
ছবি: প্রতীকী
বর্তমান যুগে কর্মস্থলের চাপ আর মানসিক স্ট্রেস এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে অনেকেই অকালে জীবন হারাচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রতিবছর দেশটিতে বহু কর্মজীবী মানুষ তাদের কর্মস্থলেই মারা যাচ্ছেন। এসব মৃত্যুর পেছনে মূলত হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেইন স্ট্রোককে দায়ী করা হয়েছে, এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়,এসব মানুষের গড় বয়স মাত্র ৪০ বছর। চিকিৎসকরা বলছেন, মৃত্যুর পেছনে মূলত কাজের চাপ, মানসিক ক্লান্তি ও দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেসই দায়ী।
এই সমস্যা শুধুমাত্র আমেরিকায় সীমাবদ্ধ নয়। জাপানেও প্রতি বছর বহু মানুষ অফিসের কাজের চাপে প্রাণ হারাচ্ছেন। দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালে জানায়, শুধু ওই বছরেই ২,৩১০ জন কর্মজীবী অতিরিক্ত কাজের চাপে মারা গেছেন। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, প্রকৃত সংখ্যা আরও ভয়াবহ—গড়ে বছরে ১০,০০০। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই মৃত্যুর উৎস একটাই—পেশাগত ক্লান্তি ও মানসিক অবসাদ।
বেশিরভাগ মানুষ জানেন না, তারা ধীরে ধীরে এক বিষাক্ত আবর্তে আটকে পড়ছেন, যেখান থেকে বের হওয়া কঠিন। প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার ইচ্ছেটুকুও যখন হারিয়ে যায়, তখন বোঝা যায় মানসিকভাবে আপনি ভেঙে পড়ছেন। অনেক সময় সহকর্মী বা বসের সঙ্গে খিটখিটে আচরণ, ক্ষুধামান্দ্য, খাওয়ার সময় ঠিক না থাকা, বা রাতে ঘুম না হওয়ার মতো উপসর্গও দেখা দেয়। এগুলোকে আমরা হালকা করে দেখি, কিন্তু এগুলোর পিছনেই লুকিয়ে থাকে বড় বিপদের ইঙ্গিত।
ঘুমের অভাব শুধু আপনাকে ক্লান্ত করে না, এটি আপনার মস্তিষ্কের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। মেজাজ খারাপ, পারিবারিক সম্পর্কে টানাপোড়েন, এমনকি হৃদরোগের আশঙ্কাও তৈরি হয়। আপনি যদি নিজেকে অফিসে অবমূল্যায়িত মনে করেন, কিংবা দেখেন আপনার কাজের প্রশংসা হচ্ছে না, তখন নিজের মধ্যেই একধরনের হতাশা জন্ম নেয়। এই অবস্থা আপনাকে পেশাগত বিষণ্ণতার দিকে ঠেলে দেয়।
অনেক কর্মজীবী দিনের পর দিন একই কাজ করে যাচ্ছেন, কোনো সৃজনশীলতার সুযোগ নেই, নেই কোনও প্রমোশনের আশা—ফলে কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যায়। কিছু পেশা যেমন পুলিশ, ডাক্তার, বা ফায়ার সার্ভিসের মতো কাজে নিয়মিত স্ট্রেস মেনে নিতে হয়। আপনি যদি মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকেন, তবে সেই স্ট্রেস আপনাকে ভেঙে ফেলবে।
এইসব কারণ বিবেচনা করেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আপনার এই পেশা কি আপনার জীবনের ক্ষতি করছে? যদি করে, তাহলে বসের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন। সম্ভব হলে কাজের ধরনে কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন। যদি তাও সম্ভব না হয়, তবে নির্দ্বিধায় পেশা পরিবর্তনের চিন্তা করুন। জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান হচ্ছে আপনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা। একটি চাকরি জীবনকে গ্রাস করে নেওয়ার আগেই সেটি থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।
মনে রাখবেন, নতুন চাকরি পাওয়া কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। তবে জীবনটাই যদি চলে যায়, তাহলে চাকরির কোনো মানে নেই। সুতরাং, আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন তা ভালোভাবে ভাবুন। প্রয়োজনে পরিবর্তনের সাহস দেখান। পাখি যদি খাঁচাতেই জন্ম নেয়, তবে সে কখনো উড়তে পারে না। আপনি যেন সেই পাখি না হন—এটাই কাম্য।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/1qqevhcpRyw?si=LKP0VJ50AbrxCtzU
এম.কে.