
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির অগ্রগতি, ডিজিটাল সংযোগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সত্ত্বেও তরুণদের মধ্যে সুখের অনুভূতি কমছে। অন্যদিকে, তাদের অভিভাবক ও দাদা-দাদিরা আগের তুলনায় বেশি সুখী থাকছেন।
একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা
ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই উদ্বেগজনক চিত্র। গবেষক জিন টোয়েঞ্জ ও ডেভিড ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ার ছয়টি দেশের (অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র) ওপর চালানো ১১টি সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, আগে মনে করা হতো সুখ একটি ‘ইউ-আকৃতির’ বক্ররেখা অনুসরণ করে। তরুণ বয়সে সুখ বেশি থাকে, মধ্য বয়সে কিছুটা কমে যায় এবং বার্ধক্যে আবার বাড়ে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই চিত্র বদলে গেছে। এখন তরুণরাই সবচেয়ে কম সুখী, আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুখের মাত্রা বাড়ছে।
তরুণদের মধ্যে কেন বাড়ছে হতাশা?
এই প্রবণতা নতুন নয়। গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০১৬ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে তরুণদের জীবন-সন্তুষ্টির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন—
১. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব
২০১২-১৩ সালের পর স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এতে মানুষের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ কমে যায়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২. আর্থিক অনিশ্চয়তা
বাড়তি শিক্ষা ঋণ, কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা ও বাড়ির উচ্চমূল্যের কারণে তরুণরা আর্থিক চাপে থাকছেন।
৩. বৈশ্বিক অস্থিরতা
মহামারির ধাক্কা, মুদ্রাস্ফীতি, এবং অর্থনৈতিক মন্দার মতো ঘটনা তরুণদের জীবনকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।
৪. সামাজিক সংযোগের অভাব
আগের তুলনায় তরুণরা ধর্মীয় বা সামাজিক কর্মকাণ্ডে কম অংশ নিচ্ছেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে।
সমাধান কী?
বিশেষজ্ঞরা তরুণদের সুখ ফিরিয়ে আনতে কিছু উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন—
*সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সচেতনতা: ডিজিটাল ডিটক্স ও সরাসরি যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
*মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রসার: তরুণদের জন্য সহজলভ্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ব্যবস্থা চালু করা জরুরি।
*আর্থিক সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ: সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, শিক্ষা ঋণ মওকুফের মতো নীতিগুলো তরুণদের জীবনমান উন্নত করতে পারে।
*সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি: তরুণদের স্বেচ্ছাসেবা, ক্লাব বা কমিউনিটি গ্রুপে যুক্ত হতে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
তরুণদের মধ্যে বাড়তে থাকা মানসিক সংকট কেবল একটি সাময়িক সমস্যা নয়, এটি একটি গভীর সামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাই অভিভাবক, শিক্ষাবিদ ও নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুখী ও পরিপূর্ণ জীবন দিতে হলে এখনই তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।
রিফাত