ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

সফল ও সুখী সন্তান গড়ে তুলতে যে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসগুলো অভিভাবকরা অনুসরণ করেন

প্রকাশিত: ২২:০৩, ২৩ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২২:০৩, ২৩ মার্চ ২০২৫

সফল ও সুখী সন্তান গড়ে তুলতে যে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসগুলো অভিভাবকরা অনুসরণ করেন

ছবিঃ সংগৃহীত

সন্তান প্রতিপালন সহজ কাজ নয়। তাদের সফল ও সুখী করে গড়ে তুলতে শুধু কথা বলাই যথেষ্ট নয়, বরং আপনার আচরণই মূল ভূমিকা পালন করে।

মনোবিজ্ঞান বলছে, কিছু নির্দিষ্ট আচরণ অনুসরণ করলেই সন্তানদের আত্মবিশ্বাসী, সুখী ও সফল করে গড়ে তোলা সম্ভব। আর মজার ব্যাপার হলো, এই অভিভাবকরা নিখুঁত নন, তবে তারা কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস নিয়মিত চর্চা করেন।

এই প্রতিবেদনে, আমরা মনোবিজ্ঞানের আলোকে এমন ৮টি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস আলোচনা করব, যা আপনার সন্তানকে সফল ও সুখী জীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনি যদি একজন অভিভাবক বা ভবিষ্যতে তা হতে চান, তবে এই তথ্যগুলো আপনার জন্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

১) তারা সক্রিয়ভাবে সন্তানদের কথা শোনেন

শুধু উপদেশ দেওয়া বা নির্দেশনা দেওয়াই অভিভাবকের কাজ নয়; সন্তানের কথা শোনাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

মনোবিজ্ঞান বলছে, সক্রিয়ভাবে শোনা (Active Listening) সম্পর্ক দৃঢ় করতে সহায়ক। আর এটি সন্তানদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।

সন্তানের কথা শোনা মানে শুধু তাদের কথা শোনা নয়, বরং গভীর মনোযোগ দিয়ে তাদের অনুভূতি বুঝতে চাওয়া, প্রশ্ন করা এবং প্রকৃত আগ্রহ দেখানো। এতে তারা অনুভব করে যে তাদের কথা গুরুত্বপূর্ণ, যা আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানবোধ গঠনে সাহায্য করে।

তাই, যখনই আপনার সন্তান কিছু বলার জন্য আসবে, তখন মনোযোগ দিয়ে শুনুন। শুধু তাদের বলা শব্দ নয়, বরং তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও বোঝার চেষ্টা করুন।

২) তারা সন্তানদের স্বাধীনতা গড়ে তুলতে উৎসাহিত করেন

অনেক সময় অভিভাবকদের জন্য সন্তানকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া কঠিন হয়ে যায়, বিশেষ করে যখন তারা তা নিজে দ্রুত ও ভালোভাবে করতে পারেন। তবে, শিশুদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে স্বাধীনতা দেওয়া অপরিহার্য।

ধরুন, আপনার সন্তান স্কুলের জন্য নিজে নিজে পোশাক পরতে চায়। হয়তো তার পোশাকের রঙের মিল ঠিক থাকছে না, তবে তাকে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে দিন। এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা গড়ে উঠবে।

স্বাধীনতা দেওয়া মানে তাদের একা ছেড়ে দেওয়া নয়, বরং তাদের পাশে থেকে সমর্থন ও দিকনির্দেশনা দেওয়া। এটি তাদের সফল ও সুখী জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৩) তারা প্রতিকূলতায় ধৈর্য ও স্থিতিস্থাপকতা দেখান

জীবনের নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে কীভাবে সামলাতে হয়, তা শিশুরা তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকেই শেখে।

যদি আপনি হতাশায় চিৎকার করেন, দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন, তাহলে আপনার সন্তানও একই রকম আচরণ শিখবে। কিন্তু আপনি যদি ধৈর্য ধরে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন, তাহলে সেও তা অনুসরণ করবে।

তাই, যখনই আপনি কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, সেটাকে শেখানোর সুযোগ হিসেবে নিন। আপনার প্রতিক্রিয়াই সন্তানের মানসিকতা গঠনে বড় ভূমিকা রাখবে।

৪) তারা স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করেন

সীমারেখা বা নিয়ম-কানুন না থাকলে শিশুরা বিভ্রান্ত হতে পারে। সঠিক দিকনির্দেশনা ও শৃঙ্খলা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে, শুধু নিয়ম চাপিয়ে দিলেই হবে না। কেন এই নিয়ম দরকার, সেটাও ব্যাখ্যা করা জরুরি। এতে শিশু নিয়ম মেনে চলার যৌক্তিকতা বুঝতে পারে এবং নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়।

সীমারেখা হতে হবে ন্যায়সঙ্গত, বয়স উপযোগী এবং অবশ্যই ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। সন্তান যদি নিয়ম ভাঙতে চায়, তখন দৃঢ় থাকুন। এতে সে নিয়মানুবর্তিতা ও দায়িত্ববোধ শিখবে, যা জীবনে সফল হতে সাহায্য করবে।

৫) তারা নিঃশর্ত ভালোবাসা দেখান

সন্তানের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা দেখানো তাদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানবোধ গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

নিঃশর্ত ভালোবাসার মানে হলো, আপনি শুধুমাত্র তাদের সাফল্য বা আচরণের উপর নির্ভর করে ভালোবাসেন না। আপনি তাদের স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্বকে গ্রহণ করেন এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে তাদের পাশে থাকেন।

তাই, আপনার সন্তানকে নিয়মিত বলুন যে আপনি তাকে ভালোবাসেন। এবং শুধু মুখের কথায় নয়, কাজের মাধ্যমেও তা প্রমাণ করুন।

৬) তারা বৃদ্ধির মানসিকতা (Growth Mindset) গড়ে তোলেন

একবার ভাবুন, আপনার সন্তান যদি একটি পরীক্ষায় খারাপ ফল করে এবং বলে, "আমি তো মেধাবী নই," তখন আপনি কী করবেন?

এই ধরনের হতাশাজনক মনোভাব দূর করতে "Growth Mindset" গড়ে তোলা জরুরি। এটি হলো বিশ্বাস যে কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলনের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করা যায়।

আপনার সন্তানকে বলুন, বিখ্যাত অনেক সফল ব্যক্তি প্রথমে ব্যর্থ হয়েছেন, কিন্তু তারা হাল ছাড়েননি। তারা অধ্যবসায় ও চেষ্টার মাধ্যমে সফল হয়েছেন।

এই মানসিকতা তাদের জীবনে অধ্যবসায়, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং শেখার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

৭) তারা নিজেদের যত্ন নিতে ভুলে যান না

প্রায়ই অভিভাবকরা নিজেদের চেয়ে সন্তানদের চাহিদাকেই অগ্রাধিকার দেন। কিন্তু নিজের যত্ন নেওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

যদি আপনি নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর না দেন, সবসময় মানসিক চাপে থাকেন, তাহলে এটি আপনার সন্তানের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তাই, কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন। শরীরচর্চা করুন, পর্যাপ্ত ঘুমান, বা এমন কিছু করুন যা আপনাকে মানসিকভাবে প্রশান্তি দেয়। এতে আপনি ভালো অভিভাবক হতে পারবেন এবং সন্তানের কাছেও সুস্থ জীবনধারার গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছাবে।

৮) তারা ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখেন

জীবনে কঠিন সময় আসবেই। কিন্তু আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান, তা আপনার সন্তানের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।

যদি আপনি প্রতিটি সমস্যার মধ্যে ইতিবাচক কিছু খুঁজে বের করেন, তাহলে আপনার সন্তানও সেই অভ্যাস গড়ে তুলবে। ইতিবাচক মানসিকতা হতাশাকে দূর করে, নতুন সম্ভাবনার পথ খুলে দেয় এবং জীবনকে সহজ করে তোলে।

সন্তানকে শেখান যে ব্যর্থতা মানেই শেষ নয়, বরং এটি শেখার সুযোগ। এতে তারা আত্মবিশ্বাসী ও সুখী জীবন যাপন করতে পারবে।

শেষ কথা: এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া

সফল ও সুখী সন্তান গড়ে তোলা কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম বা চেকলিস্ট মেনে করার বিষয় নয়। প্রতিটি শিশু ভিন্ন, প্রতিটি পরিবার ভিন্ন।

এই অভ্যাসগুলো আমাদের সন্তানদের জীবন গঠনে সহায়ক হতে পারে, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ধৈর্য, ভালোবাসা এবং ধারাবাহিকতা। আপনার অভিভাবকত্বের যাত্রা অনন্য। একে উপভোগ করুন, শিখুন, বড় হয়ে উঠুন – এবং মনে রাখুন, আপনি শুধু সন্তানকে গড়ে তুলছেন না, বরং তাদের সঙ্গে নিজেও বেড়ে উঠছেন।

সূত্রঃ https://dmnews.com/gb-8-behaviors-of-parents-who-set-their-kids-up-for-success-and-happiness-according-to-psychology/

ইমরান

×