
ছবি: এস কে জায়েদ
এক মাস সিয়াম সাধনার পর দুয়ারে দাঁড়িয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঘরে ঘরে চলছে ঈদের তোড়জোড়। কেনাকাটা, ঘর সাজানো, রান্নার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত সবাই। আর যারা ঈদে গ্রামের বাড়ি যাবেন, তাদের আনন্দ আর প্রস্তুতি আরও বেশি। রোজার ঈদে সাধারণত কেনাকাটা হয় অনেক বেশি- পরিবার, আত্মীয়-স্বজন সবার জন্য। ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’- গানের সুর গুনগুন করে বাজছে সবার মনে। যান্ত্রিক এ জীবনে আমরা সবাই বছরজুড়ে ব্যস্ত থাকায় আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ থাকে না। তাই ঈদটা হয় বিশাল এক মিলনমেলা। প্রয়োজনে সঙ্গে কয়েকদিন ছুটি নিয়ে সবাই শিকড়ের পানে ছুটে যান। যাদের গ্রামে যাওয়ার উপলক্ষ থাকে না, তারা অনেকেই ঢাকার বাইরে কোথাও বেড়াতে চলে যান। সামর্থ্যবানরা যান দেশের বাইরে। কিন্তু এতসবের ভিড়ে আমরা কি আমাদের আশপাশের দরিদ্র পরিবারগুলোর কথা বা খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কথা মনে রেখেছি?
যারা গ্রামে যাবেন তারা অনেকে গরীব প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের জন্য কেনাকাটা করে থাকেন। শুধু গ্রামে না, শহরেও আমাদের আশপাশে এমন অনেক দরিদ্র শ্রেণি আছে, যারা ঈদের পোশাক তো দূরের কথা, সেমাইটুকুও কিনতে পারে না। প্রায় প্রতিটি বাসাতেই গৃহপরিচারিকা থাকে। তাদের জন্য শাড়ি আর সামান্য বখশিশ বরাদ্দ থাকলেও, তার পরিবারের জন্য আর কিছু থাকে না। অথচ নিজেরা অনেক দাম দিয়ে ঈদ পোশাক কিনছি। তাকে পোশাক দেয়ার সঙ্গে তার বাচ্চাদেরও যদি পোশাক দিতে পারি। সঙ্গে খাওয়ার জন্য সেমাই, দুধ, চিনি, পোলাওর চাল, মুরগি ইত্যাদি সামর্থ্যমত দিতে পারি। তাদের মুখের হাসিতে দেখবেন আপনার ঈদ পরিপূর্ণতা পাবে।
আবার কিছু প্রতিবেশী থাকেন যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল। আমরা নিজেদের কেনাকাটার তালিকায় তাদের জন্য কিছু রাখতে পারি। কথায় আছে, ‘ভোগে নয়, ত্যাগেই সুখ’। অন্যকে দেওয়ার মাঝে সত্যি অনেক শান্তি বিরাজ করে। প্রতিবেশীর ছোট শিশুটির জন্যে পোশাক কিনে দেয়া যেতে পারে বা ঈদ উপহার স্বরূপ সেমাই, দুধ, চিনি, পোলাও চাল দিয়ে ডালা সাজিয়ে তাদের দেয়া যেতে পারে। যদি সরাসরি দিলে তারা লজ্জা পাবেন মনে করেন, ঈদে প্রতি ঘরেই সাধারণত একটু বেশি পরিমাণে রান্না হয়, সেখান থেকে রান্না খাবারও তাদের দেয়া যেতে পারে। এতে করে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতা বাড়বে। নিজেদের জন্য অনেক দাম দিয়ে পোশাক না কিনে সেখান থেকে কিছু টাকা দিয়ে যদি একটি পথ শিশুর মুখে হাসি ফোটানো যায়, সেটাও অনেক তৃপ্তির।
আজকাল ফেসবুকের বদৌলতে অনেকেই সাহায্যের আবেদনের পাশাপাশি নিজেরা চাঁদা তুলে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত বা সমস্যাগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে। একার পক্ষে সম্ভব না হলে এভাবে কোনো দলের সঙ্গে সামর্থ্যমতো দিয়েও শরীক হতে পারেন। অথবা কয়েক বন্ধু মিলে কয়েকটা পরিবারে ঈদের খাবার কিনে দেয়া যেতে পারে। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। সেই খুশি আর আনন্দ যেন শুধু আমার নিজের ঘরেই না থাকে। পাশের ঘরের শিশুটিও যেন একটা নতুন জামা, একটু মিষ্টি খাবার খেতে পারে, আমরা যেন সেদিকেও খেয়াল রাখি। সামর্থ্যমতো খাবার ও পোশাক কিনে একদিন পথে ঘুরে ঘুরে চলুন দুঃখী আর অভাবী মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটাই, ছোট্ট একটা শিশুর মুখের হাসি হই।
রাজু