ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাজমা যুক্ত করার ৯টি দারুণ স্বাস্থ্য উপকারিতা!

প্রকাশিত: ২১:১৫, ১৪ মার্চ ২০২৫

দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাজমা যুক্ত করার ৯টি দারুণ স্বাস্থ্য উপকারিতা!

রাজমা বা কিডনি বিন শুধু সুস্বাদু নয়, এটি অসাধারণ পুষ্টিগুণসম্পন্ন একটি খাবার। এটি উচ্চমাত্রার প্রোটিন, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এবং নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। নিয়মিত রাজমা খেলে শরীরের কোষ সুরক্ষিত থাকে, রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় থাকে, হজমশক্তি উন্নত হয় এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি সুস্থ জীবনধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারে। আসুন, বিস্তারিতভাবে জেনে নিই কেন রাজমা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত।


১. কোষ সুরক্ষায় সহায়ক
আমাদের শরীর প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ক্ষতিকর ফ্রি-র‌্যাডিক্যালের সংস্পর্শে আসে, যা কোষের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়িয়ে সময়ের আগেই বুড়িয়ে যাওয়া, ক্যানসার এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণ হতে পারে। রাজমায় থাকা প্রচুর ফেনোলিক যৌগ দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা ফ্রি-র‌্যাডিক্যাল প্রতিরোধে সহায়ক এবং কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।


২. উচ্চমাত্রার ফ্ল্যাভোনয়েড, প্রদাহ ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক
গাঢ় রঙের রাজমা সাধারণত সাদা রাজমার তুলনায় বেশি ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এছাড়া, নিয়মিত ফ্ল্যাভোনয়েডযুক্ত খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হয়।


৩. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
রাজমা নিম্ন গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) সমৃদ্ধ খাবার, যার ফলে এটি ধীরে হজম হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এতে থাকা উচ্চ ফাইবার ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার।


৪. গ্যালিক অ্যাসিডের ভালো উৎস, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে
রাজমায় গ্যালিক অ্যাসিড নামে এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা দেহের প্রদাহ কমায়, ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্যালিক অ্যাসিড মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে এবং আলঝেইমার বা পারকিনসনস রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।


৫. আলফা-অ্যামাইলেজ এনজাইমের কার্যকারিতা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
রাজমার মধ্যে কিছু বিশেষ বায়োঅ্যাক্টিভ যৌগ রয়েছে, যা আলফা-অ্যামাইলেজ এনজাইম নামক একটি উৎসেচকের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে শর্করা দ্রুত গ্লুকোজে রূপান্তরিত হতে পারে না, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই গুণের জন্য রাজমা টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।


৬. হজম শক্তি উন্নত করে ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
রাজমায় উচ্চমাত্রার ডায়েটারি ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি উন্নত করে এবং অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক এবং অন্ত্রের সুস্থতা নিশ্চিত করে। নিয়মিত রাজমা খেলে গ্যাস, পেটফাঁপা ও বদহজমের সমস্যা কমে যেতে পারে।


৭. নিম্ন গ্লাইসেমিক ইনডেক্স, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
রাজমার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) কম, যার ফলে এটি ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের প্রবণতা হ্রাস পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিম্ন GI খাবার দীর্ঘমেয়াদে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং মেটাবলিজম উন্নত করতে পারে।


৮. টাইপ-২ ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় সহায়ক
রাজমা এমন একটি খাবার, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি নিয়মিত খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং যারা ইতোমধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের জন্য এটি উপকারী হতে পারে।


৯. প্রোটিন সমৃদ্ধ, নিরামিষভোজীদের জন্য আদর্শ প্রোটিন উৎস
রাজমা উচ্চমাত্রার উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উৎস, যা দেহের পেশি গঠনে সাহায্য করে, হাড় শক্তিশালী করে এবং সার্বিক শক্তি বৃদ্ধি করে। যারা নিরামিষভোজী বা নির্দিষ্ট কারণে প্রাণিজ প্রোটিন কম গ্রহণ করেন, তাদের জন্য রাজমা উপযুক্ত বিকল্প হতে পারে।


কীভাবে খাদ্যতালিকায় রাজমা অন্তর্ভুক্ত করবেন?
রাজমা রান্না করা সহজ এবং এটি বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যায়। কিছু উপায়—
রাজমার তরকারি: ভারতীয় এবং বাংলাদেশি রান্নায় এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
সালাদ: সেদ্ধ রাজমা সবজি ও অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে স্বাস্থ্যকর সালাদ তৈরি করা যায়।
সুপ: রাজমা সুপ পুষ্টিকর এবং সহজে হজমযোগ্য।
রাজমার রুটি বা পরোটা: গমের ময়দার সঙ্গে রাজমার পেস্ট মিশিয়ে স্বাস্থ্যকর পরোটা তৈরি করা যায়।
রাজমার স্মুদি: যারা ব্যতিক্রমী কিছু চেষ্টা করতে চান, তারা স্মুদির মধ্যে রাজমা যোগ করতে পারেন।


রাজমা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার, যা নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ ও সবল থাকবে। এটি হৃদযন্ত্র, হজমতন্ত্র, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই সুস্থ জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাজমা যুক্ত করুন এবং এর উপকারিতা উপভোগ করুন।


সূত্র:https://tinyurl.com/2s78b7hs

আফরোজা

×