ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব গড়ে তোলার কৌশল!

প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ১৩ মার্চ ২০২৫

দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব গড়ে তোলার কৌশল!

ছবি: সংগৃহীত

বন্ধুত্ব আমাদের জীবনে এক অমূল্য সম্পর্ক। ছোটবেলা থেকেই আমরা অনেকেই বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে ‘চিরকাল’ থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তবে বাস্তবে, এই ‘চিরকাল’ শব্দটি প্রায়শই প্রতারণা করে। সময়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের গঠন, গুরুত্ব এবং সম্পর্কের ধরন বদলাতে থাকে। এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে একটি বন্ধুত্ব দীর্ঘকাল টিকিয়ে রাখা সম্ভব? কি তবে বন্ধুত্বও আসলেই ভঙ্গুর?

দুবাই ভিত্তিক মনোবিজ্ঞানী, এমি সিলভার, দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব সম্পর্কে বলেন, “চিরকাল বন্ধুত্বের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, কারণ এটি ব্যক্তি ও তার জীবনের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।” সিলভার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, “শৈশবের বন্ধুদের সঙ্গে শুরু হওয়া সম্পর্ক কখনও কখনও মাঝপথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যদিও তারা জীবনে এখনও আছে। কিন্তু সেই সম্পর্কের অর্থ বদলে যায়।”

বন্ধুত্বের চিরকালিতার পেছনে যে গুণগুলো গুরুত্বপূর্ণ

বন্ধুত্ব কখনও একদিনের কথা নয়, এটি গড়ে ওঠে ধীরে ধীরে। আসলে, এর জন্য প্রয়োজন আন্তরিকতা, সময় দেওয়া, এবং একে অপরকে সমর্থন করা। আবু ধাবি ভিত্তিক বিক্রয় পেশাজীবী, লিভিয়া থেরেসা জানান, “আমার ত্রিশের দশকের বন্ধুত্বগুলোই আমার কাছে এখন দীর্ঘস্থায়ী মনে হয়।” থেরেসা বলেন, “আমি জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছি সেই সময়, তাই সেই বন্ধুত্বগুলোই আমার কাছে চিরকালী।”

এটা পরিষ্কার যে, বন্ধুত্ব একে অপরকে পাশে থাকার বিষয়— শারীরিক বা মানসিকভাবে। তবে, পরিস্থিতি ও জীবনযাত্রার কারণে কখনও কখনও বন্ধুত্বের মধ্যে ফাঁক তৈরি হতে পারে। এই সময়ে, গুরুত্বপূর্ণ হলো, দুই পক্ষই সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখতে চাইলে, একে অপরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে রাখা এবং যোগাযোগ বজায় রাখা।

রাগ ও অভিমান পার করে চলা

লম্বা সময় ধরে চলা সম্পর্কের মধ্যে কখনও কখনও রাগ ও অভিমান জমে যায়। সিলভার জানান, “দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব বজায় রাখতে হলে আমাদের গ্রudge ও অভিমান ছাড়তে হবে।” এই ধরনের একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন দুবাইয়ের গৃহিনী আর্শি ত্রেহান। তিনি বলেন, “আমি আমার মায়ের মৃত্যুতে গভীর শোকের মধ্যে বন্ধুকে অবহেলা করেছিলাম। তবে, যখন আমি শোক কাটিয়ে উঠলাম, তখন সেই বন্ধুটি তার নিজস্ব সমস্যা নিয়ে কঠিন সময়ে যাচ্ছিল। আমরা একে অপরের কাছে ছিলাম, কিন্তু দুজনের মধ্যে এক ধরণের নীরবতা তৈরি হয়েছিল। তবে, ধীরে ধীরে সম্পর্কটি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।”

বন্ধুত্বের সঠিক পরিপূরক: একে অপরকে রাখতে হবে যত্নে

শেষপর্যন্ত, সিলভার মনে করেন, বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার মূল চাবিকাঠি হলো দুজনের একে অপরকে মুল্যায়ন করা এবং সম্পর্কের জন্য সংগ্রাম করা। তিনি বলেন, “কখনও কখনও জীবন আমাদের দুঃখ, ক্ষোভ এবং পরিবর্তনের মধ্যে ঠেলে দেয়, কিন্তু যদি দুই পক্ষ জানে যে তারা একে অপরকে সব পরিস্থিতিতেই পাশে রাখতে চায়, তবে সেই বন্ধুত্ব টিকে থাকে।”

অতএব, বন্ধুত্বটি যেন চিরকাল টিকে থাকে, সে জন্য প্রয়োজন বিশ্বাস, সময় ও একে অপরকে বুঝতে পারা। জীবন যতই পরিবর্তিত হোক না কেন, সত্যিকারের বন্ধুত্ব একে অপরকে সমর্থন করার মধ্যেই থাকে।

শিহাব

×