
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে তরুণদের মধ্যে এক অস্বাভাবিক সুখ সংকট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নতি, যোগাযোগের বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যুগে থেকেও কেন তরুণরা হতাশ? এক নতুন গবেষণায় এই অবাক করা প্রবণতার কারণ প্রকাশ পেয়েছে, যা আমাদের সুখ সম্পর্কে ধারণাকে নতুনভাবে প্রভাবিত করছে।
এই গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক রিসার্চ থেকে, যেখানে গবেষকরা ১১টি গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষকরা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মত ছয়টি দেশের তথ্য পরীক্ষা করেছেন। এই গবেষণার ফলাফল পূর্ববর্তী ধারণাগুলোর বিরুদ্ধে গিয়ে জানিয়েছে, সুখের গতিপথ এখন আগের মতো নয়।
সুখের উ-আকৃতির পরিবর্তন
দীর্ঘকাল ধরে মনোবিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে, সুখ একটি পূর্বনির্ধারিত উ-আকৃতির পথে চলে—তরুণ বয়সে সুখের অনুভূতি থাকে, মধ্যবয়সে এটি কমে যায় এবং পরবর্তীতে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে এটি আবার বাড়তে থাকে। তবে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধারা এখন বদলে গেছে। বর্তমানে, তরুণরা সবচেয়ে কম সুখী, আর প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি সুখী।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও তরুণদের হতাশা
এটি একেবারে নিঃসঙ্গ ঘটনা নয়—তরুণদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য দেশে তরুণদের মধ্যে উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষত, অস্ট্রেলিয়াতে ১৬-২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে মানসিক রোগের হার ২০০৭ সালে ৩০% থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৪৬% হয়েছে।
তরুণদের সুখ কমানোর একাধিক কারণ রয়েছে-
সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব: ২০১২-২০১৩ সালের পর, যখন স্মার্টফোন এবং সামাজিক মাধ্যম জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে, তখন থেকেই তরুণদের মধ্যে সুখ কমতে শুরু করে। গবেষণা সাজেস্ট করে যে, অতিরিক্ত স্ক্রীন টাইম এবং মুখোমুখি সম্পর্কের অভাব মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা: বাড়ির দাম, ছাত্রঋণ এবং চাকরির বাজারের অনিশ্চয়তা তরুণদের আর্থিক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলেছে, যা তাদের সুখ কমাতে সাহায্য করছে।
বিশ্বব্যাপী আঘাত: অর্থনৈতিক মন্দা, কোভিড-১৯ মহামারী এবং মূল্যস্ফীতি তরুণদের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। প্রবীণরা ইতিমধ্যে সামাজিক এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে, তবে তরুণরা একটি অনিশ্চিত পৃথিবীতে পথচলা করছে।
সম্প্রদায়িক সংযোগের অভাব: পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় তরুণরা কম ধর্মীয়, সামাজিক বা স্থানীয় সম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে, যা তাদের জীবনে সম্পর্ক এবং সমর্থনের অভাব তৈরি করছে।
এই প্রবণতা কি ফেরানো সম্ভব?
তবে, গবেষণার ফলাফল সতর্কবার্তা দেওয়ার পাশাপাশি সমাধানও পরামর্শ দেয়:
স্বাস্থ্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার: সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারে মনোযোগ দেওয়া এবং সরাসরি সাক্ষাৎকার বৃদ্ধি করতে পারে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে।
মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রসার: তরুণদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিনিয়োগ করা জরুরি, যাতে তারা সঠিক সময় এবং সহায়তা পেতে পারে।
আর্থিক সমতা নিশ্চিত করা: তরুণদের জন্য সস্তা বাসস্থান এবং ছাত্রঋণ মওকুফের মতো নীতিমালা আর্থিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অর্থপূর্ণ সংযোগের সুযোগ সৃষ্টি করা: তরুণদের জন্য নতুন সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করে তাদের মাঝে সম্পর্ক এবং উদ্দেশ্যের অনুভূতি ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।
সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা
এই গবেষণাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত প্রদান করে। তরুণদের সুখের সংকট একটি বড় পরিবর্তনকে নির্দেশ করছে, যা আগের প্রজন্মের অভিজ্ঞতা থেকে ভিন্ন। যদি আমরা আগামী প্রজন্মকে সুখী এবং সন্তুষ্ট করতে চাই, তবে আমাদের এখনই এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রশ্ন হলো—আমরা কি পদক্ষেপ নেব?
শিহাব