
ছবিঃ সংগৃহীত
অনেক প্রাপ্তবয়স্কই অবাক হন—ছোটবেলায় বন্ধুত্ব গড়ে তোলা যত সহজ ছিল, এখন কেন ততটাই কঠিন? সময়ের সঙ্গে বন্ধুর সংখ্যা কমে যেতে পারে, যা আমাদের মানসিক ও সামাজিক সুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলে।
যদি আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু না থাকে, তাহলে কিছু অভ্যাস থাকতে পারে যা সম্পর্ক গড়ে তোলার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। এগুলো নেতিবাচক হিসেবে নয়, বরং আত্মবিশ্লেষণ ও উন্নতির সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত। নিচে এমন চারটি অভ্যাস তুলে ধরা হলো, যা আপনার বন্ধুত্বহীনতার পেছনে কারণ হতে পারে।
১. আপনি অনুমান করে সিদ্ধান্ত নেন
অনুমান করা মানুষের অন্যতম বড় একটি ভুল, যা সম্পর্ক থেকে শুরু করে পেশাগত জীবন পর্যন্ত নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। সীমিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সময় বড় বিপদের কারণ হয়।
অনেক ক্ষেত্রে, আমরা সত্যতা যাচাই না করেই কিছু ধরে নিই। ফলে ভুল বোঝাবুঝি থেকে সম্পর্ক নষ্ট হয়, চাকরি হারানোর মতো ঘটনাও ঘটে। এটি এমন একটি ঝুঁকি, যা না নিলেই ভালো। সবসময় তথ্য যাচাই করুন এবং নিশ্চিত হোন। এই ছোট্ট পরিবর্তন আপনার জীবনে অপ্রয়োজনীয় সমস্যা কমাবে এবং সম্পর্ক তৈরিতে সহায়ক হবে।
২. আপনি দ্বন্দ্ব এড়িয়ে যান
অনেকেই দ্বন্দ্ব বা মুখোমুখি আলোচনা এড়িয়ে যান, যা সম্পর্কের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সঠিক সময়ে কথা না বললে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ম্যাগি তার স্বামী মাইককে দোষারোপ করে, কারণ সে বারবার ভেজা তোয়ালে বিছানায় ফেলে রাখে। কিন্তু কখনোই তাদের মধ্যে এ নিয়ে একটি স্পষ্ট চুক্তি হয়নি। যদি তারা পূর্বেই একমত হতো, তাহলে সমস্যাটি সহজেই সমাধান করা যেত।
একটি ২০২৩ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, পরস্পরের মধ্যে স্পষ্ট চুক্তি না থাকলে ভুল বোঝাবুঝি, দ্বন্দ্ব এবং কম কর্মক্ষমতা তৈরি হতে পারে। তাই, সম্পর্ক ও পেশাগত জীবনে অপ্রয়োজনীয় ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে দ্বন্দ্ব এড়ানোর বদলে খোলাখুলি আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।
৩. আপনি সব সমস্যার জন্য অন্যদের দোষারোপ করেন
অনেক সময় আমরা নিজেদের সমস্যার জন্য অন্যদের দোষারোপ করি। এটি আমাদের সাময়িক স্বস্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করে। দোষারোপ করার ফলে আমরা নিজেরাই নিজেদের দুর্বল করে তুলি।
যখন আপনি দোষ দেন, তখন আসলে আপনি ইঙ্গিত দেন যে, আপনার জীবনের ওপর আপনার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এটি আপনাকে সমস্যার শিকার বানিয়ে ফেলে এবং আত্মোন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে।
পরিবর্তে, নিজের সিদ্ধান্তের দায়িত্ব নিন এবং ভুল থেকে শিক্ষা নিন। যখন আপনি পুরোপুরি নিজের জীবনের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, তখনই আপনি নিয়ন্ত্রণের আসনে ফিরতে পারবেন।
৪. আপনি অন্যদের স্বীকৃতির ওপর নির্ভর করেন
অনেকেই অন্যদের স্বীকৃতি পাওয়াকে সুখের মূল কারণ হিসেবে দেখে। ছোটবেলায় আমরা যখন প্রশংসা বা স্বীকৃতি পাই, তখন ভালো অনুভব করি। তবে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে এটি আমাদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
যদি আমরা সব সময় অন্যদের স্বীকৃতির ওপর নির্ভর করি, তাহলে নেতিবাচক মতামত আমাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দিতে পারে। এটি একধরনের মানসিক বাধা তৈরি করে, যা আমাদের স্বাধীনভাবে বাঁচতে বাধা দেয়।
একটি ২০২২ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত স্বীকৃতির উপর নির্ভরশীলতা আত্মসম্মান কমিয়ে দেয়, উদ্বেগ বাড়ায়, এবং ব্যক্তিগত উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। প্রশংসার আসক্তি তৈরি হলে, তা না পেলে হতাশা ও উদ্বেগ তৈরি হতে পারে।
উপসংহার
আপনার যদি ঘনিষ্ঠ বন্ধু না থাকে, তাহলে হয়তো আপনি উপরের অভ্যাসগুলোর মধ্যে এক বা একাধিকটি অনুসরণ করছেন। তবে এটি পরিবর্তন করা সম্ভব! অনুমান না করে তথ্য যাচাই করুন, দ্বন্দ্ব এড়িয়ে না গিয়ে খোলাখুলি কথা বলুন, দোষারোপের বদলে দায়িত্ব নিন, এবং অন্যদের স্বীকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আত্মবিশ্বাস তৈরি করুন।
এভাবেই আপনি শুধু বন্ধুত্বই গড়ে তুলতে পারবেন না, বরং জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবও গড়ে তুলতে পারবেন।
সূত্রঃ https://www.yourtango.com/self/ughly-habits-people-no-close-friends
ইমরান