
ছবিঃ সংগৃহীত
কঠোর পরিশ্রম করা আর সত্যিকারের উচ্চ সাফল্য অর্জন করার মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এটি শুধুমাত্র দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার ব্যাপার নয়, বরং কিভাবে সেই প্রচেষ্টা পরিচালিত হচ্ছে, সেটাই মূল বিষয়।
অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পান না, অন্যদিকে উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তাদের পরিশ্রমকে কাজে লাগান। তাহলে, আসলে কী তাদের আলাদা করে? উত্তর হলো – কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস।
আসুন, এমন ৮টি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস সম্পর্কে জানি, যা একজন কঠোর পরিশ্রমীকে উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীদের থেকে আলাদা করে।
১) উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা গুণগত মানকে গুরুত্ব দেন, পরিমাণকে নয়
অনেকেই মনে করেন, নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করলেই সফল হওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটি শুধুমাত্র ঘণ্টা গোনার বিষয় নয়, বরং সেই সময়ের মধ্যে কী অর্জিত হচ্ছে, সেটাই আসল।
উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা এই বিষয়টি ভালোভাবে বোঝেন। তারা অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ দেন, যা তাদের প্রকৃত অগ্রগতি নিশ্চিত করে।
২) উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা নির্দিষ্ট ও পরিমাপযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করেন
কঠোর পরিশ্রম করেও যদি স্পষ্ট লক্ষ্য না থাকে, তাহলে অগ্রগতি খুব একটা হয় না। উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা SMART (Specific, Measurable, Achievable, Relevant, Time-bound) লক্ষ্য নির্ধারণ করেন।
যেমন, "ভালো বক্তা হতে চাই" বলার পরিবর্তে তারা বলেন, "আগামী মাসের মধ্যে ১০ মিনিটের একটি বক্তৃতা কোনো নোট ছাড়া উপস্থাপন করব।" এতে করে কাজের দিকনির্দেশনা পরিষ্কার হয় এবং বাস্তবসম্মত অগ্রগতি সহজ হয়।
৩) উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা ব্যর্থতাকে শেখার অভিজ্ঞতা হিসেবে গ্রহণ করেন
সফল ব্যক্তিরাও ব্যর্থ হন, তবে তারা ব্যর্থতাকে পরাজয় হিসেবে দেখেন না। টমাস এডিসন হাজারের বেশি বার ব্যর্থ হয়েছিলেন, কিন্তু তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন।
উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা ব্যর্থতাকে শেখার সুযোগ হিসেবে নেন এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করার জন্য এটি কাজে লাগান।
৪) উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেন
অনেকেই মনে করেন, সাফল্যের জন্য ক্লান্তির শেষ সীমায় পৌঁছানো জরুরি। কিন্তু উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা জানেন যে সুস্বাস্থ্য না থাকলে কার্যক্ষমতা কমে যায়।
তারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, পুষ্টিকর খাবার খান, পর্যাপ্ত ঘুমান এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করেন।
৫) উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা অধ্যবসায়ের মূল্য বোঝেন
সাফল্যের পথ কখনোই মসৃণ হয় না। তবে উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা জানেন যে অধ্যবসায় এবং ধৈর্যই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে। তারা কঠিন পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়েন না, বরং সংকটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন।
৬) উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা শেখার আগ্রহ ধরে রাখেন
জ্ঞানই শক্তি।
উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা সবসময় নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করেন। তারা বই পড়েন, কোর্স করেন, কর্মশালায় অংশ নেন এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করেন। একটি শিল্প বা পেশায় টিকে থাকতে হলে নতুন দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি।
৭) উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন
সাধারণত সফল ব্যক্তিরা তাদের জীবনে ইতিবাচক দিকগুলোকে গুরুত্ব দেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এটি তাদের মানসিক চাপ কমায়, ইতিবাচকতা বাড়ায় এবং আত্মবিশ্বাস জোগায়। তারা প্রতিদিন সকালে বা রাতে এমন তিনটি বিষয় লিখে রাখেন, যা নিয়ে তারা কৃতজ্ঞ।
৮) উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা নেটওয়ার্কিং-এর গুরুত্ব বোঝেন
সফল হতে হলে একা পথ চলা সম্ভব নয়।
উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীরা সবসময় গুণগত সম্পর্ক গড়ে তোলেন, যা তাদের সাফল্যের পথকে আরও মসৃণ করে। তারা জানেন যে সঠিক মানুষদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করাই ভবিষ্যতে বড় সুযোগ এনে দিতে পারে।
শেষ কথা: সফলতার মূলমন্ত্র
সাফল্যের পথ প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন হতে পারে, তবে উচ্চ সাফল্য অর্জনকারীদের মধ্যে কিছু সাধারণ অভ্যাস বিদ্যমান।
স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা, ব্যর্থতা থেকে শেখা, অধ্যবসায় বজায় রাখা, মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় গুরুত্ব দেওয়া, ক্রমাগত শেখার প্রবণতা রাখা এবং শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করাই তাদের এগিয়ে নিয়ে যায়।
আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, "আমি খুব বেশি বুদ্ধিমান নই, তবে আমি সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা চালিয়ে যাই।"
এই কথার মধ্যেই উচ্চ সাফল্য অর্জনের মূলমন্ত্র লুকিয়ে আছে – পরিশ্রম করুন, কিন্তু বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে।
সূত্রঃ https://dmnews.com/gb-8-habits-that-separate-hard-workers-from-high-achievers/
ইমরান