ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

‘কম কাজ, বেশি ফল’ -৭টি মিনিমালিস্ট অভ্যাসে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির উপায়

প্রকাশিত: ১৯:৪৯, ১৩ মার্চ ২০২৫

‘কম কাজ, বেশি ফল’ -৭টি মিনিমালিস্ট অভ্যাসে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির উপায়

ছবি : সংগৃহীত

আপনার কি কখনো মনে হয়েছে যে আপনি একটি অন্তহীন কাজের তালিকায় ডুবে যাচ্ছেন? যতই কাজ শেষ করুন, নতুন কাজ যেন ততই জমা হচ্ছে?

হ্যাঁ, আমারও এমনই লাগত।

বছরের পর বছর আমি ভেবেছি যে এর সমাধান হলো আরও বেশি কাজ করা। আরও বেশি টুল, আরও বেশি অ্যাপ, আরও বেশি হ্যাক। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, প্রকৃত অগ্রগতি এসেছে তখনই যখন আমি কম কাজ করতে শুরু করেছি।

মিনিমালিজম শুধু পোশাক বা ঘর পরিষ্কার করার ব্যাপার নয়—এটি এক ধরনের মানসিকতা। অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দেওয়ার পর আমি পেয়েছি আরও বেশি সময়, শক্তি এবং মনোযোগ।

এই সাতটি মিনিমালিস্ট অভ্যাস আমাকে কম সময়ে বেশি কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করেছে, কোনো রকম চাপ ছাড়াই। এটি আপনার জন্যও কার্যকর হতে পারে।

১. সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্লান্তি দূর করেছি

অনেক সময় আমরা ছোটখাটো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। স্টিভ জবস, বারাক ওবামা এবং মার্ক জাকারবার্গের মতো সফল ব্যক্তিরা একই পোশাক পরে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্লান্তি দূর করতেন। আমি যেভাবে এটি বাস্তবায়ন করেছি:

  • প্রতিদিনের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম – সাধারণত আমি কালো টি-শার্ট ও জিন্স পরি।
  • পূর্ব পরিকল্পিত খাবারের মেনু – সাপ্তাহিক খাবারের তালিকা তৈরি করি।
  • নির্ধারিত সকালের রুটিন – সকাল শুরু হয় এক নির্দিষ্ট রুটিনে, যা আমাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে।

ফলাফল?

ছোট সিদ্ধান্তে শক্তি নষ্ট না করে আমি গুরুত্বপূর্ণ কাজে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারি।

২. গভীর মনোযোগের চর্চা করেছি

আগে আমি মাল্টিটাস্কিং-এ বিশ্বাস করতাম। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, মাল্টিটাস্কিং উৎপাদনশীলতা প্রায় ৪০% কমিয়ে দেয়। এখন আমি যেভাবে কাজ করি:

  • ডিপ ওয়ার্ক সেশন – নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শুধুমাত্র একটি কাজে মনোযোগ দিই।
  • ব্যাচিং টাস্ক – একই ধরনের কাজ একসঙ্গে শেষ করি।
  • মাইন্ডফুল অ্যাটেনশন – কাজ, কথা বলা বা খাওয়ার সময় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিই।

ফলাফল?

কম ক্লান্তি, কম ভুল, বেশি ফলাফল।

৩. "না" বলার অভ্যাস করেছি

আপনি যদি সবকিছুতে "হ্যাঁ" বলেন, তবে প্রকৃত গুরুত্বপূর্ণ কাজে "না" বলছেন।

  • অপ্রয়োজনীয় মিটিং বাদ দিয়েছি।
  • শক্তি নষ্ট করে এমন অনুরোধে সাড়া দেই না।
  • নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজকে অগ্রাধিকার দিই।

ওয়ারেন বাফেট বলেছিলেন, “খুব সফল ব্যক্তিরা প্রায় সবকিছুতেই না বলে।” আমি এটি মেনে চলেছি এবং ফলাফল পেয়েছি।

৪. কাজ স্বয়ংক্রিয় করেছি

প্রতিদিনের পুনরাবৃত্ত কাজ আমি স্বয়ংক্রিয় করেছি:

  • বিল পরিশোধ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করি।
  • ইমেইল ফিল্টার এবং প্রস্তুত উত্তর ব্যবহার করি।
  • টাস্ক ম্যানেজমেন্ট অ্যাপে কাজের তালিকা সংরক্ষণ করি।

ফলাফল?

মস্তিষ্কের বিশাল এক চাপ দূর হয়েছে।

৫. কাজের জায়গা সরল করেছি

গবেষণায় দেখা গেছে, অগোছালো পরিবেশ আমাদের মনোযোগ ও মানসিক কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

আমি যেভাবে এটি বাস্তবায়ন করেছি:

  • শুধুমাত্র একটি নোটবুক ব্যবহার করি।
  • একটি মনিটরে কাজ করি।
  • টেবিলে অপ্রয়োজনীয় কিছু রাখি না।

কম জঞ্জাল মানে কম বিভ্রান্তি, কম চাপ এবং আরও বেশি ফোকাস।

৬. কম কাজ করেছি, কিন্তু ভালোভাবে করেছি

৮০% ফলাফল আসে ২০% প্রচেষ্টা থেকে—এটি পারেটো নীতি। তাই আমি যে কাজগুলো প্রকৃতভাবে ফল দেয়, সেগুলোর প্রতি মনোযোগ দিয়েছি:

  • অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দিয়েছি।
  • গুরুত্বপূর্ণ কাজ বেশি করেছি।

ফলাফল?

কম কাজ করে বেশি ফল।

৭. শক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করেছি

যদি আপনি ক্লান্ত থাকেন, আপনার উৎপাদনশীলতা স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। তাই আমি:

  • কাজের নির্ধারিত সময় শেষের পর আর কাজ করি না।
  • নিয়মিত বিরতি নেই।
  • পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করি।

উৎপাদনশীলতা মানে শুধু কাজ নয়—এটি টিকে থাকার বিষয়ও।

উপসংহার

মিনিমালিজম মানে শুধু কম জিনিস রাখা নয়—এটি এমন কিছুর জন্য জায়গা তৈরি করা, যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।

এই অভ্যাসগুলো আমাকে শুধু ভালোভাবে কাজ করতে সহায়তা করেনি; বরং ভালোভাবে বেঁচে থাকতেও সহায়তা করেছে।

যদি আপনি ক্লান্ত বোধ করেন, হয়তো সমাধানটি আরও বেশি কাজ করা নয়—বরং ‘কম, কিন্তু ভালোভাবে’ করা।

মো. মহিউদ্দিন

×