ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

নতুন শহর, নতুন জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন কীভাবে নেবেন?

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২৪ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০৪:১০, ২৪ মার্চ ২০২৫

নতুন শহর, নতুন জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন কীভাবে নেবেন?

ছবি: সংগৃহীত

নতুন জায়গায় স্থানান্তরিত হওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। পুরনো বন্ধু, পরিচিত পরিবেশ এবং অভ্যাসগুলো ছেড়ে আসতে হয়, যা মানসিক চাপে পরিণত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে কিছুটা সময় লাগে এবং এ সময় একাকীত্ব বা বাড়ির জন্য মন কেমন করার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। তবে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করলে এই নতুন পরিবর্তনকে সহজ করা সম্ভব।

স্থানান্তরের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

নানাবিধ গবেষণা দেখিয়েছে যে, নতুন জায়গায় যাওয়ার ফলে "কালচারাল শক" বা সাংস্কৃতিক ধাক্কা অনুভূত হয়। এতে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং হতাশা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে যদি নতুন পরিবেশ আগের বাসস্থান থেকে একেবারেই আলাদা হয়।

নানাবতী ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মনোবিজ্ঞান ও মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডঃ অজিত দণ্ডেকর HT Lifestyle-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "স্থানান্তরের ফলে অনেকেই 'ট্রানজিশন স্ট্রেস'-এর শিকার হন। এটি তখনই ঘটে যখন নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সময় লাগে এবং পুরনো সামাজিক নেটওয়ার্কের অভাব অনুভূত হয়।"

একাকীত্ব ও বাড়ির জন্য মন খারাপ থেকে মুক্তির উপায়

নতুন জায়গায় যাওয়ার পরপরই একাকীত্ব এবং বাড়ির জন্য মন খারাপ লাগা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে।

ডঃ দণ্ডেকর পরামর্শ দিয়েছেন, "সমাজে মিশে যাওয়া এবং নতুন বন্ধু তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় সামাজিক গোষ্ঠীতে যোগ দিন, আপনার দেশের বা ভাষার মানুষের সাথে যোগাযোগ করুন, যা আপনাকে মানসিকভাবে ভরসা দেবে। পাশাপাশি, নতুন পরিবেশের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। এতে ভুল বোঝাবুঝি কমে যাবে এবং বিচ্ছিন্নতা অনুভব হবে না।"

নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কতদিন লাগে?

স্থানান্তরের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় একেকজনের জন্য একেক রকম হতে পারে।

ডঃ দণ্ডেকর ব্যাখ্যা করে বলেন, "সাধারণত প্রাথমিক মানিয়ে নেওয়ার জন্য কয়েক মাস সময় লাগে। তবে পুরোপুরি অভ্যস্ত হতে, স্থানীয় সংস্কৃতি, বন্ধু ও মানসিক স্থিতিশীলতা অর্জন করতে এক বছর বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে ব্যক্তির মানসিক প্রস্তুতি এবং নতুন পরিবেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক পার্থক্যের ওপর।"

শিশুদের জন্য স্থানান্তর বেশি চ্যালেঞ্জিং

প্রাপ্তবয়স্করা সাধারণত যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনার মাধ্যমে স্থানান্তরকে মেনে নেন, তবে শিশুদের জন্য এটি বেশ কঠিন হতে পারে। তারা বন্ধু, পরিচিত স্কুল এবং আগের রুটিন হারানোর কষ্টে ভুগতে পারে।

ডঃ দণ্ডেকর পরামর্শ দিয়েছেন, "অভিভাবকদের উচিত শিশুদের উদ্বেগকে গুরুত্বসহকারে নেওয়া। পরিবারের পরিচিত রুটিন বজায় রাখা, যেমন খাবারের সময় বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখা, শিশুদের জন্য সহায়ক হতে পারে। এছাড়া, তাদের স্থানীয় স্কুল বা কমিউনিটির কার্যকলাপে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা দরকার, যাতে তারা নতুন বন্ধু তৈরি করতে পারে এবং ধীরে ধীরে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে।"

স্থানান্তর শুরুতে কঠিন মনে হলেও, ধাপে ধাপে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব। নতুন জায়গার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুললে এবং সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি করলে এটি সহজ হয়ে ওঠে। তাই ধৈর্য ধরুন, নতুন অভিজ্ঞতাকে স্বাগত জানান, এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আপনার নিজের জায়গা হয়ে উঠবে।

সূত্র : https://www.hindustantimes.com/lifestyle/health/are-you-moving-to-a-new-place-soon-expert-shares-how-it-affects-mental-health-tips-to-ease-the-transition-101742730319720.html

রিফাত

×