
ছবিঃ সংগৃহীত
কিশোর বয়স নানা চ্যালেঞ্জ ও আবেগের ঘূর্ণিঝড়ে ভরা একটি সময়। এই সময়ে সন্তানদের আবেগকে উপেক্ষা না করে, বরং তাদের পাশে থেকে তা বুঝতে চেষ্টা করাই সুস্থ অভিভাবকত্বের অন্যতম লক্ষণ। সম্প্রতি HT Lifestyle-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মনোবিজ্ঞানী, বিশেষ শিক্ষিকা ও মনোরোগ চিকিৎসক আলিশা লালজি জানিয়েছেন, “ইমোশনাল রেগুলেশন হলো আবেগ চিহ্নিত করা, নিয়ন্ত্রণ করা এবং সঠিক উপায়ে প্রকাশ করার দক্ষতা। এটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আবেগ নিয়ন্ত্রণ, মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখা এবং চ্যালেঞ্জের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।”
কিশোরদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার উপায়
১. খোলামেলা যোগাযোগ নিশ্চিত করা
কিশোরদের আবেগ প্রকাশের সুযোগ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি তারা ভয় বা বিচারভীতির কারণে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে না পারে, তবে তা মানসিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে। সক্রিয়ভাবে তাদের কথা শোনা, অনুভূতি স্বীকার করা এবং তৎক্ষণাৎ সমাধানের পরিবর্তে সঠিক পরামর্শ দেওয়া কিশোরদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে।
২. মানসিক প্রশান্তির কৌশল শেখানো
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে মাইন্ডফুলনেস ও রিলাক্সেশন টেকনিক কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। নিয়মিত গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের চর্চা, মেডিটেশন ও ডায়েরি লেখা কিশোরদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। পাশাপাশি শারীরিক ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও সুষম খাদ্যাভ্যাস তাদের মানসিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩. ইতিবাচক উদাহরণ সৃষ্টি করা
অভিভাবকরা যদি নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তবে কিশোর-কিশোরীরা সেটি দেখে শিখবে। চাপে থাকা অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা, আবেগকে গঠনমূলক উপায়ে প্রকাশ করা এবং চাপের মুহূর্তে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হয়—এসব অভ্যাস শিশুদের শেখানো উচিত।
৪. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করা
কিশোরদের সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তাদের ছোট ছোট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে শেখানো এবং জীবন দক্ষতা বৃদ্ধির উপায় শেখালে তারা ভবিষ্যতে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে।
৫. প্রয়োজন হলে থেরাপির সহায়তা নেওয়া
যদি কিশোররা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপে ভুগতে থাকে, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মুড সুইং-এর শিকার হয়, তবে কাউন্সেলিং বা থেরাপির মাধ্যমে তাদের সাহায্য করা যেতে পারে। পেশাদার সাহায্য নিয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণের সঠিক কৌশল শেখানো হলে তারা ভবিষ্যতে মানসিকভাবে আরও দৃঢ় হয়ে উঠতে পারবে।
সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা
সন্তানের জন্য সহানুভূতিশীল ও ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। এতে তারা নিজেদের আবেগ বুঝতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে তাদের সম্পর্কের উন্নতি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আবেগগত স্থিতিশীলতা তৈরি হবে।
অভিভাবকদের উচিত, কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তাদের মানসিক শক্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করা, যাতে তারা ভবিষ্যতে আরও আত্মবিশ্বাসী ও স্থিতিশীল ব্যক্তি হয়ে গড়ে উঠতে পারে।
রিফাত