
ছবি: সংগৃহীত
খাবার মানুষের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করতে পারে, এমনকি জন্মের আগে মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থাতেও।
মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ফিলিস জাকা ২৩ হাজার মা-কে নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলেন। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন, গর্ভাবস্থায় যেসব মায়েরা জাঙ্কফুড, প্রসেসড ফুড, সল্টি স্ন্যাকস, সফট ড্রিংকস ইত্যাদি বেশি খেয়েছেন, তাদের সন্তানেরা বেশিরভাগই অস্থির, মেজাজি ও আক্রমণাত্মক হয়েছে তাদের তুলনায়, যাদের মায়েরা গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি প্রাকৃতিক ও তাজা খাবার খেয়েছেন। এমনকি উৎকণ্ঠা, বিষন্নতা ও দুঃস্বপ্নে ভোগার মতো প্রভাবে দেখা গেছে তাদের মধ্যে।
ইউনিভার্সিটি অফ বোদর এই ল্যাবে ইঁদুরের ওপর একটি গবেষণা হচ্ছে। ইঁদুরের জন্য একপাশে আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ এবং অপর পাশে অন্ধকার পরিবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুস্থ ইঁদুরটি অন্ধকার পরিবেশটিও খুঁটিয়ে দেখবে যে সেখানে টিকে থাকা যায় কি না। অসুস্থ ইঁদুরটিকে জন্মের পর থেকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড দেওয়া হয়নি। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ব্রেনের বিকাশ ও স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য অপরিহার্য। কারণ ব্রেনে যে গ্রে ম্যাটার থাকে তার শতকরা ৯০ ভাগই হলো ফ্যাট এবং ব্রেন নিজে নিজে তা তৈরি করতে পারে না। খাবারের মাধ্যমে বাইরে থেকে তা যোগাতে হয়। আর নিজের ব্রেনে এর অভাবের কারণেই ল্যাবের ইঁদুরটি আলোকোজ্জ্বল পরিবেশটি খুঁটিয়ে দেখার পরিবর্তে অন্ধকার কোণায় লুকিয়ে থাকাকে বেশি নিরাপদ মনে করে।
মানুষের ব্রেনের ক্ষেত্রেও এই একই ব্যাপার ঘটতে পারে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড না পেলে তার মধ্যেও দেখা দিতে পারে অনিশ্চয়তাবোধ, অস্থিরতা ও ভীতু প্রবণতা।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড কোথায় পাওয়া যায়?
১. তৈলাক্ত মাছ
২. প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা প্রাণীর মাংস
৩. উদ্ভিজ্জ তেল
৪. বীজ এবং
৫ কাঠবাদাম
এই খাবারগুলো নিজে খান, শিশুদেরও খেতে দিন। এতে ব্রেন হবে সুগঠিত।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড একটি ভালো ফ্যাট, এটি আপনার ব্রেনের জন্য সহায়ক।
কিন্তু, খারাপ ফ্যাট ব্রেনের ক্ষতি করতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অফ সিডনির প্রফেসর মার্গারেট মরেস এর গবেষণাও ইঁদুরের ওপর। একদল ইঁদুরকে তিনি বাজারের প্রচলিত জাঙ্কফুড ও বেকারি ফুড খেতে দেন: মিটাই, চিপস ইত্যাদি। ইদানিং কালের মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও এগুলো বেশি থাকে। এর প্রথম প্রভাব পড়ে তার খাদ্যশক্তিতে, অর্থাৎ প্রচুর খেয়েও তার ক্ষুধা মিটছে না। এর চেয়েও বড় প্রভাব দেখা দিল প্রাণীটির স্মৃতিশক্তিতে। গবেষকরা ইঁদুরের খাঁচায় একটি জিনিস একভাবে রাখলেন। কৌতুহল বশত ইঁদুরটি তার পরখ করে দেখলো। কিছুক্ষণ পর গবেষকরা জিনিসটি অন্যভাবে রাখল। স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসের ইঁদুরটি আগের ঘটনাটি মনে রেখে জিনিসটিকে ভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করে। কিন্তু জাঙ্কফুডে অভ্যস্ত ইঁদুরটি একইভাবে পরখ করছে। অর্থাৎ, প্রথমবারের কথা তার মনেই নেই। অর্থাৎ জাঙ্কফুড তার স্মৃতিশক্তিকে নষ্ট করেছে।
চিনির উপস্থিতি নেই এমন প্রসেসড খাবার পাওয়া দুষ্কর। চিনি খেলে আপনার ব্রেনের সেই উদ্দীপনাই হয় যা ড্রাগ বা যৌনাবেগ থেকে হয়। অর্থাৎ আরো বেশি পেতে ইচ্ছা করে। এ কারণেই দেখা যায় মিষ্টি কিছু খাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। প্রভাবটি গাঁজা, হোরোইন বা ইয়াবার মতোই, যদিও তীব্রতা টা কম। বিজ্ঞানীরা আলজিমার রোগটিকে এখন বলে থাকেন ব্রেনের ডায়াবেটিস। অতিরিক্ত চিনি প্রসেস করতে লিভারের যে অবস্থা হয় অর্থাৎ ডায়াবেটিস, ব্রেনের ও একই অবস্থা হয় আলজিমার।
তাহলে কোন খাবারগুলো ব্রেনের ক্ষমতা বাড়াবে
১. ইলিশ ও ভেটকি মাছ - প্রচুর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডের উৎস
২. বাদাম, বিশেষত কাঠবাদাম ও আখরোট
৩. তাজা ফল ও সবজি - পেয়ারা, টমেটো, পালং শাক, বরবটি, স্ট্রবেরি , ব্লুবেরি
এছাড়াও, প্রতিদিন পরিমিত ঘুম ও ব্যায়ামের মাধ্যমে এবং কোনো প্রকার বদঅভ্যাসে না জড়ালে শরীর ও ব্রেন থাকবে কর্মক্ষম ও সতেজ।
মায়মুনা