
ছবি: সংগৃহীত
ব্যস্ত এবং চাপপূর্ণ দিনগুলোতে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো যায়—একটি হলো হতাশ হয়ে পড়া, অন্যটি হলো আত্মনিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা। বিশেষজ্ঞদের মতে, চাপ মোকাবিলার জন্য সময় ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চাপপ্রবণ দিনগুলো প্রতিদিনের বিষয় হওয়া উচিত নয়, তবে যখন এমন দিন আসে, তখন তা সফলভাবে সামলানো সম্ভব। সময়ের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে কার্যকর কৌশল অবলম্বন করলে কাজের গতি যেমন বাড়ে, তেমনি মানসিক চাপও কমে।
এখানে রয়েছে ১০টি সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল, যা কঠিন দিনগুলো সহজ করতে সাহায্য করবে—
১. দিনের শুরু করুন "পাওয়ার আওয়ার" দিয়ে
দিনের প্রথম ঘণ্টাটি সবচেয়ে বেশি কার্যকরভাবে কাজে লাগান। ফোন সাইলেন্ট করুন, অপ্রয়োজনীয় ট্যাব বন্ধ করুন, এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর তালিকা তৈরি করুন। এই সময়ে জরুরি বা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে গোটা দিনের জন্য ইতিবাচক গতি তৈরি করা যায়।
২. বড় কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করুন
একটি বড় কাজকে সম্পূর্ণ করতে গেলে তা পাহাড়সমান মনে হতে পারে। তবে কাজগুলো ছোট ছোট ধাপে ভাগ করলে তা সহজ এবং বাস্তবায়নযোগ্য হয়। উদাহরণস্বরূপ, "বাড়ি পরিষ্কার করা" বলার পরিবর্তে কাজগুলো ভাগ করুন: "ডিশ ধোয়া," "লন্ড্রি ভাঁজ করা," "বাড়ির মেঝে পরিষ্কার করা" ইত্যাদি। প্রতিটি ছোট কাজ শেষ করার পর এক ধরনের সন্তুষ্টি ও গতিশীলতা তৈরি হয়।
৩. একই ধরনের কাজ একসঙ্গে করুন
একটি কাজ করতে করতে অন্য কাজে যাওয়া মানসিকভাবে কষ্টকর হতে পারে। তাই, একই ধরনের কাজ একত্রে সম্পন্ন করুন। উদাহরণস্বরূপ, পুরো দিনের ই-মেইল একবারে উত্তর দিন, অথবা ঘর পরিষ্কার করার সময় একবারেই ঝাড়ু, মোছা ও ধুলা পরিষ্কারের কাজ করুন। এতে সময় বাঁচবে এবং মানসিক চাপ কমবে।
৪. "টু-মিনিট রুল" ব্যবহার করুন
যেসব ছোট কাজ মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে শেষ করা সম্ভব, সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে করে ফেলুন। উদাহরণস্বরূপ, মেইল আলাদা করা, বাথরুমের আয়না পরিষ্কার করা, বা জরুরি একটি বার্তার উত্তর দেওয়া। এসব কাজ ফেলে রাখলে দিন শেষে এগুলো একত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
৫. পোমোডোরো টেকনিক ব্যবহার করুন
এই কৌশল অনুসারে, ২৫ মিনিট মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন, তারপর পাঁচ মিনিটের বিরতি নিন। চারটি চক্র সম্পন্ন করার পর ১৫-৩০ মিনিটের দীর্ঘ বিশ্রাম নিন। এটি বড় কাজগুলিকে সহজ করে এবং সময় ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর করে তোলে।
৬. নিজের সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতার সময় নির্ধারণ করুন
সবারই একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে যখন তারা সবচেয়ে বেশি উজ্জীবিত ও কর্মক্ষম থাকে। কেউ সকালের দিকে বেশি উৎপাদনশীল, কেউবা বিকেলে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো এই সময়ে করুন, যাতে সর্বোচ্চ ফলাফল পাওয়া যায়। কম এনার্জির সময় সহজ কাজ, যেমন—লন্ড্রি ভাঁজ করা বা খাবার প্রস্তুত করার মতো কাজ করুন।
৭. অপ্রয়োজনীয় কাজকে "না" বলুন
একটি চাপপূর্ণ দিনে নতুন কাজের বোঝা নেওয়া উচিত নয়। প্রয়োজনে কাজ বা আমন্ত্রণ বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করুন। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি অতিরিক্ত কাজের অনুরোধ করে, তাহলে বলতে পারেন, "আজ আমার পক্ষে সম্ভব নয়, আমি পরে সাহায্য করতে পারব।"
৮. কাজের মাঝে বিরতির জন্য "বাফার টাইম" রাখুন
টানা একের পর এক কাজ করলে শরীর ও মন দুটোই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই, এক কাজ থেকে আরেক কাজে যাওয়ার মাঝে ১০-১৫ মিনিট বিরতি নিন। এই সময়ে বিশ্রাম নিন, পানি পান করুন, অথবা পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুতি নিন।
৯. বিশ্রাম ও পুনরুজ্জীবনের সুযোগ দিন
চাপের দিনে কাজের পরিমাণ বেশি হলে বিশ্রামের সময় বাদ না দেওয়াই ভালো। পাঁচ মিনিটের বিরতি, একটি সংক্ষিপ্ত হাঁটাহাঁটি বা একটি ছোট ধ্যান অনুশীলন করলে মানসিক সতেজতা বাড়ে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়।
১০. দিনের শেষে মূল্যায়ন করুন ও পরবর্তী দিনের পরিকল্পনা করুন
দিনের কাজ শেষ হওয়ার পর কয়েক মিনিট সময় নিয়ে ভাবুন—আজ কী কী অর্জন করেছেন? কী আরও ভালো করা যেত? এরপর পরবর্তী দিনের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ নির্ধারণ করুন, যাতে আপনি পরদিন স্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে দিন শুরু করতে পারেন।
চাপপূর্ণ দিনগুলো এড়ানো সবসময় সম্ভব নয়, তবে সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা কৌশল অনুসরণ করলে কাজের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। উপরের কৌশলগুলো অনুসরণ করলে দিন শেষে আত্মবিশ্বাসী ও সফল বোধ করবেন।
ফারুক