
ছবিঃ সংগৃহীত
সন্তান লালন-পালনে দক্ষতা কেবলমাত্র যত্নশীল হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি সঠিক আচরণের ওপর নির্ভর করে। কিছু অভিভাবক নিজের অজান্তেই এমন কিছু আচরণ করেন, যা সন্তানদের ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে দেয় এবং তাদের মনে বিরক্তি ও হতাশার জন্ম দেয়।
অন্যদিকে, কিছু অভিভাবক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে সন্তানদের জন্য ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করেন, যা তাদের ভবিষ্যতে সুস্থ মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।
সন্তানদের মানসিকভাবে শক্তিশালী ও সাফল্যমুখী করে তুলতে হলে যেসব আচরণ এড়িয়ে চলা উচিত, সেগুলো জানা যেমন জরুরি, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ সঠিক আচরণগুলোর চর্চা করা।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, এমন সাতটি সাধারণ অভ্যাস, যা অভিভাবকদের এড়িয়ে চলা উচিত, যাতে তাদের সন্তানরা ভবিষ্যতে বিরক্তি অনুভব না করে।
১) অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রদান
সন্তানদের সুরক্ষিত রাখা অভিভাবকদের দায়িত্ব, তবে অতিরিক্ত সুরক্ষা তাদের আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
যেমন, কিছু অভিভাবক সন্তানদের হয়ে সব সিদ্ধান্ত নেন বা তাদের স্কুলের প্রকল্প নিজেরাই তৈরি করে দেন। এতে শিশুরা শেখার সুযোগ হারায় এবং ভবিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে ভয় পায়।
সন্তানদের সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের ছোটখাটো ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে, যাতে তারা ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে পারে এবং মানসিকভাবে দৃঢ় হতে পারে।
২) পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব
খোলামেলা যোগাযোগ না থাকলে বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক দূরত্ব তৈরি করতে পারে।
অনেক সময় অভিভাবকরা না শুনেই ধরে নেন যে সন্তানের সমস্যাটা কী এবং তাড়াতাড়ি সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এতে সন্তান নিজেকে অবহেলিত ও ভুল বোঝা মনে করতে পারে। তাই, সন্তানের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং তাদের অনুভূতির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করাই হলো সঠিক পথ।
৩) অবাস্তব প্রত্যাশা নির্ধারণ করা
বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়া ভালো, তবে সন্তানের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি প্রত্যাশা তাদের মনে হতাশা তৈরি করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, অত্যধিক চাপ ও প্রত্যাশার কারণে শিশুরা উদ্বেগ ও আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগতে পারে। তাই অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের স্বাভাবিক সামর্থ্য ও আগ্রহের প্রতি খেয়াল রেখে তাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা।
৪) মানসিক চাহিদা উপেক্ষা করা
শিশুদের শারীরিক যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি মানসিক যত্ন নেওয়াও সমান জরুরি।
যদি কোনো সন্তান তার অনুভূতি প্রকাশ করতে চায়, অথচ তাকে "কাঁদবে না" বা "এত সংবেদনশীল হওয়া ভালো নয়" বলে দমন করা হয়, তবে সে ভবিষ্যতে নিজের আবেগের মূল্য কমিয়ে ফেলতে পারে।
সন্তানদের মানসিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্য দিতে হলে তাদের অনুভূতিগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।
৫) পক্ষপাতিত্ব করা
অনেক সময় অভিভাবকরা নিজেদের অজান্তেই এক সন্তানকে অন্যজনের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দেন।
এতে অবহেলিত সন্তান মনে করে, সে যথেষ্ট মূল্যবান নয়, যা তার মনে দীর্ঘমেয়াদী বিরক্তির জন্ম দিতে পারে।
তাই, অভিভাবকদের উচিত প্রতিটি সন্তানের প্রতি সমান মনোযোগ দেওয়া এবং তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও কৃতিত্বকে উদযাপন করা।
৬) সুস্পষ্ট সীমারেখার অভাব
সন্তানের স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন, তবে এটি হতে হবে যথাযথ শৃঙ্খলার মধ্যে।
যদি শিশুদের সামনে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম না থাকে, তবে তারা আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারে এবং অভিভাবকদের ওপর বিরক্ত হয়ে উঠতে পারে।
সন্তানদের জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও সীমারেখা নির্ধারণ করা হলে তারা দায়িত্বশীল হতে শেখে এবং ভবিষ্যতে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়।
৭) অসংগঠিত শৃঙ্খলা পদ্ধতি
নিয়মকানুন ও শাস্তির ক্ষেত্রে অসংগঠিত আচরণ শিশুদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।
যদি বাবা-মা একদিন একটি নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলেন এবং পরদিন তা উপেক্ষা করেন, তবে সন্তানরা কীভাবে আচরণ করবে তা বুঝতে পারে না।
অভিভাবকদের উচিত শৃঙ্খলা প্রয়োগে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, যাতে শিশুরা নিয়ম-কানুন ও দায়িত্ব সম্পর্কে সঠিকভাবে শিখতে পারে।
সন্তান লালন-পালন এক দীর্ঘ ও শিখনপ্রক্রিয়াসম্পন্ন যাত্রা।
যে কোনো বাবা-মা চাইবেন তাদের সন্তানরা ভবিষ্যতে তাদের সম্মান করুক এবং ভালোবাসুক, কিন্তু কিছু ভুল আচরণ অজান্তেই সন্তানদের মনে বিরক্তি ও দূরত্ব তৈরি করতে পারে।
তাই, অভিভাবকদের উচিত নিজের ভুলগুলো চিহ্নিত করা, সেগুলো সংশোধন করা এবং সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলা।
যতদিন সন্তানরা ভালোবাসা, সম্মান ও সহানুভূতি পায়, ততদিন তারা অভিভাবকদের বিরক্ত না হয়ে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।
সূত্রঃ https://geediting.com/dan-behaviors-of-parents-who-raise-children-that-end-up-resenting-them/
রিফাত