
ছবিঃ সংগৃহীত
রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া সত্যিই বিরক্তিকর। তবে জানেন কি, আপনার সন্ধ্যার কিছু অভ্যাসই হতে পারে এর মূল কারণ?
মনোবিজ্ঞান বলছে, নির্দিষ্ট কিছু সন্ধ্যার অভ্যাস আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। আপনি যদি ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে আসুন সন্ধ্যার সেই ৭টি অভ্যাস সম্পর্কে জেনে নিই, যা আপনাকে গভীর ঘুম থেকে দূরে রাখছে।
১) রাত জেগে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা
আপনি কি ঘুমানোর আগে মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভির স্ক্রিনে সময় কাটান? তাহলে এটি আপনার ঘুমের সমস্যার অন্যতম কারণ হতে পারে।
ইলেকট্রনিক ডিভাইসের স্ক্রিন থেকে নির্গত ব্লু লাইট মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করে। এই হরমোনই আমাদের ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে। ব্লু লাইট চোখে গেলে মস্তিষ্ক মনে করে, এখনও দিন চলছে। ফলে ঘুম আসতে দেরি হয় এবং গভীর ঘুম নষ্ট হয়।
সমাধান: রাতের স্ক্রিন টাইম কমিয়ে বই পড়ুন বা হালকা মিউজিক শুনুন। দেখবেন, ঘুমের মান আগের চেয়ে অনেক ভালো হবে!
২) বিশ্রামের জন্য সময় না রাখা
অনেকেই রাত পর্যন্ত কাজ করেন বা মানসিকভাবে সক্রিয় থাকেন, ফলে বিছানায় গিয়ে মনে হয়—মস্তিষ্ক যেন বন্ধই হচ্ছে না!
ঘুমের আগে একটি রিল্যাক্সিং রুটিন রাখা জরুরি। গরম পানিতে গোসল, বই পড়া, বা হালকা স্ট্রেচিং—যেকোনো কিছু করতে পারেন, যা আপনার মনকে শান্ত করবে এবং ঘুমের জন্য প্রস্তুত করবে। ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে, আপনি নিজেই অনুভব করবেন পরিবর্তন।
৩) রাতে বেশি খাওয়া
আপনি কি মাঝরাতে হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাসে আছেন?
অনেকেই ভাবেন, একটু খেয়ে নিলে ঘুম ভালো হবে, কিন্তু ভুল খাবার আপনার ঘুম নষ্ট করতে পারে। বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাবার বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন। এগুলো শক্তির স্তর বাড়িয়ে দেয়, যা রাতে জাগিয়ে রাখতে পারে।
সমাধান: যদি ক্ষুধা লাগে, তাহলে হালকা প্রোটিন বা হার্বাল চা খাওয়া ভালো বিকল্প হতে পারে।
৪) দৈহিক পরিশ্রমের অভাব
শারীরিক পরিশ্রম না করলে ঘুমের মান খারাপ হতে পারে।
গবেষণা বলছে, যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তারা ভালো ঘুম পান। তবে ঘুমের একদম আগে ভারী ব্যায়াম করলে উল্টো ঘুম নষ্ট হতে পারে। তাই বিকেল বা সন্ধ্যায় হালকা হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করুন।
৫) অগোছালো ঘর
অগোছালো রুম শুধু দেখতেই খারাপ লাগে না, এটি আপনার মস্তিষ্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আপনার শয়নকক্ষ একটি শান্তিপূর্ণ আশ্রয়স্থল হওয়া উচিত। ঘর পরিচ্ছন্ন রাখুন, অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলুন, এবং এমন পরিবেশ তৈরি করুন যেখানে আপনি স্বস্তি অনুভব করেন।
৬) ঘুম নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা
অনেকেই রাতে ঘুম না আসা নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন, যা আরও বেশি ঘুমের সমস্যা তৈরি করে।
ঘুম কোনো জোর করে আনার বিষয় নয়। পরিবর্তে, রিল্যাক্স করুন, গভীর শ্বাস নিন, এবং নিজেকে চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।
৭) নির্দিষ্ট সময়ে না ঘুমানো
আপনার কি প্রতিদিন ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময় নেই?
নিয়মিত সময়ে ঘুমানো ও ওঠার অভ্যাস শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে (biological clock) ঠিক রাখে, যা ভালো ঘুম নিশ্চিত করে। যত বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ হবেন, তত ভালো ঘুম হবে!
শেষ কথা
রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া শুধুমাত্র একটা সমস্যা নয়, এর পেছনে আপনার দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস কাজ করে।
তবে এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করা কঠিন নয়! সন্ধ্যার কিছু ছোট পরিবর্তন আপনার ঘুমের মান বাড়িয়ে দিতে পারে এবং আপনাকে একটানা শান্তিপূর্ণ ঘুম দিতে পারে। তাই আজ থেকেই ভালো ঘুমের পথে প্রথম পদক্ষেপ নিন। শুভরাত্রি!
ইমরান