ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫, ১০ চৈত্র ১৪৩১

অন্যরা বেশি সফল মনে হলে করণীয় ৩টি বিষয়

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ২৩ মার্চ ২০২৫

অন্যরা বেশি সফল মনে হলে করণীয় ৩টি বিষয়

ছবি : সংগৃহীত

আমি এটা স্বীকার করতে চাই না, তবে আমি প্রায়ই নিজের সাফল্যের সঙ্গে আমার বন্ধুদের সাফল্যের তুলনা করি। এটি একেবারে ভুল একটি অভ্যাস। আমি একজন ফ্রিল্যান্স লেখক এবং যেকোনো কারণে আমার বেশিরভাগ বন্ধু আইনজীবী এবং কনসালটেন্ট। তারা কর্পোরেট জগতে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে, আর আমি বাসায় বসে আমার ছোট ছোট গল্প লিখে যাচ্ছি।

তুলনা করার এই খারাপ অভ্যাসটি আমার আত্মবিশ্বাসের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বন্ধুদের পদোন্নতি, চাকরির পদবী, বেতন বৃদ্ধি দেখে নিজের অবস্থানের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, ‘আমি কেন এগুলো পাচ্ছি না?’ তারপর মনে হয়, এর মানে আমি ওদের মতো ভালো করছি না।

নিউইয়র্কের কমপ্রিহেন্ড দ্য মাইন্ড-এর পরিচালক এবং নিউরোসাইকোলজিস্ট ড. সানাম হাফিজ বলেছেন, আমরা সবাই কমবেশি অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করি। তিনি বলেন, “এটি আমাদের ডিএনএ-তে তৈরি করা হয়েছে। আমরা ভাবি, সমাজ আমাদের কেমনভাবে দেখছে।” অন্যদের চাকরি, পারিবারিক জীবন, ছুটি কাটানোর ধরন দেখে আমরা নিজেদের অবস্থান মূল্যায়ন করি।

এটি সবসময় খারাপ নয়, তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এটি প্রায়ই লজ্জা, ঈর্ষা এবং হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়—বিশেষত সামাজিক মাধ্যমে, যেখানে সবকিছুই অতিরঞ্জিত এবং সবাইকে সাফল্যের শীর্ষে থাকা মনে হয়।

যদি আপনি বারবার নিজের অবস্থান নিয়ে সন্দিহান বোধ করেন এবং নিজের মূল্য সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন, তাহলে এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্য। ড. হাফিজের পরামর্শ এবং আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনটি সহজ উপায় এখানে তুলে ধরা হলো, যা আপনাকে অন্যদের জীবনকে অতিরঞ্জিত না করে নিজের অবস্থান সম্পর্কে কৃতজ্ঞ থাকতে সহায়তা করবে।

১. তুলনার অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন

আপনি কীভাবে তুলনা করছেন, তা পরিবর্তনের আগে আপনি কী অনুভব করছেন তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।

ড. হাফিজ পরামর্শ দেন, যখন আপনি নিজের সাফল্যের সঙ্গে অন্যদের সাফল্যের তুলনা করেন, তখন কোন আবেগ এবং চিন্তা সামনে আসে তা খুঁজে বের করুন। এটা সহজ মনে হতে পারে—"আমি শুধু ঈর্ষান্বিত!"—কিন্তু গভীরে অনুসন্ধান করলে আপনি হতাশা, লজ্জা, হীনমন্যতা বা অন্যান্য অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া খুঁজে পেতে পারেন।

এই অনুভূতিগুলো চিহ্নিত করা এবং বিচার না করে সেগুলোকে মেনে নেওয়া হলো প্রথম ধাপ। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যাফেক্ট লেবেলিং (যে কৌশলে আপনি আপনার আবেগকে নাম দেন) এই অনুভূতির তীব্রতা কমায় এবং সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সহজ করে।

আপনি কী অনুভব করছেন তা বুঝে গেলে নিজেকে প্রশ্ন করুন: ‘আমি কেন এমন অনুভব করছি?’ আপনি হয়তো বন্ধুদের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হচ্ছেন, কিন্তু আসল কারণ হতে পারে আপনার নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তা বা পারিবারিক প্রত্যাশার চাপ।

ড. হাফিজ বলেন, “তুলনা সাধারণত অন্যদের সম্পর্কে নয়—এটি আপনার নিজের জীবনের প্রতি সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টি সম্পর্কে। অন্যরা শুধু একটি আয়না ধরে রাখে।”

সব সময় তুলনার পেছনে গভীর মানসিক কারণ থাকে না। কখনও কখনও আপনি জানেন যে আপনি কী চান এবং অন্যদের আগে তা পেতে দেখলে আপনি অধৈর্য হয়ে পড়েন। যদি তা হয়, তাহলে এই ধাপটি দ্রুত অতিক্রম করা যেতে পারে।

২. নিজের সাফল্যকে স্বীকৃতি দিন

তুলনা করার সময় সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আমরা আমাদের নিজের অর্জনগুলোকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করি।

আমি যখন অন্যদের সাফল্যের সঙ্গে নিজের অবস্থান তুলনা করি, তখন মনে হয় আমি জীবনের পেছনে পড়ে আছি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমি আমার ক্যারিয়ারে এগিয়েছি, যদিও আমার পথটা বন্ধুদের চেয়ে ভিন্ন।

ড. হাফিজ বলেন, “আপনার যা নেই তা নিয়ে ভাবা বাদ দিন, বরং আপনার জীবনে যা আছে তা সম্পর্কে চিন্তা করুন।”

আপনাকে হয়তো সফলতার সংজ্ঞা নতুন করে নির্ধারণ করতে হবে। আমি যখন বন্ধুদের পদোন্নতির কথা ভেবে হতাশ হতাম—যেটা আমার পেশায় সম্ভব নয়—তখন আমি ভুলে যেতাম যে আমি সফলভাবে নিজের ফ্রিল্যান্স ব্যবসা তৈরি করেছি, নিজের রেট বাড়িয়েছি এবং বড় বড় ম্যাগাজিনে আমার লেখা প্রকাশ করেছি।

সাফল্যের সংজ্ঞা একেকজনের জন্য একেক রকম। আপনার জীবন এবং ক্যারিয়ারে ইতিবাচক যে অর্জনগুলো হয়েছে, সেগুলোকে স্বীকৃতি দিন এবং কৃতজ্ঞ থাকুন।

৩. আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং পদক্ষেপ নিন

উপরের পর্যবেক্ষণ এবং বোঝাপড়া থেকে শেখা তথ্য ব্যবহার করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিন।

ড. হাফিজ বলেন, “সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করাই প্রতিফলনের সবচেয়ে ভালো ফলাফল।” সমস্যার সমাধান বের করা এবং তা অনুসরণ করা মানসিক অস্থিরতা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব কমাতে সহায়ক।

নিজেকে প্রশ্ন করুন: ‘আমি জীবনে কী চাই? আমার জীবনে কী নেই যা আমি চাই?’ এরপর সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা লিখে ফেলুন।

যদি আমি গভীরভাবে চিন্তা করি, তাহলে বুঝতে পারি যে আমি বন্ধুদের মতো পদোন্নতি বা নতুন চাকরির পদবী চাই না। আমি যা চাই তা হলো—এই বছরে নতুন কিছু ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশ করা এবং আমার উপন্যাসের একটি খসড়া শেষ করা।

আপনার জন্য সেটি হতে পারে নতুন একটি কোর্সে ভর্তি হওয়া, একটি ব্যবসা শুরু করা বা দীর্ঘদিনের চাপের পর বিশ্রাম নেওয়া।

সাফল্যের সংজ্ঞা বিভিন্ন মানুষের জন্য আলাদা। আপনার পথ অন্যদের চেয়ে আলাদা হতে পারে এবং সেটাই স্বাভাবিক। অন্যদের সাফল্য দেখে নিজেকে ব্যর্থ ভাবা বন্ধ করুন। আপনার নিজস্ব পথ এবং অর্জনগুলোকেও গুরুত্ব দিন।

মো. মহিউদ্দিন

×