
চারদিকে উৎসবের আমেজ। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই কোলাহলপূর্ণ রাস্তাঘাট জানান দেয় আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে রাস্তার অলিতে গলিতে ফুটপাতজুড়ে চলে ইফতার বেচাকেনা। ধর্মপ্রাণ মানুষেরা সারাদিন রোজার পরে মুখের স্বাদে ভিন্নতা আনতে ভিড় করে হরেক রকম ইফতার বিক্রির দোকানে। ঈদ মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি বিশেষ উৎসব। এই দিনটিতে পরিবারের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকলেও একত্রিত হয়ে আনন্দের সঙ্গে পালন করেন। এক মাস রোজার পরে সবাই মিলে নানা রকম মজার খাবার খায়। আর সকল আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ থাকে নতুন পোশাক। পরিবারের সামর্থ্যবান মানুষেরা ছোট থেকে বড় সবাইকে পছন্দ অনুযায়ী পোশাক কিনে উপহার দেন। ঈদ যেন একেবারেই অসম্পূর্ণ নতুন পোশাক ছাড়া। ঈদ ফ্যাশনের হালচাল নিয়ে আজকের লেখা-
চলতি ফ্যাশন : ঈদ উপলক্ষে সাজ-পোশাক নির্বাচন করার সময় চলতি ফ্যাশনে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আধুনিক যুগে মেয়েরা সাধারণত সিল্ক, জামদানি, কাতান, শিফন, জর্জেট ও তসর শাড়ি, লেহেঙ্গা, আনারকালি, ও বিভিন্ন স্টাইলিশ কুর্তি, নায়রা কাট ড্রেস পরতে পছন্দ করে। এসব পোশাক ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য খুবই উপযুক্ত এবং সাশ্রয়ীও হতে পারে। পোশাকের নির্বাচন যে কোনো মানুষের ব্যক্তিত্ব ও শৈলীর প্রতিফলন ঘটায়।
রঙের নির্বাচন : ঈদের জন্য রঙের নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত সাদা, নীল, গোলাপি, মেরুন, কমলা, সোনালি বা পেস্টেল শেডস ইত্যাদি রঙের পোশাক উৎসবে খুব চলে। আবার বছরভর যেসব রং ট্রেন্ডে থাকে, ঈদের পোশাকে তার প্রভাবও পরে। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন চৈত্রের মাঝামাঝিতে প্রচণ্ড গরম থাকে। যেহেতু গরমের মধ্যে ঈদ হবে, তাই পোশাকের রং হাল্কা হলে আরামদায়ক হবে।
পোশাকে থাকুক স্বাচ্ছন্দ্য : ঈদের পোশাকে আরামের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। ঈদে চৈত্রের রোদের চোখ রাঙানি থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই সুতি কাপড়ের পোশাক বা আরামের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। অতিরিক্ত আঁটসাঁট পোশাক পরার থেকে সিল্ক বা শিফনের মতো আরামদায়ক কাপড় বেছে নেওয়া ভালো। এ ছাড়াও পোশাকের নকশা এবং ডিজাইনও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সাজ : ঈদ উপলক্ষে সাজতে গেলে গয়না বা অলঙ্কারের ব্যবহার ছাড়া অনেকটা অসম্পূর্ণ। তবে সেগুলো অবশ্যই পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। গর্জিয়াস ড্রেস ছাড়া যে কোনো পোশাকের সঙ্গে হাল্কা চুড়ি, কানের দুল, পায়ের অলঙ্কার এবং হাতের রিং খুব সুন্দর দেখাবে। ঈদের সাজে আপনাকে কেমন লাগবে তা কিছুটা নির্ভর করে মেকআপের ওপরও। যেহেতু গরমের সময়েই হবে ঈদ উৎসব, তাই মেকআপ ভারি হওয়া উচিত নয়। বরং হাল্কা গ্লো, স্মোকি আই এবং ড্রেসের সঙ্গে ম্যাচ করে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগালেই আপনাকে আকর্ষণীয় লাগবে।
কোথায় ভালো ড্রেস পাওয়া যাবে?
রাজধানী শহরের যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, মৌচাক মার্কেট, রাজধানী সুপার মার্কেটসহ বর্তমানে বিভিন্ন দেশীয় ফ্যাশন হাউজ থেকেও কিনে নিতে পারেন আপনার পছন্দনীয় পোশাকটি। এ ছাড়াও যাদের দিন কাটে অনেক ব্যস্ততায় তারা কিনতে পারেন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে। অনলাইনেও আজকাল অনেক ভালো মানের পোশাক পাওয়া যায়। তবে অনলাইন থেকে কেনার ক্ষেত্রে আগেই দাম পরিশোধ করবেন না। পোশাক হাতে পেয়ে যাচাই করে, এরপরে দাম পরিশোধ করুন।
পোশাকের দর-দাম : মার্কেটে বিভিন্ন দামের পোশাক রয়েছে যা নির্ভর করে ডিজাইন, কাপড় এবং ব্র্যান্ডের ওপর। সাধারণ শাড়ির দাম ১০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৫০,০০০ টাকার ওপরে চলে যেতে পারে। লেহেঙ্গার দাম সাধারণত ৪,০০০ টাকা থেকে শুরু হয় এবং উন্নত মানের লেহেঙ্গার দাম ২০,০০০ টাকার মধ্যে। নায়রা কাট ড্রেস, কুর্তি ও আনারকলির দাম সাধারণত ১,৫০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে ডিজাইনার কুর্তির দাম একটু বেশিও হতে পারে। সাশ্রয়ীভাবে স্টাইলিশ পোশাক নির্বাচন করতে পারলে ঈদ হবে আনন্দময় ও স্বস্তিদায়ক।
অলঙ্কার ও গয়না : গয়নার দাম নির্ভর করে ডিজাইন এবং মানের ওপর। সাধারণ গয়নার দাম শুরু হয় ৩০০ টাকা থেকে। আর কস্টিউম জুয়েলারি ও ডিজাইনার গয়নাগুলোর দাম ৫,০০০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে। তবে গয়না এবং সাজপোশাক সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
হাল ফ্যাশনে ছেলেরা পছন্দ করে নতুন এবং স্টাইলিশ পোশাক পরতে। এই বছর ছেলেদের ফ্যাশন কিছুটা বদলেছে। আধুনিক ডিজাইন, ফ্যাশনেবল টাচ এবং আরামদায়ক পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাঞ্জাবি ছাড়া ছেলেদের ঈদ একেবারেই অসম্পূর্ণ। ঈদে ফরমাল পাঞ্জাবি খুবই জনপ্রিয়। সুতির পাঞ্জাবি সাধারণত হাল্কা ও আরামদায়ক হয়, এ কারণেই এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা খুবই সাধারণভাবে ঈদ পালন করতে চান, তারা ক্যাজুয়াল টি-শার্ট এবং ডেনিমের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে পারেন। সাধারণ কিন্তু স্টাইলিশ হয় এই ধরনের পোশাক।
পোশাক : রঙ বাংলাদেশ