
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে ছোটখাটো মনখারাপকেও অনেকে ডিপ্রেশন বলে অভিহিত করেন। তবে, প্রকৃতপক্ষে ডিপ্রেশন একটি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সংবেদনশীলভাবে মোকাবিলা করা জরুরি। ডিপ্রেশন বিভিন্ন রকমের হতে পারে, এবং "ডাবল ডিপ্রেশন" বা দ্বিগুণ বিষণ্ণতা তেমনই একটি অবস্থা।
ডাবল ডিপ্রেশন কী?
"ডাবল ডিপ্রেশন" হলো পারসিস্টেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার (PDD) এবং মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার (MDD)-এর সমন্বিত একটি মানসিক অবস্থা। এটি এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে দীর্ঘমেয়াদি কম মাত্রার বিষণ্ণতার (PDD) উপর হঠাৎ করে তীব্র বিষণ্ণতা (MDD) যোগ হয়। সুতরাং, একজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বিষণ্ণতায় ভুগলেও, কিছু সময়ের জন্য তার অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।
বিষণ্ণতার বিভিন্ন ধরন
DSM-5 অনুযায়ী, ডিপ্রেশনের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:
মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার (MDD): দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে স্থায়ীভাবে দুঃখ, হতাশা এবং আগ্রহ হারানোর অনুভূতি।
পারসিস্টেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার (PDD): দীর্ঘমেয়াদি কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম তীব্র বিষণ্ণতা, যা অন্তত দুই বছর স্থায়ী হতে পারে।
ডিসরাপটিভ মুড ডিজরেগুলেশন ডিসঅর্ডার (DMDD): সাধারণত শিশু-কিশোরদের মধ্যে দেখা যায়, যেখানে অতিরিক্ত রাগ এবং মেজাজ হারানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
প্রি-মেনস্ট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার (PMDD): মাসিকের আগের সপ্তাহে তীব্র মনোবৈকল্য, যা মাসিক শুরু হলে কমে যায়।
দ্বিগুণ বিষণ্ণতার চিকিৎসা
ডাবল ডিপ্রেশনের চিকিৎসা অন্যান্য বিষণ্ণতা রোগের চিকিৎসার সঙ্গে মিল রাখলেও কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে। সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করা হয়:
মনোচিকিৎসা (Psychotherapy): কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT), ইন্টারপার্সোনাল থেরাপি (IPT) এবং ডায়ালেকটিক্যাল বিহেভিয়ার থেরাপি (DBT) কার্যকর হতে পারে।
ওষুধ: SSRI এবং SNRI জাতীয় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ ব্যবহৃত হয়। ডাবল ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে একাধিক ওষুধের সংমিশ্রণ প্রয়োজন হতে পারে।
জীবনধারা পরিবর্তন: নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট বিষণ্ণতা মোকাবিলায় সহায়ক।
ব্রেইন স্টিমুলেশন থেরাপি: ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ECT), ট্রান্সক্রানিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন (TMS) ইত্যাদি গুরুতর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।
ঔষধ সামঞ্জস্যকরণ: কোনো ওষুধ বা স্বাস্থ্যগত কারণে বিষণ্ণতা দেখা দিলে, মূল সমস্যার চিকিৎসা করা হয়।
ডাবল ডিপ্রেশন মানসিক স্বাস্থ্যের একটি জটিল অবস্থা, যা চিকিৎসা ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় থেরাপি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রিফাত