ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

মস্তিষ্ককে নতুন অভ্যাসে খাপ খাইয়ে নেওয়া: কিভাবে ভালো অভ্যাস গড়ে তুলবেন?

প্রকাশিত: ২০:১৬, ১৭ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২০:১৭, ১৭ মার্চ ২০২৫

মস্তিষ্ককে নতুন অভ্যাসে খাপ খাইয়ে নেওয়া: কিভাবে ভালো অভ্যাস গড়ে তুলবেন?

 

আজকের ব্যস্ত জীবনে ভালো অভ্যাস তৈরি করা এবং তা ধরে রাখা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া বা বেশি বই পড়ার মতো লক্ষ্য স্থির করলেও তা ধরে রাখতে পারেন না। তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে সঠিক কৌশল প্রয়োগ করে মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষিত করা সম্ভব এবং ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।

অভ্যাস গঠনের বিজ্ঞান

অভ্যাস গঠনের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে, যাকে "হ্যাবিট লুপ" বলা হয়। এটি তিনটি ধাপে গঠিত: সংকেত, অভ্যাস এবং পুরস্কার। যখন কোনো কাজ বারবার করা হয়, তখন মস্তিষ্কে একটি নির্দিষ্ট নিউরাল পথ তৈরি হয়, যা অভ্যাসকে স্বয়ংক্রিয় করে তোলে। তাই নতুন অভ্যাস তৈরি করতে হলে প্রথমদিকে সচেতন প্রচেষ্টা প্রয়োজন, তবে সময়ের সাথে সাথে তা সহজ হয়ে যায়।

মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষিত করার কার্যকর উপায়

বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েকটি কৌশল পরামর্শ দেন, যা মস্তিষ্ককে ভালো অভ্যাস গ্রহণে সহায়তা করতে পারে:

১. ছোট থেকে শুরু করুন বেশিরভাগ মানুষ একসাথে অনেক কিছু পরিবর্তন করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। অ্যাটমিক হ্যাবিটস বইয়ের লেখক জেমস ক্লিয়ার বলেন, ছোট পরিবর্তন অনেক কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিন পাঁচ কিলোমিটার দৌড়ানোর লক্ষ্য না রেখে মাত্র পাঁচ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অভ্যাস গড়ে উঠলে সময়ের সাথে তা বাড়ানো সহজ হবে।

২. সংকেত ব্যবহার করুন একটি নতুন অভ্যাসকে বিদ্যমান রুটিনের সাথে সংযুক্ত করা হলে তা অনুসরণ করা সহজ হয়। যেমন, রাতে ঘুমানোর আগে বালিশের পাশে বই রাখলে পড়ার কথা মনে থাকবে। আবার সকালে ব্যায়ামের অভ্যাস গড়তে আগের রাতেই ব্যায়ামের পোশাক গুছিয়ে রাখতে পারেন।

৩. আনন্দদায়ক করুন যদি অভ্যাসটি আনন্দদায়ক না হয়, তবে তা ধরে রাখা কঠিন হবে। যেমন, ব্যায়ামের সময় পছন্দের গান শোনা বা ব্যায়ামের পর একটি সুস্বাদু স্মুদি খাওয়া অভ্যাসটিকে মজাদার করে তুলতে পারে।

৪. অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করুনএকটি জার্নাল, মোবাইল অ্যাপ বা ক্যালেন্ডারে অগ্রগতি ট্র্যাক করলে অভ্যাস বজায় রাখা সহজ হয়। ছোট ছোট অর্জন উদযাপন করুন, যেমন এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করতে পারলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন।

৫. বাধা দূর করুন ও খারাপ অভ্যাসের সুযোগ কমানভালো অভ্যাস গড়তে হলে সেটিকে সহজ করতে হবে এবং খারাপ অভ্যাসকে কঠিন করতে হবে। যেমন, স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়তে আগেভাগে খাবার প্রস্তুত করে রাখুন এবং জাঙ্ক ফুড হাতের নাগালের বাইরে রাখুন।

৬. ২-মিনিট নিয়ম প্রয়োগ করুন নিয়ম অনুযায়ী, নতুন অভ্যাসটি এত সহজ করুন যেন এটি দুই মিনিটেই শুরু করা যায়। যেমন, ২০ মিনিট মেডিটেশন করার লক্ষ্য না রেখে মাত্র দুই মিনিট মেডিটেশন করা শুরু করুন। একবার শুরু করলে ধীরে ধীরে সময় বাড়ানো সহজ হবে।

৭. ধারাবাহিক থাকুন নিয়মিত অভ্যাস চালিয়ে যাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন অভ্যাসকে স্বয়ংক্রিয় করতে গড়ে ৬৬ দিন সময় লাগে। যদি কোনো কারণে একদিন বাদ পড়ে, তবে হতাশ না হয়ে পরের দিন আবার শুরু করুন।

৮. পরিচয়-ভিত্তিক অভ্যাস গড়ে তুলুন অভ্যাসের পরিবর্তে নিজেকে একটি নতুন পরিচয়ে অভ্যস্ত করুন। যেমন, “আমি দৌড়াতে চাই” বলার পরিবর্তে বলুন, “আমি একজন দৌড়বিদ।” এই মানসিকতা দীর্ঘমেয়াদে অভ্যাস ধরে রাখতে সাহায্য করে।

ভালো অভ্যাসের পথে অগ্রসর হওয়া

মস্তিষ্ককে ভালো অভ্যাস গ্রহণে প্রশিক্ষিত করা রাতারাতি সম্ভব নয়, তবে ধৈর্য ও সঠিক কৌশল অনুসরণ করলে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব। স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা বা ব্যক্তিগত উন্নয়ন যাই হোক না কেন, প্রতিদিনের ছোট প্রচেষ্টাগুলো বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

অভ্যাস কীভাবে কাজ করে তা বোঝা এবং কার্যকর কৌশল প্রয়োগ করলে, যেকোনো ব্যক্তি নিজের জীবনকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ভালো ভবিষ্যৎ গড়তে পারেন। মূল চাবিকাঠি হলো ছোট থেকে শুরু করা, ধারাবাহিক থাকা এবং পুরো প্রক্রিয়াটিকে উপভোগ করা। সময় ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে, একটি ভালো, স্বাস্থ্যকর ও কার্যকর জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব।

সাজিদ

×