ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৬ চৈত্র ১৪৩১

জেনে নিন ঈদ সালামির ইতিহাস

প্রকাশিত: ২২:২০, ২৭ মার্চ ২০২৫

জেনে নিন ঈদ সালামির ইতিহাস

ছবি সংগৃহীত

ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, আর ছোটদের জন্য তো বটেই, বড়দের জন্যও এক অমলিন স্মৃতির নাম ‘ঈদের সালামি’। চকচকে নতুন নোট হাতে পেয়ে শৈশবে যে উচ্ছ্বাস, তা যেন এক অদ্ভুত স্বাধীনতার স্বাদ এনে দিত। সময়ের সঙ্গে বদলালেও, সালামি পাওয়ার সেই মিষ্টি অনুভূতি আজও মনে দোলা দেয়।

এখন হয়তো আপনি নিজেই সালামি দেওয়ার ভূমিকায়, কিন্তু ছোটদের হাতে উপহার তুলে দেওয়ার যে আনন্দ, তা অনন্য। কেউ নগদ টাকা দেন, কেউ আবার খামে ভরে সালামি দেন। আধুনিক সময়ে ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে সালামি পাঠানোর প্রবণতাও বেড়েছে। তবে ঐতিহ্যের মূল ভাবনা একটাই-ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া।

ঐতিহাসিকদের মতে, ঈদের সালামির সূচনা হয়েছিল দশম শতাব্দীর ফাতিমীয় খেলাফত আমলে, মিসরে। সে সময় ঈদের দিনে রাজকোষ থেকে সাধারণ জনগণের জন্য উপহার দেওয়া হতো, যা শুধু নগদ অর্থেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পোশাক, মিষ্টি ও ফলমূলও দেওয়া হতো শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে।

সময়ের পরিক্রমায় এটি রাজপরিবারের গণ্ডি পেরিয়ে সাধারণ পরিবারের মধ্যেও প্রচলিত হয়। অটোমান সাম্রাজ্যের পরেও এটি পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে টিকে যায় এবং বিভিন্ন দেশে ঈদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে।

বিশ্বজুড়ে সালামির প্রথা বিভিন্ন দেশে ঈদের সালামি ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন-বাংলাদেশে ‘সালামি’ ভারত ও পাকিস্তানে ‘ঈদি’ আরব বিশ্বে ‘ঈদিয়াহ’ ও ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় ‘রায়া’। 

যদিও নাম ভিন্ন, তবে ঈদের দিনে ছোটদের হাতে সালামি তুলে দেওয়ার আনন্দ সর্বজনীন। অনেক দেশে শুধু টাকা নয়, মিষ্টি, চকলেট ও ছোট উপহারও সালামির অংশ হয়ে উঠেছে।

অনেকে মনে করেন, সালামি শুধু শিশুদের জন্য, তবে বেশ কিছু পরিবারে বড়দের সালামি দেওয়ার রীতি প্রচলিত। পরিবারের প্রবীণরা সন্তানতুল্য আত্মীয়দের সালামি দেন, যা ভালোবাসা ও আশীর্বাদের প্রতীক।

এছাড়াও, অফিস-আদালতে সিনিয়রদের কাছ থেকে জুনিয়রদের সালামি নেওয়ার মজার প্রথাও অনেক জায়গায় দেখা যায়, যা ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

শুধু পরিবারের শিশুদেরই নয়, ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিন। সুবিধাবঞ্চিত শিশু, বাড়ির সহকারী, নিরাপত্তারক্ষী কিংবা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরও ছোট উপহার বা সালামি দিন। সামান্য কিছুতেই তাদের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব, যা ঈদের আনন্দকে আরও অর্থবহ করে তুলবে।

সালামি দেওয়া-নেওয়ার এই ঐতিহ্য শুধু উপহার নয়, এটি ভালোবাসা ও সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করার এক অনন্য মাধ্যম।

আশিক

×