ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

তবে সতর্কতা জরুরি

আইস বাথ: তারুণ্য ও সুস্বাস্থ্যের গোপন রহস্য!

প্রকাশিত: ১৪:৫৩, ২৩ মার্চ ২০২৫

আইস বাথ: তারুণ্য ও সুস্বাস্থ্যের গোপন রহস্য!

ছবি: সংগৃহীত

আইস বাথ বা ঠান্ডা পানিতে গোসল একটি জনপ্রিয় পুনরুদ্ধার পদ্ধতি, যা পেশির ব্যথা কমাতে ও দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। ক্রীড়াবিদদের মধ্যে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়, পাশাপাশি এটি ত্বকের সৌন্দর্য ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী বলে দাবি করা হয়। তবে এটি কি সবার জন্য নিরাপদ? বিশেষজ্ঞদের মতামত ও গবেষণার ভিত্তিতে আমরা আইস বাথের সুবিধা, ক্ষতি ও সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করছি।

আইস বাথের উপকারিতা
আইস বাথের বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

পেশির ব্যথা কমায়: ঠান্ডা পানি প্রদাহ হ্রাস করে, যা দ্রুত পেশি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে: ঠান্ডা পানি রক্তনালীগুলো সংকুচিত করে এবং পরে প্রসারিত করে, যা রক্ত প্রবাহ উন্নত করতে সাহায্য করে।
মানসিক দৃঢ়তা বাড়ায়: নিয়মিত ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে থাকা মানসিক চাপ মোকাবিলা করার ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
ঘুমের মান উন্নত করে: আইস বাথ স্ট্রেস হরমোন কমায়, যা গভীর ও আরামদায়ক ঘুম আনতে সহায়ক হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ঠান্ডা পানির সংস্পর্শ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে পারে।

আইস বাথের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যদিও আইস বাথ বেশ কিছু উপকারিতা দেয়, তবে এটি সবার জন্য উপযুক্ত নয়। কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে—

হাইপোথারমিয়া: দীর্ঘ সময় ধরে ঠান্ডা পানিতে থাকলে শরীরের তাপমাত্রা বিপজ্জনকভাবে কমে যেতে পারে।
হৃদযন্ত্রের চাপ: হঠাৎ ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে হার্ট রেট এবং রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, যা হৃদরোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
নার্ভ ড্যামেজ: অতিরিক্ত ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে থাকলে স্নায়ুর সমস্যা বা অসাড়তা তৈরি হতে পারে।
শক রিঅ্যাকশন: প্রথমবার আইস বাথ নেওয়ার সময় শ্বাসকষ্ট বা আকস্মিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

ত্বকের জন্য আইস বাথের উপকারিতা
আইস বাথ ত্বকের জন্যও বেশ উপকারী হতে পারে, যেমন—

ফুলে যাওয়া কমায়: ঠান্ডা পানি রক্তনালী সংকুচিত করে, যা ত্বকের ফোলা ভাব কমায়।
ছিদ্র সংকুচিত করে: ঠান্ডা পানি ত্বকের ছিদ্র ছোট করে, যা ত্বককে মসৃণ দেখায়।
ব্রণ প্রতিরোধ করে: এটি প্রদাহ কমায় এবং অতিরিক্ত তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা ব্রণর সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়: রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল দেখায়।

আইস বাথ শুধুমাত্র পেশি পুনরুদ্ধারের জন্য নয়, বরং এটি শরীরের সার্বিক সুস্থতার জন্যও উপকারী হতে পারে—

ওজন কমাতে সাহায্য করে: ঠান্ডা আবহাওয়ার সংস্পর্শে শরীর বেশি ক্যালোরি পোড়াতে পারে, যা মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
গাঁটের ব্যথা কমায়: আর্থ্রাইটিস বা গাঁটের ব্যথা উপশম করতে এটি কার্যকর হতে পারে।
মুড ভালো রাখে: ঠান্ডা পানি এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসরণ বাড়ায়, যা মনের অবস্থার উন্নতি করে।
শরীরকে সতেজ রাখে: একটি ঠান্ডা স্নান ক্লান্তি দূর করে এবং শরীরকে চাঙা করে তুলতে পারে।

চিকিৎসকদের মতামত
আইস বাথ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

সমর্থকদের মতে: এটি প্রদাহ কমায়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং মানসিক দৃঢ়তা উন্নত করে।
সতর্কতার পরামর্শ: হৃদরোগী, উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত ব্যক্তি বা স্নায়ুর সমস্যা থাকলে আইস বাথ এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

পরিমিত ব্যবহারের সুপারিশ: বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি সীমিত সময়ের জন্য করা উচিত এবং অতিরিক্ত ঠান্ডার সংস্পর্শে থাকা এড়ানো উচিত।

কখন ও কতক্ষণ আইস বাথ নেওয়া উচিত?
সেরা সময়:
• তীব্র শারীরিক পরিশ্রমের পর বা সকালে এনার্জি বাড়ানোর জন্য।

 সময়সীমা:
• শুরুতে: ২-৫ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন।
• নিয়মিত ব্যবহারকারীদের জন্য: সর্বোচ্চ ১০-১৫ মিনিট।
• বয়স্কদের জন্য: ৫ মিনিটের বেশি নয়, কারণ বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডার সংবেদনশীলতা বাড়ে।

আইস বাথ তারুণ্য ধরে রাখা, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং পেশির পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর হতে পারে, তবে এটি সবার জন্য উপযুক্ত নয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, সঠিক সময় ও নিয়ম মেনে করলে উপকার পাওয়া সম্ভব, তবে অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এজন্য এটি গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সূত্র: ন্যচারাল কেয়ার ডাক্তার

ফারুক

×