ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

এনার্জি বাড়াতে গ্লুকোজ ব্যালেন্সের ৫টি কার্যকর উপায়!

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ১৬ মার্চ ২০২৫

এনার্জি বাড়াতে গ্লুকোজ ব্যালেন্সের ৫টি কার্যকর উপায়!

আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করছেন, পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছেন, তবে তবুও কেন যেন ক্লান্তি এবং নিস্তেজতা অনুভব করছেন? মাঝে মাঝে এমন অনুভূতি হতে পারে, যেটা বেশ বিরক্তিকর। আপনার শরীরের গ্লুকোজ ব্যালেন্স ঠিক না থাকলে এমনটা হতে পারে।

পুষ্টিবিদ অ্যাঞ্জেলা কুইন্টাস বলছেন, “আমাদের খাদ্য হল আমাদের শক্তির উৎস। খাবারের সঠিক নির্বাচন না করলে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি, মাথা ব্যথা হয়, জয়েন্টে ব্যথা অনুভব করি এবং মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।” তিনি আরও বলেন, “যতই আমাদের জীবনের চাপকে দায়ী করি, আমাদের খাদ্যাভ্যাসের প্রভাবও কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের খাদ্যের দিকে একটু মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।”


ধীর বিপাকের ধারণা:
কুইন্টাস প্রায়ই শুনে থাকেন, “আমার বিপাক খুব ধীর।” কিন্তু তিনি বলেন, এটি সবার সমস্যা নয়। "আমরা বাহ্যিক কারণ খুঁজতে যাই, কিন্তু অনেক সময় অভ্যাস পরিবর্তন করলেই অনেক কিছু পরিবর্তন হতে পারে," বলেন কুইন্টাস।

তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, “বিপাকীয় প্রক্রিয়া হল আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে ঘটে যাওয়া রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া। শক্তি সরবরাহ করার জন্য আমাদের প্রথমে বেসাল বিপাক (যেমন হৃদস্পন্দন এবং শ্বাসপ্রশ্বাস) বুঝতে হবে।” শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে, কুইন্টাস পরামর্শ দেন, আমাদের মাংসপেশী বৃদ্ধিতে মনোযোগী হওয়া উচিত, কারণ যত বেশি মাংসপেশী, তত বেশি শক্তি।


ইনসুলিনের প্রভাব:
কুইন্টাসের মতে, “একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে—এটা যে যদি আমরা শুধু ফল ও শাকসবজি খাই, আমাদের বিপাক ঠিক থাকবে।” কিন্তু কুইন্টাস বলেন, "এটা ভুল। এইভাবে খেলে, রাতের বেলায় আমাদের ইনসুলিন পিক হতে পারে।"

ইনসুলিন হল সেই হরমোন যা রক্তের গ্লুকোজের স্তর নিয়ন্ত্রণ করে। যখন আমাদের গ্লুকোজের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হয়ে যায়, ইনসুলিন তাকে ফ্যাটে রূপান্তরিত করে। তবে, যখন আমাদের শরীর ইনসুলিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তখন আমাদের শরীরের কোষ ইনসুলিনে প্রতিক্রিয়া করতে পারে না, এবং গ্লুকোজের উচ্চ স্তর প্রক্রিয়া করা সম্ভব হয় না।


গ্লুকোজ ব্যালেন্স করার ৫টি সহজ উপায়:
১. প্রোটিনের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট খান
কুইন্টাস বলেন, “যখন আমরা কেবলমাত্র কার্বোহাইড্রেট খাই, বিশেষত যেগুলি দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ বাড়ায় (যেমন চাল, পাস্তা বা আলু), তখন তা ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায়, যা শক্তির অভাব তৈরি করে।” এই সমস্যার সমাধান হলো, কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে প্রোটিন খাওয়া। প্রোটিন গ্লুকাগন নামে একটি হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়, যা ইনসুলিনের প্রভাব প্রতিরোধ করে এবং গ্লুকোজের স্তর আরও স্থিতিশীল রাখে।


২. তরল কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলুন
জুস, সোডা, বা স্মুদি খেলে ইনসুলিন স্পাইক হতে পারে। কুইন্টাস বলেন, "তাদের তরল ফর্মের কারণে, খাবার দ্রুত পেট থেকে রক্তে চলে আসে, ফলে গ্লুকোজের স্তর দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ইনসুলিনের স্পাইক হয়, যা আমাদের ফ্যাট জমাতে সাহায্য করে।"


৩. প্রতিটি ৩-৪ ঘণ্টা পর পর খাবার খান
"ছোট, ঘন ঘন খাবার খেলে আমাদের শরীরের শক্তির যোগান ঠিক থাকে এবং বিপাকীয় প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকে," কুইন্টাস বলছেন। তিনি বলেন, "যদি দীর্ঘ সময় পর খাবার খাওয়া হয়, আমাদের শরীর মাংসপেশীকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, যা বেসাল বিপাক কমিয়ে দেয়।" তাই প্রতিদিন ভালো স্ন্যাকস খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।


৪. সকালে উঠে এক ঘণ্টার মধ্যে খান
“রাতের দীর্ঘ উপবাসের পর আমাদের শরীরে গ্লুকোজের স্টোরেজ কম থাকে, তাই সকালে খাবার খাওয়া জরুরি,” কুইন্টাস বলেন। “এমনকি যদি একটু দই বা দুধের কফি খান, তা আমাদের শরীরকে শক্তি যোগাবে এবং বিপাককে সচল রাখবে।"


৫. খালি পেটে ব্যায়াম করবেন না
কিছু মানুষ মনে করেন, খালি পেটে ব্যায়াম করলে বেশি ফ্যাট পোড়ে, কিন্তু কুইন্টাস বলেন, এটি ভুল ধারণা। "খালি পেটে ব্যায়াম করলে আমাদের শরীর গ্লাইকোজেনের অভাবে মাংসপেশী ব্যবহার করতে শুরু করে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।" তাই, ব্যায়ামের আগে একটু কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন খেয়ে নিন, যা আপনার শরীরকে শক্তি যোগাবে এবং মাংসপেশী সুরক্ষিত রাখবে।


আমাদের শরীরের শক্তি সঠিকভাবে ব্যালেন্স রাখতে গ্লুকোজ স্তরের ভারসাম্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা শুধু শক্তি বাড়াতে পারি না, বরং সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে পারি। সুতরাং, প্রতিদিনের খাদ্য নির্বাচন নিয়ে সচেতন হন এবং আপনার শক্তির মাত্রা বজায় রাখতে এই সহজ উপায়গুলো অনুসরণ করুন।


সূত্র:https://tinyurl.com/2mntdwuj

আফরোজা

×