
ছবি: সংগৃহীত
প্রজ্ঞা শুধুমাত্র জ্ঞানের পরিমাণ নয়—এটি জ্ঞানকে অর্থবহভাবে জীবনে প্রয়োগ করার ক্ষমতা। প্লেটোর অ্যাপোলজি অনুযায়ী, প্রকৃত প্রজ্ঞার সূচনা হয় আমাদের নিজস্ব সীমাবদ্ধতা স্বীকার করার মাধ্যমে। সক্রেটিস বলেছিলেন যে তিনি কেবলমাত্র এটুকুই জানেন যে তিনি কিছুই জানেন না। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে প্রজ্ঞা হল অনিশ্চয়তাকে গ্রহণ করা এবং জ্ঞানের পরিবর্তনশীল প্রকৃতিকে উপলব্ধি করা।
অ্যারিস্টটল তার নিকোমাকিয়ান এথিক্স-এ আরও ব্যাখ্যা করেছেন যে প্রজ্ঞার মূল লক্ষ্য হল ভালোভাবে জীবনযাপন করা। এটি শুধু জানা নয়, বরং সেই জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সঠিক ও নৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়াই প্রকৃত প্রজ্ঞার লক্ষণ।
প্রজ্ঞার পথে আত্মপ্রকাশের গুরুত্ব
জ্ঞান ও কর্মের বাইরেও প্রকৃত প্রজ্ঞার জন্য আত্মপ্রকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনোবিজ্ঞানী ইমান্টস বারুস-এর মতে, প্রজ্ঞার পথে এগোতে হলে আমাদেরকে সমাজের চাপ থেকে মুক্ত হতে হবে, প্রচলিত বিশ্বাসকে প্রশ্ন করতে হবে এবং পরামর্শ গ্রহণের সময় তা সমালোচনামূলকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে—এমনকি যদি তা আমাদের কাছের মানুষদের কাছ থেকে আসে। প্রকৃত প্রজ্ঞা মানে হলো নিজের অন্তরের কণ্ঠস্বর শোনা, কেবলমাত্র অন্যদের প্রত্যাশা পূরণ করাই নয়।
বাইরের পরামর্শ ও নিজের অন্তর্দৃষ্টি মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। প্রজ্ঞা শুধুমাত্র যুক্তির উপর নির্ভর করে না; এটি আবেগ, প্রবৃত্তি, মূল্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবের মিশ্রণ। প্রকৃত প্রজ্ঞা যুক্তি ও অনুভূতি, বুদ্ধিমত্তা ও অন্তর্দৃষ্টি, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও বৃহত্তর সংযোগের মধ্যে সুষম সমন্বয় তৈরি করে।
নিজস্ব পথ অনুসরণ করা স্বার্থপরতা নয়, বরং বৃহত্তর কল্যাণের জন্য প্রয়োজন
জুংবিদ বিশ্লেষক জেমস হলিস বলেন যে, প্রকৃত প্রজ্ঞা আমাদের স্বার্থপরতার ঊর্ধ্বে উঠে বৃহত্তর কল্যাণে অবদান রাখতে শেখায়। জীবনের প্রকৃত অর্থ কেবল ব্যক্তিগত তৃপ্তি নয়; বরং সৃষ্টিশীলতা, ভালোবাসা, সমাজসেবা বা আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে বিশ্বে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।
নিশ্চয়তা ও স্বস্তি আমাদের সহজাত চাহিদা হলেও, প্রকৃত প্রজ্ঞা আমাদের ক্রমাগত বিকাশের দিকে ঠেলে দেয়। হলিস প্রশ্ন রাখেন: জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? কেউ কিভাবে বিশ্বে অবদান রাখতে পারে? এই প্রশ্নগুলো আমাদের সত্যিকারের নিজস্ব পথ খুঁজে পেতে সহায়তা করে।
একটি প্রজ্ঞাময় ও আত্মপ্রকাশমূলক জীবনযাপন করা কঠিন, কিন্তু তা অত্যন্ত পরিপূর্ণতা এনে দেয়। কেউ আমাদের বলে দিতে পারবে না আমরা কে হয়ে উঠব—এই উত্তর আমাদের নিজের মধ্য থেকেই আসতে হবে। তবে, যদি আমরা সমমনা ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে থাকি, তবে তা আমাদের প্রজ্ঞা, সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতা অনুসরণের পথকে আরও সুদৃঢ় করবে। শেষ পর্যন্ত, প্রজ্ঞা মানে হল জ্ঞানকে কাজে লাগানো এবং জীবনের সমস্ত জটিলতাকে আলিঙ্গন করা।
আবীর