
ছবি: সংগৃহীত।
অনেক সময় আমরা আবেগগত পরিপক্বতাকে খুব সহজেই বিচার করি—যদি কেউ অপ্রয়োজনীয় রাগ দেখায় বা অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়, তবে ধরে নেওয়া হয় যে তিনি আবেগগতভাবে অপরিপক্ব। কিন্তু বিষয়টি এতটা সরল নয়। আবেগগত পরিপক্বতা একটি জটিল বিষয়, এবং এর অভাব বোঝার জন্য গভীর দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। কিছু লক্ষণ খুব সহজে বোঝা যায় না, তবে সঠিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সেগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব। এখানে তুলে ধরা হলো নারীদের আবেগগত অপরিপক্বতার এমন আটটি লক্ষণ, যা সাধারণত আমাদের নজর এড়িয়ে যায়।
১) দায়িত্ব গ্রহণে অনীহা
আপনি যদি কারো সঙ্গে যুক্তিপূর্ণ আলোচনা করতে চান, কিন্তু তিনি দোষারোপের খেলায় মেতে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে তিনি আবেগগতভাবে অপরিপক্ব। সবকিছুই তার দৃষ্টিতে অন্যের দোষ, নিজের নয়। পরিপক্ব ব্যক্তিরা নিজেদের ভুল স্বীকার করতে জানেন, কিন্তু যদি কেউ সবসময় নিজেকে নির্দোষ হিসেবে তুলে ধরেন, তাহলে তা আবেগগত অপরিপক্বতার স্পষ্ট লক্ষণ।
২) সমালোচনা সহ্য করতে না পারা
অনেক সময় আমরা এমন কিছু মানুষ দেখি, যারা সামান্য সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। তাদের কাছে সমালোচনা মানেই ব্যক্তিগত আক্রমণ। অথচ পরিপক্ব মানুষরা গঠনমূলক সমালোচনাকে শেখার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু যদি কেউ সামান্য মন্তব্যেও রেগে যান বা প্রসঙ্গ পরিবর্তন করেন, তবে এটি আবেগগত অপরিপক্বতার লক্ষণ।
৩) সহমর্মিতার অভাব
সহমর্মিতা হলো অন্যের অনুভূতি বোঝার এবং তা ভাগ করে নেওয়ার ক্ষমতা। এটি আবেগগত পরিপক্বতার অন্যতম মূল স্তম্ভ। কেউ যদি অন্যের অবস্থান বুঝতে না পারেন বা তাদের অনুভূতির প্রতি উদাসীন থাকেন, তবে এটি স্পষ্ট যে তার আবেগগত বিকাশ যথাযথভাবে হয়নি।
৪) আবেগের অস্থিরতা
এক মুহূর্তে হাসি, পরের মুহূর্তে কান্না—এমন আচরণ প্রায়ই আবেগগত অপরিপক্বতার ইঙ্গিত দেয়। আবেগগতভাবে পরিপক্ব মানুষরা তাদের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সংযত প্রতিক্রিয়া দেখান। কিন্তু যদি কারও আবেগ অনিয়ন্ত্রিত হয়, তবে এটি অপরিপক্বতার লক্ষণ।
৫) সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করা
সাধারণ কিছু সিদ্ধান্ত নিতেও যদি কেউ বারবার দোটানায় ভোগেন, তবে তা আবেগগত অপরিপক্বতার ইঙ্গিত হতে পারে। পরিপক্ব ব্যক্তিরা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজের ওপর আস্থা রাখেন। কিন্তু যদি কেউ সবসময় অন্যের ওপর নির্ভর করেন বা সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম হন, তবে এটি তার আবেগগত অপরিপক্বতার লক্ষণ।
৬) অতিরিক্ত একমত হওয়া
সব বিষয়ে সবার সঙ্গে একমত হওয়া ভালো মনে হতে পারে, কিন্তু এটি প্রায়ই নিজের মতামত প্রকাশে অক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। আবেগগতভাবে পরিপক্ব মানুষরা তাদের নিজস্ব মতামত প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করেন না। কিন্তু যদি কেউ সবসময় অন্যের মতের সঙ্গে একমত হন শুধুমাত্র বিরোধ এড়ানোর জন্য, তবে এটি অপরিপক্বতার লক্ষণ।
৭) নিজেকে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ভাবা
নিজেকে ভালোবাসা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সবকিছু নিজের কেন্দ্র করে ঘোরানো পরিপক্বতার লক্ষণ নয়। যদি কেউ সবসময় নিজের গল্প, নিজের সমস্যা বা নিজের অভিজ্ঞতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেন এবং অন্যদের কথা শোনার আগ্রহ না দেখান, তবে এটি আবেগগত অপরিপক্বতার ইঙ্গিত হতে পারে।
৮) চাপ সামলাতে অক্ষমতা
জীবনে চাপ আসবেই, কিন্তু কেউ যদি সামান্য চাপে ভেঙে পড়েন, তবে এটি আবেগগত অপরিপক্বতার লক্ষণ। পরিপক্ব ব্যক্তি জীবনযাত্রার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। কিন্তু কেউ যদি সামান্য প্রতিকূলতাতেই হতাশ হয়ে পড়েন, তবে এটি অপরিপক্বতার লক্ষণ।
আবেগগত পরিপক্বতা হলো উন্নতির একটি ধারা, যা সময় ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিকশিত হয়। প্রত্যেকের জীবনে কিছু না কিছু অপরিপক্বতা থাকতে পারে, কিন্তু তা কাটিয়ে ওঠার জন্য সচেতন হওয়া জরুরি। মনোবিজ্ঞানী কার্ল রজার্স বলেছেন, “একটি ভালো জীবন হলো একটি প্রক্রিয়া, কোনো স্থির অবস্থা নয়। এটি একটি দিকনির্দেশনা, কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্য নয়।” তাই যদি এই লক্ষণগুলোর কোনোটি নিজের বা অন্যের মধ্যে দেখতে পান, তাহলে সেটিকে উন্নতির সুযোগ হিসেবে নিন এবং আবেগগতভাবে আরও পরিপক্ব হওয়ার চেষ্টা করুন।
সূত্র: https://dmnews.com/dan-non-obvious-signs-a-woman-has-a-low-level-of-emotional-maturity/
সায়মা ইসলাম