
ছবি: সংগৃহীত
প্রেমকে আমরা সাধারণত হৃদয়ের অনুভূতি হিসেবে দেখি। ভালোবাসার কথা বলতে গেলে হৃদয়ের প্রতীক ব্যবহৃত হয়, আর প্রেমিক-প্রেমিকারা বলে থাকেন, "তোমাকে আমি মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি।" কিন্তু বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে প্রেম কি আসলেই হৃদয়ের বিষয়, নাকি এটি সম্পূর্ণভাবে মস্তিষ্কের একধরনের রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া? বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ড. হেলেন ফিশার এই বিষয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং তাঁর মতে, প্রেম আসলে হৃদয়ের নয়, বরং মস্তিষ্কের একটি জটিল কারসাজি।
মস্তিষ্ক কীভাবে প্রেমকে নিয়ন্ত্রণ করে?
প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ ও মনোবিজ্ঞানী ড. হেলেন ফিশার প্রেমের তিনটি প্রধান স্তর চিহ্নিত করেছেন—আকাঙ্ক্ষা (Lust), আকর্ষণ (Attraction), এবং সংযুক্তি (Attachment)। প্রত্যেকটি স্তরের পেছনে মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন রাসায়নিক উপাদান কাজ করে।
১. আকাঙ্ক্ষা (Lust):
শারীরিক আকর্ষণের জন্য প্রধানত টেস্টোস্টেরন ও এস্ট্রোজেন হরমোন দায়ী। এগুলো মানুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে এবং সম্পর্কের প্রথম ধাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২. আকর্ষণ (Attraction):
প্রেমে পড়লে আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন, নরএপিনেফ্রিন ও সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। ডোপামিন আমাদের আনন্দ ও উত্তেজনার অনুভূতি জাগায়, নরএপিনেফ্রিন হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়, আর সেরোটোনিন আমাদের মনে একজন বিশেষ ব্যক্তির প্রতি গভীর আসক্তি তৈরি করে। এই পর্যায়ে মানুষ সাধারণত প্রেমের উচ্ছ্বাসে ডুবে থাকে এবং বাস্তবতা থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।\
৩. সংযুক্তি (Attachment):
দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে অক্সিটোসিন ও ভাসোপ্রেসিন হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অক্সিটোসিনকে "কাডল হরমোন" বলা হয়, যা ভালোবাসার অনুভূতিকে গভীর করে এবং বিশ্বাস ও বন্ধনের সৃষ্টি করে। এটি বিশেষত শারীরিক স্পর্শ, আলিঙ্গন বা ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে প্রবাহিত হয়।
তাহলে প্রেম কি হৃদয়ের নয়?
প্রেমের সময় আমাদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, বুক ধড়ফড় করে—এসব অনুভূতির কারণে মনে হয় প্রেম হৃদয়েরই বিষয়। কিন্তু বাস্তবে এই প্রতিক্রিয়াগুলো ঘটে মস্তিষ্কের নির্দেশনায়। হৃদয় কেবল একটি পাম্প, যা রক্ত সঞ্চালন করে; কিন্তু মস্তিষ্কই সেই অঙ্গ, যা প্রেমের অনুভূতিকে সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণ করে।
ড. হেলেন ফিশারের গবেষণা অনুযায়ী, প্রেমের অনুভূতি ঠিক মাদকাসক্তির মতোই কাজ করে। যখন আমরা প্রেমে পড়ি, তখন আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন প্রবাহিত হয়, যা ঠিক কোকেন বা অন্যান্য নেশাদ্রব্যের প্রভাবে যেমন হয়, তেমনই এক ধরনের উত্তেজনা ও আনন্দ সৃষ্টি করে।
আসিফ