
ছবিঃ সংগৃহীত
আমার বাবা সবসময় বলতেন, “বাবা হওয়া শুধু সন্তানকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া নয়, বরং তাদের পাশে থাকাটাও জরুরি।”
এই চিন্তা আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করেছে এবং একজন ভালো বাবার গুণাবলি নিয়ে ভাবতে শেখায়।
পিতৃত্ব শুধুমাত্র শারীরিকভাবে সন্তানের জন্ম দেওয়ার বিষয় নয়। এটি সম্পর্ক, শিক্ষা, এবং এমন এক ভালোবাসার বিষয়, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু, আসলে একজন ভালো বাবা হওয়ার জন্য কী কী গুণ থাকা দরকার?
মনোবিজ্ঞানের আলোকে আমরা দেখতে পাই, একজন ভালো বাবা হওয়া শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন বা সবসময় সঠিক উত্তর জানার বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি কয়েকটি বিশেষ গুণের মাধ্যমে সন্তানের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা।
আপনি যদি মনে করেন, “আমি কীভাবে আরও ভালো বাবা হতে পারি?” অথবা “আমার ভবিষ্যত সন্তানদের জন্য একজন ভালো পিতার মধ্যে কী কী গুণ থাকা উচিত?” তাহলে আসুন, মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একজন ভালো বাবার ৭টি গুণ সম্পর্কে আলোচনা করি।
১) আবেগিকভাবে উপস্থিত থাকা
এটি হয়তো প্রথমে খুব সাধারণ মনে হতে পারে, কিন্তু অনেক সময় এটি অবহেলিত হয়। আবেগিকভাবে উপস্থিত থাকা মানে শুধু শারীরিকভাবে সন্তানের পাশে থাকা নয়, তাদের জীবনের অনুভূতি, চিন্তা এবং অভিব্যক্তি সম্পর্কে মনোযোগ দেওয়া।এটি তাদের অনুভূতিকে বুঝতে, সঠিকভাবে সমর্থন জানাতে এবং তাদের প্রয়োজনের সময় পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপার।
আপনার সন্তান যখন তার দিন বা কোনো ভয় নিয়ে কথা বলার জন্য আসে, সেটা শুধুমাত্র ফালতু আলাপ নয়, এটি সম্পর্কের এক গভীর জায়গা তৈরি করার সুযোগ।
যেসব বাবারা আবেগিকভাবে উপস্থিত থাকেন, তাদের সন্তানেরা পরবর্তীতে অনেক ভালো সামাজিক দক্ষতা অর্জন করে এবং সম্পর্কেও সুরক্ষা অনুভব করে।
২) ধারাবাহিকতা
একটি স্থিতিশীল পরিবেশ শিশুর আত্মবিশ্বাস এবং নিরাপত্তা গড়ে তোলে, আর এ জন্য ধারাবাহিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একটি নিয়মিত রুটিন শিশুকে সুরক্ষিত অনুভব করতে সাহায্য করে এবং জানিয়ে দেয় যে বাবা তাদের জন্য সর্বদা সেখানে আছেন।
যত ছোট বিষয়ই হোক, ধারাবাহিকতা তাদের জীবনে নিরাপত্তা এবং স্থিরতা নিয়ে আসে।
৩) ধৈর্য
পিতৃত্ব কখনোই সহজ নয়, এবং বাবা হিসেবে অনেক সময় আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা হয়। কিন্তু ধৈর্য শিশুরা শেখায় কিভাবে পরিস্থিতি শান্তভাবে মোকাবিলা করতে হয়।
একটি শিশুর সমস্যা বা খারাপ আচরণ যদি আপনাকে চাপের মধ্যে ফেলে, ধৈর্য আপনাকে শান্ত থাকতে সাহায্য করবে এবং সন্তানকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম করবে।
ধৈর্যশীল বাবা-মায়ের সন্তানরা সাধারণত নিজেদের আবেগকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং তারা আরও সামাজিক এবং সমঝোতাপূর্ণ হয়।
৪) সন্তানের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা
একজন বাবা হিসেবে, আপনি চান আপনার সন্তান সঠিক পথে চলুক এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। তবে এটি কখনোই নিয়ন্ত্রণ করার বিষয় হওয়া উচিত নয়।
শিশুর স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা মানে তাদের স্বাধীন চিন্তা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারকে সম্মান করা। তাদের আগ্রহ, পছন্দ এবং ভালোবাসার পথ অনুসন্ধানে সহায়তা করা।
যখন আপনি তাদের স্বাধীনতা সম্মান করেন, তখন এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং তারা আরও ভালোভাবে নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে শেখে।
৫) ইতিবাচক ভূমিকার রোল মডেল হওয়া
বাবা হওয়া মানে শুধু একজন অভিভাবক হওয়া নয়, আপনি একটি রোল মডেলও।
আপনার আচরণ, আবেগ প্রকাশ এবং অন্যদের সঙ্গে আপনার আচরণে সন্তানের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ তৈরি হয়।
বাচ্চারা তাদের বাবা-মায়ের আচরণ অনুসরণ করে, এবং এই আচরণ তাদের জীবনেও প্রভাব ফেলে।
আপনি যদি সদয়, ধৈর্যশীল, এবং অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন, তাহলে আপনার সন্তানও এমন গুণাবলি শেখে।
৬) বোঝাপড়া ও সহানুভূতি
পিতৃত্বে কোনো কিছুই নিখুঁত নয়। আমাদের সন্তানেরাও ভুল করবে, খারাপ দিন কাটাবে বা কখনো কখনো বিরক্তিকর আচরণ করবে।
এটাই হলো বোঝাপড়ার সময়। এটি মানে, তাদের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং জানিয়ে দেওয়া যে খারাপ দিন কাটানো স্বাভাবিক।
শিশুরা যখন জানে যে তাদের বাবা-মা তাদের অনুভূতিগুলো বুঝতে পারছে, তখন তারা আরও খোলামেলা ভাবে তাদের দুঃখ-কষ্ট শেয়ার করতে পারে।
৭) শর্তহীন ভালোবাসা
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, একজন ভালো বাবা হওয়ার মূল হলো শর্তহীন ভালোবাসা।
শর্তহীন ভালোবাসা মানে আপনার সন্তানকে তার সব ভালো এবং খারাপ দিকের জন্য ভালোবাসা, তাকে যেমন সে, তেমনই গ্রহণ করা।
এটি সেই ভালোবাসা, যা বলে, “তুমি যেমন আছো, তেমনই আমার কাছে তুমি সেরা, আমি তোমার পাশে আছি।”
এটি আপনার সন্তানের আত্মবিশ্বাস এবং নিরাপত্তা তৈরি করে, যা তাকে জীবনে দৃঢ় হয়ে দাঁড়াতে সহায়তা করে।
এই ৭টি গুণের মাধ্যমে একজন বাবা তার সন্তানকে সহায়তা করতে পারে এবং তার জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারে।
তথ্যসূত্রঃ https://geediting.com/mal-qualities-of-a-truly-good-father-according-to-psychology/
মারিয়া