ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

সকালের ৯টি বিষাক্ত অভ্যাস, যা আপনার সুখ কেড়ে নিচ্ছে

প্রকাশিত: ০০:৩৫, ১৫ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০০:৪১, ১৫ মার্চ ২০২৫

সকালের ৯টি বিষাক্ত অভ্যাস, যা আপনার সুখ কেড়ে নিচ্ছে

ছবিঃ সংগৃহীত

আমাদের সকালের রুটিন এবং সামগ্রিক সুখের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অনেক সময় আমরা এমন কিছু অভ্যাস গড়ে তুলি, যা আমাদের অজান্তেই সারাদিনের মানসিক অবস্থা ও সুখকে প্রভাবিত করে।

হ্যাক স্পিরিটের প্রতিষ্ঠাতা এবং মননশীলতা (মাইন্ডফুলনেস) বিশেষজ্ঞ ল্যাকলান ব্রাউন এর মতে, কিছু নির্দিষ্ট সকালের অভ্যাস রয়েছে, যা আমাদের সত্যিকারের সুখী হতে বাধা দেয়। এই অভ্যাসগুলোকে চিহ্নিত করা এবং পরিবর্তন আনার মাধ্যমে আমরা আরও সুখী ও পূর্ণাঙ্গ জীবনযাপন করতে পারি।

আসুন জেনে নিই সেই ৯টি অভ্যাস, যা আমাদের সুখকে নষ্ট করে—

১) অ্যালার্ম বন্ধ করে আবার ঘুমানো

অনেকেই সকালে অ্যালার্ম বন্ধ করে আবার ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলেন। তবে এটি আসলে আপনার সারাদিনের শক্তি ও মনোভাবকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

স্নুজ বাটন চাপা মানে আপনি নতুন দিনের মুখোমুখি হতে চাইছেন না। এটি আপনার অবচেতন মনকে জানিয়ে দেয় যে আপনি দিন শুরুর জন্য প্রস্তুত নন, যা মনোবল কমিয়ে দিতে পারে।

সুখী হতে চাইলে এই অভ্যাস ত্যাগ করা জরুরি। প্রথমবার অ্যালার্ম বাজতেই উঠে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, এতে দিন শুরু হবে ইতিবাচকভাবে।

২) সকালের নাশতা এড়িয়ে যাওয়া

সকালের নাশতা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। এটি এড়িয়ে গেলে শরীরে শক্তির ঘাটতি দেখা দেয় এবং মন-মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।

একটি পুষ্টিকর নাশতা শরীর ও মনকে সতেজ রাখে এবং সারাদিনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তাই সকালে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৩) পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া

অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে সরাসরি চা বা কফির দিকে ঝুঁকেন, কিন্তু ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর পানিশূন্য থাকে।

সকালে পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া (মেটাবলিজম) সক্রিয় হয়, বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায় এবং শরীর সতেজ থাকে। অন্যদিকে, পানিশূন্যতা ক্লান্তি, বিভ্রান্তি এবং বিরক্তি সৃষ্টি করতে পারে।

৪) মননশীলতার অভাব (মাইন্ডফুলনেস চর্চা না করা)

সকালে আমরা সাধারণত খুব ব্যস্ত থাকি, ফলে মননশীলতার চর্চা করার সময় পাই না। কিন্তু এটি আমাদের দুশ্চিন্তা ও স্ট্রেস বাড়িয়ে তুলতে পারে।

বৌদ্ধধর্ম মতে, বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগী হওয়া এবং ধ্যান করা আমাদের জীবনে সুখ বাড়াতে সহায়ক। প্রতিদিন সকালে কয়েক মিনিট ধ্যান বা স্ব-উপলব্ধির চর্চা করলে সারাদিন মন শান্ত থাকে এবং ইতিবাচকতা বজায় থাকে।

৫) অতিরিক্ত খবর বা সোশ্যাল মিডিয়া দেখা

সকালে ঘুম থেকে উঠে সরাসরি মোবাইল চেক করা, খবর পড়া বা সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করা অনেকের অভ্যাস।

কিন্তু নেতিবাচক খবর বা অতিরিক্ত তথ্য আমাদের মানসিক চাপ বাড়াতে পারে এবং সারাদিনের মুড খারাপ করে দিতে পারে। বরং সকালটা নিজের জন্য ইতিবাচক কিছু করে শুরু করুন—যেমন ধ্যান, হাঁটাহাঁটি বা বই পড়া।

৬) শুধুমাত্র কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া, মানসিক শান্তিকে নয়

অনেকে মনে করেন, সকাল থেকেই কাজের তালিকা নিয়ে ব্যস্ত হওয়া সফলতার চাবিকাঠি। কিন্তু এটি মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে।

সকালের কিছু সময় নিজের জন্য রেখে দিন—শান্তভাবে কফি পান করুন, কিছুক্ষণ নীরব থাকুন, অথবা ডায়েরিতে দিনটি কীভাবে কাটাতে চান তা লিখুন।

৭) শারীরিক ব্যায়াম না করা

সকালের ব্যায়াম শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

সকালে হালকা ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি বা যোগব্যায়াম করলে শরীরে এন্ডোরফিন নিঃসরণ হয়, যা আমাদের মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। ব্যায়ামের অভাবে সারাদিন অলসতা, ক্লান্তি ও হতাশা আসতে পারে।

৮) দিনের উদ্দেশ্য ঠিক না করা

সকালে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়া দিন শুরু করলে আমরা সারাদিন অগোছালো ও চাপের মধ্যে থাকি।

প্রতিদিন সকালে কয়েক মিনিট সময় নিয়ে ভাবুন—আপনার লক্ষ্য কী? আজকের জন্য আপনার উদ্দেশ্য কী? এটি আপনাকে আরও সংগঠিত এবং আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

৯) নিজের প্রতি কঠোর হওয়া

সকালে নিজের প্রতি কঠোর সমালোচনা করা বা উচ্চ প্রত্যাশা রাখা মানসিক চাপ বাড়াতে পারে।

নিজেকে ক্ষমাশীল হতে শিখুন। সকালের শুরুটা ইতিবাচক আত্মকথন এবং আত্মপ্রেমের মাধ্যমে করুন। এতে সারাদিন আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচকতা বজায় থাকবে।

সকালের অভ্যাস ও সুখের সংযোগ

আমাদের সকালের ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই সারাদিনের মানসিক অবস্থা নির্ধারণ করে।

এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে পারলে আমাদের জীবনেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। ল্যাকলান ব্রাউনের বই "Hidden Secrets of Buddhism: How To Live With Maximum Impact and Minimum Ego"-তেও তিনি এই বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করেছেন।

সুখী হতে চাইলে প্রথমেই আমাদের সচেতন হতে হবে এবং ধাপে ধাপে ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে হবে। সকালটা যেমন কাটবে, সারাদিনটাও অনেকাংশে তেমনই কাটবে। তাই সচেতন সিদ্ধান্ত নিন এবং নিজের সুখের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখুন!

সূত্রঃ https://hackspirit.com/9-morning-habits-of-people-who-will-never-be-truly-happy-according-to-a-mindfulness-expert/

ইমরান

×