
চুলের রঙ পরিবর্তন করা হলে এটি আপনার স্টাইলের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। তবে, এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চুলের স্বাস্থ্যও রক্ষা করা জরুরি, কারণ কালারিং চুলের স্বাভাবিক গঠন কিছুটা পরিবর্তন করে এবং একে দুর্বল করতে পারে। তাই, চুলের রঙ পরিবর্তনের পর সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হলো যা আপনাকে সঠিকভাবে চুলের রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
১. সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন
রঙিন চুলের জন্য বিশেষ শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত যা রঙের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। সাধারণ শ্যাম্পুর তুলনায় রঙিন চুলের শ্যাম্পু কম স্ক্রাবিং করে এবং চুলের রঙ ধরে রাখে। এই শ্যাম্পুগুলি এমন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় যা চুলের কিউটিকল বন্ধ রাখে এবং রঙের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। সিলিকন এবং সালফেটমুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন, যা চুলে অতিরিক্ত শুষ্কতা ও ফ্রিজ কমাতে সাহায্য করবে।
২. কন্ডিশনার ব্যবহার অপরিহার্য
চুলে রঙ করার পর, চুলের কিউটিকল খুলে যায়, যা রঙের ক্ষয় বাড়িয়ে দেয়। তাই কন্ডিশনার ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। কন্ডিশনার চুলে আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং চুলকে মসৃণ ও স্বাস্থ্যবান রাখে। রঙিন চুলের জন্য বিশেষ কন্ডিশনারগুলি বাজারে পাওয়া যায়, যা চুলের রঙ দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে। সঠিক কন্ডিশনার ব্যবহার চুলকে মখমলের মতো কোমল এবং ঝলমলে রাখে।
৩. হট অয়েল ট্রিটমেন্ট
প্রতি সপ্তাহে একবার হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করলে চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে এবং রঙের ঝকঝকি বাড়ে। তেলের মধ্যে থাকা ভিটামিন এবং ফ্যাটি অ্যাসিড চুলকে পুষ্টি দেয় এবং চুলের রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে। নারকেল তেল, আর্গান তেল বা জোজোবা তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। অয়েল ট্রিটমেন্ট চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে এবং রঙের ফলে হওয়া শুষ্কতা কমিয়ে দেয়।
৪. সূর্যের অতিরিক্ত প্রভাব থেকে রক্ষা করুন
চুলে রঙ করার পর সূর্যের অতিরিক্ত তাপ চুলের রঙ দ্রুত ফেড করে দেয়। তাই, বাইরে যাওয়ার সময় চুলকে টুপি বা স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা রাখা উচিত। যদি আপনি দীর্ঘ সময় সূর্যের তাপে বাইরে থাকেন, তবে রঙিন চুলের জন্য স্পেশাল সান প্রোটেক্টিভ হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের স্প্রে চুলকে সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং রঙ ধরে রাখে।
৫. চুলের স্টাইলিংয়ে সাবধানতা অবলম্বন করুন
চুলের রঙ পরিবর্তনের পর, খুব বেশি স্টাইলিং বা তাপ ব্যবহার করা উচিত নয়। হিট স্টাইলিং টুলস যেমন হেয়ার স্ট্রেইটনার, কার্লিং আয়রন বা হট হেয়ার ড্রায়ার চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা নষ্ট করতে পারে, যা রঙের ক্ষতি করতে পারে। স্টাইলিংয়ের আগে হিট প্রোটেক্ট্যান্ট স্প্রে ব্যবহার করুন এবং তাপমাত্রা কম রেখে স্টাইল করুন।
৬. চুলে শুষ্কতা ও ফ্রিজের সমস্যা দূর করুন
রঙিন চুল সাধারণত শুষ্ক হয়ে যায় এবং ফ্রিজি হয়ে উঠতে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে, একটি ময়েশ্চারাইজিং হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। মাস্ক চুলের গভীরে পুষ্টি পৌঁছায় এবং রঙের শুষ্কতা ও ফ্রিজ কমায়। সপ্তাহে একবার বা প্রয়োজন হলে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
৭. নিয়মিত ট্রিমিং করুন
রঙ পরিবর্তন করার পর চুলের প্রান্তে ড্যামেজ বা স্প্লিট এন্ড হতে পারে। তাই চুলের সঠিক যত্ন নিতে নিয়মিত ট্রিমিং করানো উচিত। ট্রিমিং চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং রঙের পরিপূর্ণতা বাড়িয়ে দেয়।
৮. সঠিক ডায়েট এবং পানির পরিমাণ
চুলের স্বাস্থ্য শুধু বাহ্যিক যত্নের উপর নির্ভর করে না, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ পুষ্টিরও ভূমিকা রয়েছে। সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা চুলকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান রাখতে সাহায্য করে। প্রোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, আয়রন এবং জিংক সমৃদ্ধ খাবার চুলের জন্য খুবই উপকারী।
চুলের রঙ পরিবর্তন করা একটি মজাদার এবং স্টাইলিশ পরিবর্তন হতে পারে, তবে এর সঙ্গে সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। চুলের রঙ দীর্ঘস্থায়ী এবং স্বাস্থ্যবান রাখতে, উপরের পরামর্শগুলো অনুসরণ করা উচিত। চুলের রঙ যত বেশি সচেতনতার সঙ্গে সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া হবে, তত বেশি তা আপনার স্টাইলের সাথে মেলে এবং চুলের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে।
রাজু