রতীক। আজও তিনি থাকেন সেই পুরনো বাড়িতেই, যা ১৯৫৮ সালে কিনেছিলেন মাত্র ৩১,৫০০ ডলারে। বিলিয়ন ডলার সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তার প্রাতরাশ আসে ম্যাকডোনাল্ডস থেকে, আর পানীয় হিসেবে বেছে নেন চেরি কোক।

তার মতে, “ব্যয় করার পরে যেটুকু থাকে তা সঞ্চয় করো না; বরং সঞ্চয় করার পরে যা থাকে তা ব্যয় করো।” এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু সঞ্চয় বাড়ায় না, বরং ভবিষ্যতের বিনিয়োগের ভিত্তিও গড়ে তোলে।

একজন ব্যক্তি যদি তার আয়ের ২০% সঞ্চয় করেন, তবে দীর্ঘমেয়াদে এই ছোট অভ্যাসই তাকে কোটিপতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। শুরু করতে পারেন জনপ্রিয় ৫০/৩০/২০ বাজেট মডেল দিয়ে—৫০% প্রয়োজনীয় খরচ, ৩০% ইচ্ছেমতো ব্যয়, আর ২০% সঞ্চয় ও বিনিয়োগ।

২. কম্পাউন্ডিং-এর শক্তি: যত আগে শুরু, তত বেশি লাভ
মাত্র ১১ বছর বয়সে শেয়ারবাজারে হাতেখড়ি নিয়েছিলেন বাফেট। তিনি বলেন, “চক্রবৃদ্ধি সুদ বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য।” এর প্রভাব এতটাই বিস্ময়কর যে, সময় যত দীর্ঘ, ফল তত বড়।

ধরুন, আপনি ২৫ বছর বয়সে ১০,০০০ ডলার বিনিয়োগ করলেন ৮% বার্ষিক রিটার্নে—৪০ বছরে তা দাঁড়াবে ২ লাখেরও বেশি ডলারে। আর যদি শুরু করেন ৩০ বছর বয়সে, তখনই হারাবেন প্রায় ৭০,০০০ ডলার।

বাফেট বলেন, “শেয়ারবাজার হলো ধৈর্যহীনদের থেকে ধৈর্যশীলদের কাছে অর্থ হস্তান্তরের একটি যন্ত্র।” তাই এখনই শুরু করুন—দ্রুত নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে লক্ষ্য রেখে।

৩. প্রকৃত মূল্য বোঝার কৌশল: জল্পনা নয়, জ্ঞান
বিনিয়োগে বাফেট সবসময় জোর দেন 'ভ্যালু ইনভেস্টিং'-এ। তিনি বলেন, “দাম আপনি যা দেন, আর মূল্য আপনি যা পান।” এর মানে, বাজারে কোনো কোম্পানির শেয়ার তার প্রকৃত মূল্য থেকে কমে পাওয়া গেলে, সেটাই হতে পারে সেরা সুযোগ।

কোকাকোলা কিংবা অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানে তার বিনিয়োগ এই কৌশলের সাফল্য দেখিয়েছে। আপনি চাইলে বুঝে-বুঝে ভ্যালু ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন, অথবা এমন ব্যবসা বেছে নিতে পারেন যা আপনি নিজেই ভালো বোঝেন।

সবচেয়ে বড় কথা, বাফেট বলেন—বাজারে জল্পনা নয়, নিরাপদ মার্জিনে বিনিয়োগ করাই আসল বুদ্ধিমত্তা।

৪. ঋণ পরিহার করুন: ঋণমুক্ত জীবন মানেই নিরাপদ আর্থিক ভবিষ্যৎ
উচ্চ সুদের ঋণ ধনী হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। বাফেট স্পষ্ট করে বলেন—প্রয়োজন নেই এমন কিছু কেনার জন্য যদি আপনি ঋণ নেন, এক সময় এমন জিনিসও বিক্রি করতে হতে পারে যা আপনার সত্যিই দরকার।

ক্রেডিট কার্ডের মতো ঋণ যেখানে সুদের হার আকাশছোঁয়া, সেখানে সেই অর্থ সঞ্চয় বা বিনিয়োগে লাগালে হতে পারত বহু গুণ মুনাফা।

তাই ধাপে ধাপে ঋণ শোধ করুন, বাজেট বানান, এবং সংকটকালে কাজে লাগবে এমনভাবে নগদ সংরক্ষণ করুন—এটাই তার শিক্ষা।

৫. নিজের মধ্যে বিনিয়োগ করুন: জ্ঞানে বৃদ্ধি, আয়ে বৃদ্ধি
বাফেট প্রতিদিন পড়েন ৫০০ পৃষ্ঠা। জীবনের শুরুতে মাত্র ১০০ ডলারে ডেল কার্নেগির পাবলিক স্পিকিং কোর্স করেছিলেন, যেটিকে তিনি জীবনের সেরা বিনিয়োগ বলে মনে করেন।

একটি ডিগ্রি, নতুন একটি স্কিল, অথবা নিজেকে প্রযুক্তিগতভাবে আপডেট রাখা—সবই আপনাকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। শুধু তা-ই নয়, এসব দক্ষতা আপনাকে আরও ভালো বিনিয়োগকারীও বানায়।

নিজেকে গড়ে তুলুন—নতুন কিছু শিখুন, নেটওয়ার্ক তৈরি করুন, অথবা সাইড ইনকাম শুরু করুন। নিজের উন্নতিই ভবিষ্যতের পথ পরিষ্কার করে।

প্রথম প্রজন্মের কোটিপতি হওয়া কোনো অলৌকিক ব্যাপার নয়। বরং, এটি একটি পরিকল্পিত যাত্রা—যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ হিসেব করে নিতে হয়। ওয়ারেন বাফেটের নীতিগুলো—মিতব্যয়, আগেভাগে বিনিয়োগ, প্রকৃত মূল্য বোঝা, ঋণমুক্ত থাকা এবং নিজের মধ্যে বিনিয়োগ—এই সবকটি একত্রে কাজ করে ধনসম্পদের ভিত্তি তৈরি করে।

তার কথায়, “আজ যে ছায়ায় আপনি বসে আছেন, তা বহু বছর আগে কেউ একটি গাছ লাগিয়েছিল বলেই সম্ভব।” তাই দেরি না করে, আজ থেকেই শুরু করুন নিজের সেই আর্থিক গাছ রোপণের কাজ। একদিন আপনিও হতে পারেন পরিবারের প্রথম কোটিপতি।

এম.কে.

×