ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

জেনারেশন জেড নিচ্ছে ‘স্বল্পমেয়াদি অবসর’,কর্মসংস্থানে আনছে পরিবর্তন

প্রকাশিত: ২১:৩১, ১৭ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২১:৩৫, ১৭ মার্চ ২০২৫

জেনারেশন জেড নিচ্ছে ‘স্বল্পমেয়াদি অবসর’,কর্মসংস্থানে আনছে পরিবর্তন

 

সাধারণত আমরা মনে করি, কর্মজীবনের কয়েক দশক পর মানুষ অবসরে গিয়ে আরামদায়ক জীবনযাপন করবে। কিন্তু জেনারেশন জেড এই ধারণা বদলে দিচ্ছে। দীর্ঘ কর্মজীবনের পর অবসরে যাওয়ার বদলে, অনেক তরুণ পেশাজীবী এখন ক্যারিয়ারের মাঝখানেই কিছুদিনের জন্য বিরতি নিচ্ছেন, যাকে বলা হচ্ছে “মাইক্রো-রিটায়ারমেন্ট”। এই সময়টা তারা ভ্রমণ, শখ পূরণ বা কেবল বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করছে।

 

মাইক্রো-রিটায়ারমেন্ট বা স্বল্পমেয়াদী অবসর কী?

মাইক্রো-রিটায়ারমেন্ট হলো এমন একটি ধারণা যেখানে ব্যক্তি কর্মজীবনের মাঝে পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘ বিরতি নেন। সাধারণত কয়েক মাস থেকে এক বছরের এই বিরতিগুলো সাধারণ ছুটির মতো নয়, বরং এগুলো বেশ উদ্দেশ্যপূর্ণ এবং অনেকটা শিক্ষকদের ছুটির মতো। তবে, এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানের সহায়তা ছাড়াই নেওয়া হয়।

 

অনেক কর্মীর জন্য, মাইক্রো-রিটায়ারমেন্ট একটি উপায় যা তাদের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে, কর্মক্ষেত্রের ক্লান্তি দূর করতে এবং জীবনের নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সাহায্য করে। কেউ কেউ এই সময়টা নতুন দক্ষতা শেখার জন্য ব্যবহার করেন, কেউবা পরিবার ও কাছের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান। এটি মূলত তাদের কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার চিন্তাভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

 

কেন জেনারেশন জেড এই ট্রেন্ড গ্রহণ করছে?

কর্মজীবনের প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি: আগের প্রজন্মের তুলনায়, জেনারেশন জেড তরুণরা কাজের স্থায়িত্ব বা দীর্ঘদিন এক প্রতিষ্ঠানে থাকার চেয়ে স্বাধীনতা ও অর্থপূর্ণ কাজকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

 

গিগ ইকোনমির উত্থান: ফ্রিল্যান্সিং, রিমোট কাজ এবং পার্ট-টাইম চাকরির সুবিধার কারণে তারা প্রথাগত চাকরি ছেড়ে যেকোনো সময় আবার কাজে ফিরতে পারেন।

 

বার্নআউট প্রতিরোধ: অতিরিক্ত চাপের কারণে অনেক কর্মীরই মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ছে। তাই ক্লান্ত হওয়ার আগেই অনেকেই বিরতি নিচ্ছেন।

 

ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা: অর্থনৈতিক মন্দা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অনিশ্চিত চাকরির বাজারের কারণে অনেকে দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ের পরিবর্তে বর্তমান সময়টাকেই উপভোগ করতে চান।

 

তারা কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করছে?

যারা মাইক্রো-রিটায়ারমেন্ট নিচ্ছেন, তারা বিভিন্ন উপায়ে আর্থিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন:

 

মিনিমালিস্ট জীবনধারা: অনেকেই কম খরচে জীবনযাপন করেন যাতে কিছু টাকা সঞ্চয় করে দীর্ঘ সময় কাজ ছাড়া চলতে পারেন।

 

উচ্চ আয়ের স্বল্প-মেয়াদী কাজ: কেউ কেউ কয়েক বছর উচ্চ আয়ের কাজ করে অর্থ সঞ্চয় করে, তারপর বিরতি নেন।

 

প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ ও সঞ্চয়: অনেক জেনারেশন জেড তরুণই শুধু দীর্ঘমেয়াদী অবসরের জন্য নয়, বরং মাঝেমধ্যে বিরতি নেওয়ার জন্যও টাকা জমাচ্ছেন।

 

রিমোট ও ফ্রিল্যান্স কাজ: অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইন ভিত্তিক কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন, যা তাদের যেকোনো জায়গা থেকে আয় করতে সাহায্য করে।

 

কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব

নিয়োগকর্তারা এই নতুন প্রবণতা লক্ষ্য করছেন এবং বিভিন্ন উপায়ে এর সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন। কিছু কোম্পানি এখন কর্মীদের জন্য ফ্লেক্সিবল ওয়ার্ক অপশন, আনপেইড সাবাটিক্যাল বা প্রজেক্ট ভিত্তিক কাজের সুযোগ দিচ্ছে। তবে কিছু নিয়োগকর্তা এতে উদ্বিগ্ন, কারণ এটি কর্মীদের বেশি সময় ধরে ধরে রাখার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

 

এইচআর বিশেষজ্ঞ লিসা থম্পসন বলেন, “যেসব নিয়োগকর্তা জেনারেশন জেড প্রতিভা আকর্ষণ করতে চান, তাদের অবশ্যই প্রথাগত ক্যারিয়ার পথ পুনর্বিবেচনা করতে হবে। সাবাটিক্যাল, জব-শেয়ারিং এবং ‘রিটার্ন টু ওয়ার্ক’ প্রোগ্রামের মতো সুবিধা প্রদান করলে তারা এই পরিবর্তিত কর্মসংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে।”

 

কর্মজীবন ও অবসর ভবিষ্যতে কেমন হবে?

তরুণদের হাত ধরে ক্যারিয়ার সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে—কর্মজীবনের মাঝে বিরতি নেওয়া কি ভবিষ্যতে সাধারণ নিয়ম হয়ে দাঁড়াবে? অবসর গ্রহণ কি একেবারেই পুরনো ধারণা হয়ে যাবে?

 

সময়ের সাথে উত্তর মিলবে, তবে এটি স্পষ্ট যে, জীবনের আনন্দ উপভোগের জন্য ৬০ বছরের অপেক্ষায় নেই।

সাজিদ

×