
ছবি: সংগৃহীত
মানুষ যখন তারা দুঃখী থাকে কিন্তু সেটি গোপন করার চেষ্টা করে। এমন পরিস্থিতিতে, শরীর স্বতঃস্ফূর্তভাবে কিছু সূক্ষ্ম সংকেত দিতে শুরু করে। আমরা আজ এমন ৭টি দেহভাষার লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করব, যা প্রকাশ করে কেউ গভীরভাবে অসুখী, তবে তা আড়াল করার চেষ্টা করছে।
জোরপূর্বক হাসি
সত্যিকারের হাসি শুধুমাত্র ঠোঁটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং পুরো মুখ এবং চোখেও প্রতিফলিত হয়। খুশি থাকলে চোখের কোণে স্বাভাবিকভাবে ভাঁজ পড়ে, যাকে 'হাসির রেখা' বলা হয়। কিন্তু যখন কেউ গভীরভাবে অসুখী হয়, তখন তাদের হাসি শুধু ঠোঁটে সীমাবদ্ধ থাকে, চোখ থাকে নিস্প্রভ।
চোখে চোখ না রাখা
অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কথোপকথনের সময় চোখ সরিয়ে নেয়, মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে বা অন্য দিকে তাকায়। এটি আসলে বাস্তবতা থেকে দূরে থাকার এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই যদি দেখেন কেউ নিয়মিত চোখের যোগাযোগ এড়িয়ে যাচ্ছে, তাহলে এটিকে কেবল অন্যমনস্কতা হিসেবে না দেখে তাদের মানসিক অবস্থার দিকে নজর দিন।
ঝুঁকে থাকা বা বাঁকানো শরীরভঙ্গি
যখন আমরা আত্মবিশ্বাসী ও সুখী থাকি, তখন আমাদের শরীর সোজা থাকে, কাঁধ পেছনে থাকে এবং মাথা উঁচু থাকে। কিন্তু কেউ যদি দুঃখী হয়, তাহলে তার শরীর স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকে পড়ে, কাঁধ ঢলে পড়ে, এবং মাথা নিচু হয়ে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কুঁজো হয়ে বা অবসন্ন ভঙ্গিতে হাঁটে, তারা তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক আবেগ অনুভব করে।
অস্থিরতা ও ঘন ঘন নড়াচড়া
আমরা সবাই মাঝেমধ্যে হাতের আঙুল নাড়ানো, পা কাঁপানো বা কলম ঘোরানোর মতো ছোটখাটো কাজ করি। তবে যদি কেউ অতিরিক্তভাবে এসব করতে থাকে, তবে এটি মানসিক অস্থিরতার ইঙ্গিত হতে পারে। যারা গভীরভাবে অসুখী, তারা সাধারণত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না এবং ছোট ছোট গতিবিধির মাধ্যমে তাদের অস্থিরতা প্রকাশ পায়।
দ্রুত কথা বলা
যখন কেউ মানসিক চাপে থাকে বা আবেগের স্রোতে ভেসে যায়, তখন তাদের কথা বলার গতি বেড়ে যায়। এটি এমন একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা তাদের মনের ভেতরের বিশৃঙ্খল অবস্থাকে প্রকাশ করে। তাই যদি দেখেন কেউ অপ্রয়োজনীয়ভাবে দ্রুত কথা বলছে, তবে হতে পারে তারা নিজেদের আবেগ চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
সামাজিকতা থেকে দূরে থাকা
প্রতিটি মানুষ মাঝে মাঝে একাকীত্ব পছন্দ করতে পারে, কিন্তু যদি কেউ ক্রমাগত বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো এড়িয়ে চলে, তাহলে সেটি চিন্তার বিষয় হতে পারে। সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে যাওয়া, নিমন্ত্রণে সাড়া না দেওয়া বা জনসমাগম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া এগুলো হতে পারে লুকানো দুঃখের লক্ষণ।
খাওয়ার ও ঘুমের অভ্যাসে পরিবর্তন
যদি কেউ হঠাৎ খুব বেশি বা খুব কম খেতে শুরু করে, কিংবা ঘুমের অভ্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে (অনিদ্রা বা অতিরিক্ত ঘুম), তবে এটি তার মানসিক অস্থিরতার প্রতিফলন হতে পারে। এ ধরনের পরিবর্তনকে সাধারণ ক্লান্তি হিসেবে না দেখে, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের মানসিক অবস্থার খোঁজ নেওয়া জরুরি।
এই সাতটি লক্ষণ কারও লুকানো দুঃখ বোঝার জন্য দিকনির্দেশনা দিতে পারে, তবে এগুলো চূড়ান্ত কিছু নয়। তাই যখনই কাউকে এসব সংকেত প্রদর্শন করতে দেখবেন, তাদের পাশে দাঁড়ান, কথা বলুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন। সবচেয়ে বড় কথা, কাউকে বোঝানো জরুরি যে দুঃখ পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়, এবং তারা একা নয়। সঠিক সহমর্মিতা ও সহানুভূতির মাধ্যমে হয়তো আপনি কারও জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবেন।
শিলা ইসলাম