
ছবি: সংগৃহীত
আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল কর্মজীবনে, কর্মীদের মনোযোগ ও উৎপাদনশীলতা ধরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা, অনুপ্রেরণার অভাব বা আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে অনেকেই কর্মক্ষমতা হারান।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি কার্যকর কৌশল হলো ডোপামেনু—একটি ব্যক্তিগত আনন্দ তালিকা, যেখানে বিভিন্ন ছোট ও ইতিবাচক কার্যক্রম যুক্ত থাকে যা মুহূর্তের মধ্যে কর্মোদ্যম ও মনের সতেজতা ফিরিয়ে আনতে পারে।
ডোপামিন হলো মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার, যা কর্মপ্রেরণা, মনোযোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত। একজন ব্যক্তি যখন অনুপ্রেরণাহীন বোধ করেন, তখন তার মস্তিষ্কে ডোপামিনের ঘাটতি হতে পারে। ডোপামেনু ব্যবহার করলে এই ঘাটতি পূরণ করে কাজের প্রতি নতুন উদ্যম সৃষ্টি করা সম্ভব।
ডোপামেনু তৈরির ৫টি কার্যকর উপায়
১. আগেভাগেই পরিকল্পনা করুন
অনেক সময় ক্লান্ত বা অনুপ্রেরণাহীন অবস্থায় নতুন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে যায়। তাই আগে থেকেই একটি ডোপামেনু তৈরি করুন, যাতে প্রয়োজনের সময় তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়। এটি ডেস্ক, নোটবুক বা ফোনে সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে।
২. ব্যক্তিগত পছন্দের ভিত্তিতে কার্যক্রম নির্বাচন করুন
প্রত্যেকের পছন্দ আলাদা, তাই ডোপামেনু হতে হবে ব্যক্তিগতভাবে তৈরি করা। এতে নিম্নলিখিত বিভাগগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে—
- সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম (Quick Boosts): যেমন পাঁচ মিনিট হাঁটা, গান শোনা, চোখ বন্ধ করে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া।
- দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম (Deep Focus): যেমন ব্যায়াম, পড়াশোনা বা নতুন কিছু শেখা।
- বিশেষ কার্যক্রম (Occasional Rewards): ছুটির দিনে ভ্রমণ, নতুন রেস্তোরাঁয় খাওয়া বা পছন্দের সিনেমা দেখা।
- নিয়ন্ত্রিত বিনোদন (Controlled Entertainment): নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, গেম খেলা বা সিরিজ দেখা।
৩. সময়ের সঙ্গে পরীক্ষা করুন
কোন সময়ে কোন কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি উপকারী, তা বোঝার জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে পরীক্ষা করুন। কেউ সকালের দিকে কর্মোদ্যম বাড়াতে চাইতে পারেন, আবার কেউ দুপুরের পর মনোযোগ ধরে রাখতে ছোট বিরতির প্রয়োজন অনুভব করতে পারেন।
৪. আচরণগত প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করুন
কর্মক্ষেত্রে কখন কর্মক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে বা কোন পরিস্থিতিতে অনুপ্রেরণা কমে যাচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করুন। যদি দেখা যায়, প্রতিদিন বিকেলের দিকে মনোযোগ হারিয়ে যাচ্ছে, তাহলে সে সময়ে ডোপামেনু থেকে একটি কার্যক্রম গ্রহণ করুন।
৫. নমনীয় ও উপভোগ্য রাখুন
ডোপামেনু তৈরি করা কোনো কঠিন নিয়ম নয়; এটি একটি পরীক্ষামূলক কৌশল। প্রয়োজনে নতুন কার্যক্রম যুক্ত করুন বা অপ্রয়োজনীয় বিষয় বাদ দিন। এটি এমনভাবে তৈরি করুন যাতে এটি কাজের চাপ কমাতে ও মানসিক প্রশান্তি আনতে পারে।
কর্মক্ষেত্রে ডোপামেনুর কার্যকারিতা
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মীরা যদি নির্দিষ্ট বিরতিতে তাদের পছন্দের ক্ষুদ্র কার্যক্রম সম্পাদন করেন, তবে তাদের উৎপাদনশীলতা ও মানসিক সুস্থতা উভয়ই বৃদ্ধি পায়।
প্রতিষ্ঠানগুলোও কর্মীদের জন্য ডোপামেনু তৈরির উদ্যোগ নিতে পারে, যেমন—
- অফিসে স্বল্প সময়ের মেডিটেশন বা স্ট্রেচিং সেশন রাখা
- স্বতঃস্ফূর্তভাবে টিম-বিল্ডিং কার্যক্রম আয়োজন
- কর্মীদের নির্দিষ্ট বিরতির সময় নির্ধারণ করা
ডোপামেনু একটি সহজ কিন্তু কার্যকর পদ্ধতি, যা কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্যম সৃষ্টি করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে কর্মদক্ষতা ও মানসিক সুস্থতা বাড়াতে সহায়তা করে।
কর্মজীবনে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য শুধু কঠোর পরিশ্রম করাই যথেষ্ট নয়, বরং মানসিক উদ্যম ও সুস্থতা রক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ। ডোপামেনু এমন একটি উপায়, যা সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে কাজের প্রতি আগ্রহ ও কর্মদক্ষতা বাড়াতে পারে।
আজই নিজের ডোপামেনু তৈরি করুন এবং কর্মজীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনুন।
কানন