
যখন বাবা-মা, যত্নশীল ব্যক্তি বা শিক্ষকরা শিশুর আচরণের সমস্যা সম্মুখীন হন, তখন এটা অনেক সময় হতাশাজনক এবং চাপপূর্ণ হয়ে ওঠে। অনেক সময় আমরা নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করি, "তারা কেন শোনে না?" বা "তারা কেন শুধু নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারে না?" শিশু মনোবিজ্ঞানী ড. জেন মিচেল, যিনি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেন: "তারা করতে চায় না, তারা করতে পারে না, তারা করে না।"
ড. মিচেলের এই ধারণা ব্যাখ্যা করে যে, সমস্ত খারাপ আচরণ এক রকম নয়। যখন শিশুরা খারাপ আচরণ করে, তখন তাদের আচরণের কারণ বুঝতে হবে। এটি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আমরা উপযুক্তভাবে তাদের সাহায্য করতে পারি। এই তিনটি শ্রেণী বুঝে, আমরা আরও ভালোভাবে তাদের সহায়তা করতে পারি।
১. তারা করতে চায় না:
যখন শিশু "করতে চায় না", এর মানে হলো তারা কিছু করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে বা মানতে চাচ্ছে না। এটা প্রায়ই তাদের অল্প উদ্দীপনা, জেদ বা একটি আবেগজনিত প্রয়োজনের কারণে ঘটে। এই আচরণে ধৈর্য এবং বোঝাপড়ার সাথে মোকাবিলা করা উচিত। ড. মিচেল বলেন, "যখন শিশু কিছু করতে চায় না, তখন এর মানে হতে পারে তারা আরও সহায়তা বা পরিষ্কার নির্দেশনা চায়।"
উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি শিশু হোমওয়ার্ক করতে না চায়, তবে হয়তো তাদের কাজটি বিরক্তিকর বা অতি উত্তেজনাপূর্ণ মনে হচ্ছে। এর জন্য রেগে না গিয়ে, বাবা-মা ছোট ছোট অংশে কাজটি ভাগ করতে পারেন, প্রতিটি অংশ শেষ করার জন্য তাদের প্রশংসা করতে পারেন এবং বুঝিয়ে দিতে পারেন কেন কাজটি গুরুত্বপূর্ণ।
২. তারা করতে পারে না:
অন্যদিকে, যখন শিশু "করতে পারে না", এর মানে হলো তাদের শারীরিক, মানসিক বা আবেগিক সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর মানে এই নয় যে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু করতে চাইছে না, বরং তারা হয়তো তা করতে সক্ষম নয়।
উদাহরণস্বরূপ, একটি শিশু যদি নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে না পারে, তবে তারা মেজাজ হারিয়ে ফেলতে পারে, কিন্তু এটি তাদের দুর্ব্যবহার নয়, বরং তাদের যোগাযোগের অক্ষমতা।
ড. মিচেল বলেন, "যখন শিশু কিছু করতে পারে না, তখন তাদের সহায়তা এবং বোঝাপড়া প্রয়োজন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে শাস্তি দেওয়া কোনোভাবেই সহায়ক নয়; বরং আমাদের তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী সাহায্য করতে হবে।"
এই ক্ষেত্রে, শিশুদের আবেগিক সহায়তা প্রদান, শিথিল করার কৌশল করা এবং কাজগুলো সহজ, অর্জনযোগ্য পদক্ষেপে ভাগ করা যেতে পারে।
৩. তারা করে না:
তৃতীয় শ্রেণী "তারা করে না" যখন একটি শিশু কোন কাজ বা আচরণ করতে জানে না। এটি প্রায়ই ছোট শিশুদের মধ্যে ঘটে, যারা এমনকি কিছু মৌলিক কাজও করতে শিখেনি। উদাহরণস্বরূপ, একটি ছোট শিশু হয়তো নিজের জুতা বাঁধতে পারবে না। তারা এটা করতে চায় না, তারা এটা করতে জানে না।
ড. মিচেল বলেন, "যখন শিশু জানে না কীভাবে কিছু করতে হয়, তখন তাদের সঠিকভাবে শেখানোর প্রয়োজন। এটি একে একে ধাপে ধাপে শেখানো উচিত।"
উদাহরণস্বরূপ, একটি শিশুকে জুতা বাঁধতে না পারার জন্য শাস্তি না দিয়ে, তাদের ধাপে ধাপে শেখানো উচিত, এবং তাদের প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসা করা উচিত।
কেন এই ধারণা গুরুত্বপূর্ণ?
শিশুর আচরণ বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং এর ভিত্তিতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এটি শিশুর প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সহায়তা প্রদান করতে সাহায্য করে। ড. মিচেল বলেন, "শিশুরা যখন খারাপ আচরণ করে, তখন আমাদের বুঝতে হবে কেন তারা এমন করছে এবং কীভাবে তাদের সাহায্য করা যাবে।"
"তারা করতে চায় না" আচরণে: পরিষ্কার এবং বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা তৈরি করুন, ইতিবাচক প্রতিফলন ব্যবহার করুন এবং ভালো আচরণের জন্য পুরস্কৃত করুন।
"তারা করতে পারে না" আচরণে: ধৈর্য ধরুন এবং অতিরিক্ত সহায়তা দিন। বুঝুন যে কিছু শিশু কিছু কাজ করতে সময় নেয় বা একটু বেশি সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে।
"তারা করে না" আচরণে: শেখানোর সুযোগ দিন। কাজগুলো ছোট ছোট ভাগে ভাগ করুন এবং প্রতিটি পদক্ষেপে উৎসাহ দিন। খেলার মাধ্যমে শেখানোর চেষ্টা করুন।
“তারা করতে চায় না, তারা করতে পারে না, তারা করে না” এই ধারণাটি বুঝে শিশুর আচরণে উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব। ড. মিচেলের এই ধারণাটি শিশুদের আচরণ নিয়ে আরও সহানুভূতি এবং কার্যকরী কৌশল গ্রহণ করতে সাহায্য করবে। যত বেশি আমরা বুঝতে পারব যে শিশু কিভাবে বিশ্বের সাথে যুক্ত হচ্ছে, তত বেশি আমরা তাদের সহায়তা করতে পারব এবং তাদের উন্নতির পথ সহজ করতে পারব।
শিশুদের আচরণ সব সময় সহজে বোঝা না গেলেও, সঠিক নির্দেশনা ও সহায়তার মাধ্যমে আমরা তাদের উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।
সাজিদ