
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ ॥ কাজী নজরুল ইসলামের এ গানটি ঈদের দিনের আনন্দ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। চারদিক থেকে প্রায়ই ভেসে আসে সুমধুর এ সুর। আর মাত্র এক বা দুদিন পরেই আমরা বরণ করব খুশির ঈদকে। পবিত্র ঈদুল ফিতর একটি বিশেষ দিন, যেখানে আনন্দ, ভালোবাসা এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর এক অমূল্য সুযোগ পাওয়া যায়। ঈদে সাজপোশাকের ক্ষেত্রেও আলাদা আলাদা সময়ের জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত একেকটি সময়ের জন্য সাজে রয়েছে ভিন্নতা। এবার জেনে নেওয়া যাক- ঈদের দিনের বিভিন্ন সময়ে সাজ কেমন হওয়া উচিত।
ঈদের সকালের সাজ
ঈদের সকালে উৎসবের আমেজ থাকে নির্মল ও অফুরন্ত। সবার মধ্যে থাকে শুভ্র আনন্দ। এজন্য সকালের সাজটি হতে হবে সাবলীল, একদিকে যেমন রুচিশীল, তেমনি আরামদায়কও হওয়া প্রয়োজন।
পোশাক : সকালে সাধারণত হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরাই উত্তম। মেয়েরা পরতে পারেন সুতির অথবা সিল্কের সালোয়ার-কামিজ অথবা শাড়ি। ছেলেরা সাধারণত কুর্তা-পায়জামা বা পাঞ্জাবি পরতে ভালোবাসেন। পাঞ্জাবির রং হতে পারে হালকা সাদা, সোনালি অথবা ফ্যাক্স লাল, যেগুলো ঈদের শুভ আভা প্রকাশ করে।
হালকা মেকআপ : ঈদের সকালে খুব ভারি মেকআপ না করাই ভালো। লাইট ফাউন্ডেশন, ন্যাচারাল টোনের ব্লাশ এবং মুখে আলোকিত লুক এনে দেয় এমন হালকা শেডের লিপস্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে। চোখে মাস্কারা আর ক্রিম-শেডের আইশ্যাডো ব্যবহার করলে সকালের সাজটি হবে পরিপূর্ণ।
গহনা : হালকা গহনা পরা যেতে পারে। যেমন ছোট নেকলেস বা রিং। কিন্তু খুব ভারি গহনা পরার প্রয়োজন নেই ঈদের সকালে।
চুল : চুলের জন্য একটি সাধারণ সোজা বা হালকা ওয়েভি লুক রাখতে পারেন। চাইলে টুইস্টও করতে পারেন।
ঈদের দুপুরের সাজ
ঈদের দুপুরে সাধারণত পারিবারিক খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন থাকে, যেখানে অতিথিরা আসেন। তাই সাজে একটু বেশি ফিনিশিং এবং পরিপাটি হতে হবে।
পোশাক : দুপুরের সাজে একটু জমকালো পোশাক পরা উচিত। মেয়েরা ট্রেন্ডি সালোয়ার-কামিজ,কো-অর্ড সেট, শ্রাগ স্টাইল টিউনিক, টপস অথবা গাউন পরতে পারেন। এ সময়ে স্টাইলিশ ডিজাইন উপযুক্ত। ছেলেরা আধুনিক কুর্তা অথবা শেরওয়ানী পরতে পারেন, যা ঈদের ফেস্টিভ্যাল মুডকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলবে।
মেকআপ : দুপুরের সাজে মেকআপ কিছুটা ভারি হতে পারে। ফাউন্ডেশন, কনসিলার, পাউডার দিয়ে ত্বকে নিখুঁত বেস তৈরি করা যেতে পারে। আইশ্যাডো, আইলাইনার এবং লিপস্টিকের বোল্ড শেড ব্যবহার করে মেকআপ করা যেতে পারে।
গহনা : দুপুরের সাজে একটু বড় গহনা পরা যেতে পারে। বড় নেকলেস, হালকা চুড়ি অথবা কানের দুল পরতে পারেন, যা পোশাকের সঙ্গে মানানসই হবে। সোনালি অথবা রুপালি গহনা বেশ ভালো লাগে ঈদের দুপুরে।
চুল : চুল একটু বেশি সাজিয়ে বাঁধা যেতে পারে। পনি টেল বা খোঁপা করা যেতে পারে। এর সঙ্গে একটি সুন্দর হেডপিস যোগ করলে বেশ ভালো লাগবে।
ঈদের বিকেলের সাজ
ঈদের বিকেলে ঈদ উৎসবের পুরো আকর্ষণ যেন ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়। বিকেলের সময়টি সাধারণত খাওয়া-দাওয়ার পর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বা বাইরে যাওয়ার জন্য ভালো সময়। এই সময়ের সাজ একটু স্টাইলিশ এবং আধুনিক হতে হবে।
পোশাক : বিকেলের সাজে অধিকাংশ সময়ে পরিপাটি পোশাক পরা হয়। মেয়েরা মডার্ন সালোয়ার-কামিজ অথবা অনুশীলনের মতো কোনো পোশাক পরতে পারেন। বিকেলের জন্য ডিজাইন বা নকশা করা শাড়ি পরা যায়, যা আধুনিক লুক দেবে।
মেকআপ : বিকেলের সাজে মেকআপ একটু ভারি হতে পারে, যেমন গাঢ় লিপস্টিকের শেড এবং চোখে স্মোকি আই বা ড্রামাটিক আইশ্যাডো দেওয়া যেতে পারে। ব্লাশ এবং হাইলাইটারও ব্যবহার করা যেতে পারে যেন মুখের ত্বক আরও উজ্জ্বল দেখায়।
গহনা : বিকেলের সাজে বড় হুপ ইয়াররিংস, চেন বা ড্রামাটিক ব্রেসলেট পরা যেতে পারে। গহনা নির্বাচনে সৃজনশীলতার ছাপ থাকুক।
চুল : চুলের পাফ করা স্টাইল খুব সুন্দর দেখাবে। খোলা বা অর্ধেক বাঁধা চুলের সঙ্গে স্টাইলিশ হেডপিসও যোগ করতে পারেন।
রাতের সাজ
ঈদের রাতের সাজ হলো একেবারে গর্জিয়াস সাজ। সন্ধ্যা বা রাতের সময়ের জন্য সাজের ধরনটা জমকালো, আকর্ষণীয় এবং দৃষ্টিনন্দন হতে হবে।
পোশাক : রাতে সুন্দর এবং জমকালো পোশাক পরা উচিত। মেয়েরা মেহেদি রংয়ের শাড়ি, লেহেঙ্গা অথবা গাউন পরতে পারেন যা দীপ্তির সঙ্গে একটি স্টাইলিশ লুক তৈরি করবে। ছেলেরা একেবারে ট্র্যাডিশনাল শেরওয়ানি বা মডার্ন ডিজাইনের কুর্তা-পাজামা বা টি-শার্টও পরতে পারেন।
মেকআপ : রাতের মেকআপ গাঢ় হতে পারে। হাইলাইটিং এর মাধ্যমে মুখে গভীরতা এবং উজ্জ্বলতা আনা যেতে পারে। আইলাইনার, লিপস্টিকের গাঢ় শেড এবং স্মোকি আইস চোখকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
গহনা : রাতের সাজের জন্য একটু বড় এবং স্টাইলিশ গহনা পরা যেতে পারে। বড় নেকলেস, ভারী কানের দুল এবং ব্রেসলেট বিশেষ আকর্ষণ বাড়াবে। সোনালি বা রুপালি গহনা পরলে ঈদের রাতের সাজ হবে আরও চমৎকার।
চুল : রাতের সাজের জন্য চুলে নান্দনিক স্টাইল দেওয়া যেতে পারে। ওয়েভি লুক, এলিগ্যান্ট কোঁকড়ানো চুল বা খোঁপা সাজ দিয়ে সাজানো যেতে পারে।
ঈদের দিনের সকালের সাজ হবে হালকা ও আরামদায়ক, দুপুরে হবে একটু জমকালো, বিকেলে হবে আধুনিক এবং রাতে হবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও উজ্জ্বল। এসব সাজে আপনার নিজস্ব স্টাইল এবং রুচির প্রকাশ ঘটে। উৎসবের দিনটি হোক আপনার সবচেয়ে সুন্দর সাজে সজ্জিত হওয়ার দিন। ঈদের আগে ত্বকের যত্নেও হতে হবে সচেতন। তাই যারা এখনও রূপচর্চার প্রস্তুতি নেননি, তারা কাছাকাছি কোনো বিউটি পার্লার থেকে ত্বক অনুযায়ী ফেসিয়াল করে নিন।