
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান ব্যস্ত জীবনে আমরা নিজেদের সুস্থতার দিকে তেমন নজর দিই না। অস্বাস্থ্যকর খাবার, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও মানসিক চাপের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। অথচ কিছু সাধারণ ভুল এড়িয়ে চললে আমরা সহজেই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারি। আসুন জেনে নিই, কোন ভুলগুলো আমাদের হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং কীভাবে সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১. অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস
খাবারের সাথে আমাদের হৃদযন্ত্রের সুস্থতার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ধমনী সংকীর্ণ করে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে ট্রান্স ফ্যাট ও উচ্চমাত্রার চিনি সমৃদ্ধ খাবার হার্টের জন্য ক্ষতিকর। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ এবং কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন রাখতে হবে।
২. শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
ব্যস্ততার কারণে অনেকেই নিয়মিত ব্যায়াম করেন না। কিন্তু নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম হৃদরোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করেন, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম বা হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৩. অতিরিক্ত মানসিক চাপ
মানসিক চাপ আমাদের শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ বজায় থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাই নিয়মিত ধ্যান, মেডিটেশন বা পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
৪. পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
পর্যাপ্ত ঘুম না পেলে শরীরে রক্তচাপ বেড়ে যায়, যা হৃদযন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ঘুমের পরিমাণ প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার কম, তাদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
৫. ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন
ধূমপান ও অ্যালকোহল হৃদরোগের অন্যতম বড় কারণ। ধূমপানে উপস্থিত নিকোটিন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ ধমনীর সংকোচন ঘটিয়ে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে, যা হৃদযন্ত্রের উপর চাপ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় ও হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাই সুস্থ হৃদযন্ত্রের জন্য ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা জরুরি।
৬. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করা
অনেকেই উচ্চ রক্তচাপকে গুরুত্ব দেন না, কিন্তু এটি হৃদরোগের প্রধান কারণগুলোর একটি। উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘদিন অপ্রতিরোধিত থাকলে এটি ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা কমিয়ে দেয় এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা জরুরি।
হৃদরোগ প্রতিরোধে করণীয়
হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে কিছু সহজ পদক্ষেপ মেনে চলা উচিত— নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা
সুস্থ হৃদযন্ত্র সুস্থ জীবনের মূল চাবিকাঠি। তাই আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসের দিকে নজর দিয়ে ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন!
আসিফ