
যেন কফিপ্রেমীদের আরেকটি অজুহাতের দরকার ছিল! নতুন এক গবেষণা বলছে, কফি শুধুমাত্র মন সতেজ করে না, এটি আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।কফি বরাবরই তার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ-নিরোধী গুণাবলির জন্য পরিচিত। প্রতিটি কাপে হাজারো উপকারী যৌগ থাকে, যা মানসিক সতর্কতা বাড়ানো, প্রদাহ কমানো, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করা এবং এমনকি ব্যায়ামের পর ব্যথা কমাতেও সহায়ক।
সম্প্রতি Nature Microbiology জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা দেখিয়েছে কফির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক,এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে।
গবেষকরা কী জানতে পেরেছেন?
গবেষকরা ২২,৮৬৭ জন মানুষের মল নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, কফি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ওপর কী প্রভাব ফেলে। অংশগ্রহণকারীদের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল,একদল কখনোই কফি খান না বা খুব কম খান (মাসে তিন কাপেরও কম), আরেক দল মাঝেমধ্যে কফি খান (মাসে তিন কাপ থেকে দিনে তিন কাপ পর্যন্ত), আর বাকিরা নিয়মিত প্রচুর কফি খান (প্রতিদিন তিন কাপ বা তার বেশি)।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কফি খান, তাদের অন্ত্রে L. asaccharolyticus নামে একটি বিশেষ ধরনের ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। সহজভাবে বললে, নিয়মিত কফি খাওয়ার অভ্যাস অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করতে পারে, কারণ এটি উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়ক। তাই কফিপ্রেমীদের জন্য এটি অবশ্যই দারুণ খবর!
সুস্থ অন্ত্র কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
"আসলে, অন্ত্রে থাকা মাইক্রোবায়োম আমাদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ," বলছেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অধ্যাপক এবং এন্ডেভার হেলথের প্রধান বিজ্ঞানী ড. মাইকেল ক্যাপলান। তিনি ব্যাখ্যা করেন, আমাদের অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো পুরো শরীরের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য, এবং অন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই জরুরি।
ড. ক্যাপলানের মতে, একটি স্বাস্থ্যকর অন্ত্র ভ্রমণজনিত ডায়রিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিকজনিত ডায়রিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে, এমনকি এটি স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো এবং কেমোথেরাপির ফলাফল উন্নত করতেও ভূমিকা রাখতে পারে।
আমাদের অন্ত্রেই শরীরের অধিকাংশ রোগপ্রতিরোধী কোষ থাকে, যা এটিকে সুস্থ রাখা আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। একটি ভালো অন্ত্রের স্বাস্থ্য পরিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে, দেহে প্রদাহ কমায় এবং আমাদের মানসিক অবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলে।আপনি কি কখনো নার্ভাস বোধ করলে পেটে অস্বস্তি অনুভব করেছেন? সেটাই প্রমাণ করে যে আমাদের অন্ত্র এবং মস্তিষ্কের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
কফি কীভাবে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে?
ড. ক্যাপলান ব্যাখ্যা করেছেন যে শুধু ক্যাফেইন নয়, ডিক্যাফ কফিও অন্ত্রের জন্য উপকারী। মূলত, কফিতে থাকা পলিফেনলস,যেমন ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড এবং কুইনিক অ্যাসিড,ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বিজ্ঞান বলছে, পলিফেনলস প্রিবায়োটিকের মতো কাজ করে, যা উপকারী অন্ত্রব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হিসেবে কাজ করে এবং তাদের বৃদ্ধি বাড়ায়।
গবেষণার সীমাবদ্ধতা কী?
নতুন যেকোনো আবিষ্কারের মতো, এই ক্ষেত্রেও আরও গবেষণার প্রয়োজন। বিশেষ করে L. asaccharolyticus ব্যাকটেরিয়া মাত্র গত পাঁচ বছর আগে চিহ্নিত হয়েছে, তাই এর স্বাস্থ্যগত প্রভাব এখনো পুরোপুরি বোঝা যায়নি। এটি কি মৃত্যুর হার কমাতে পারে বা হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে কতটুকু কফি খাওয়া উচিত?
ড. ক্যাপলানের মতে, প্রতিদিন এক থেকে দুই কাপ কফি অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এটি অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে। এফডিএ-এর সুপারিশ অনুযায়ী, দৈনিক ৪০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন (প্রায় চার কাপ কফি) গ্রহণ না করাই ভালো।
আর যারা কফির সঙ্গে দুধ বা সামান্য চিনি মিশিয়ে খান, তাদের জন্য সুখবর,গবেষণায় দেখা গেছে, এগুলো কফির অন্ত্র-উপকারিতায় কোনো প্রভাব ফেলে না!
এই গবেষণা কফিপ্রেমীদের জন্য দারুণ খবর, কারণ কফি শুধু মস্তিষ্ককে চাঙা রাখে না, এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। তবে শুধু কফির ওপর নির্ভর না করে, দই, কেফির, ফারমেন্টেড খাবার (যেমন কিমচি, সয়ারক্রাউট) এবং কম্বুচা-এর মতো অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবারও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
সূত্র:https://tinyurl.com/yc36avx7
আফরোজা