ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

জ্ঞানী ও পরিপক্ক হতে যে আচরণগুলো জীবন থেকে বাদ দিতে হবে

প্রকাশিত: ০১:৩৪, ১৩ মার্চ ২০২৫

জ্ঞানী ও পরিপক্ক হতে যে আচরণগুলো জীবন থেকে বাদ দিতে হবে

ছবিঃ সংগৃহীত

আমরা সবাই এমন কিছু মানুষকে চিনি, যাদের কথা ও আচরণে পরিপক্বতা ও প্রজ্ঞার ছাপ স্পষ্ট। তারা যখন কথা বলেন, মানুষ গুরুত্বসহকারে শোনে; তাদের পরামর্শ মূল্যবান মনে হয়; তারা সহজাতভাবেই সম্মান অর্জন করেন, কোনো অতিরিক্ত চেষ্টা ছাড়াই।

ভালো খবর হলো—এটি বয়স, বড় কোনো পদবী, কিংবা উচ্চ আইকিউ-এর ওপর নির্ভর করে না। বরং এটি নির্ভর করে আপনি কীভাবে আচরণ করেন এবং কোন কোন বদভ্যাস বাদ দেন তার ওপর।

আপনি যদি সত্যিকারের বুদ্ধিমান ও পরিপক্ক ব্যক্তির ছাপ ফেলতে চান, তাহলে এখনই এই ৭টি আচরণ ত্যাগ করুন।

১. অতিরিক্ত ব্যাখ্যা করা

নিজের প্রতিটি সিদ্ধান্ত বা মতামত নিয়ে অতিরিক্ত ব্যাখ্যা দেয়ার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই আছে।

কিন্তু আসলেই কি এটি প্রয়োজনীয়?

বুদ্ধিমান ও আত্মবিশ্বাসী মানুষ অল্প কথায় স্পষ্টভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করেন এবং সেটাকে দাঁড় করিয়ে রাখেন। বারবার ব্যাখ্যা দিলে এটি আত্মবিশ্বাসের অভাব বা অন্যের অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীলতার ইঙ্গিত দেয়। নিশ্চয়ই, কিছু পরিস্থিতিতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয়। তবে সাধারণ কথোপকথনে কম কথা বলা অনেক বেশি কার্যকর। সংক্ষেপে বলুন, তারপর থামুন।

২. কথার মাঝখানে বাধা দেওয়া বা আলাপচারিতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা

কথোপকথনের সময় কেউ যদি বারবার কথা কাটে বা আলোচনা নিজের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তাহলে সেটা বিরক্তিকর লাগে।

পরিপক্ক মানুষ জানেন, শোনার শক্তি কতটা মূল্যবান। তারা প্রতিটি আলোচনার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন না। একজন দার্শনিক একবার বলেছিলেন, "আমাদের দুটি কান এবং একটি মুখ আছে, যাতে আমরা দ্বিগুণ শুনতে পারি এবং অর্ধেক কথা বলতে পারি।"

সত্যিকারের জ্ঞানীদের প্রজ্ঞা তাদের কথা বলার পরিমাণে নয়, বরং কখন চুপ থেকে শুনতে হবে, সেটি বোঝার ক্ষমতায়।

৩. প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠা বা সমালোচনায় আত্মরক্ষা করা

কেউই সমালোচনা পছন্দ করে না, কিন্তু পরিপক্ব মানুষ তা গ্রহণ করতে জানে।

যদি কেউ সমালোচনা শুনেই আত্মরক্ষামূলক আচরণ করে, তাহলে বোঝা যায় যে তারা নিজেদের নিয়ে অনিশ্চিত। কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানীরা প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে ভাবেন—এখানে কি সত্য লুকিয়ে আছে? আমি কি কিছু শিখতে পারছি? এই দৃষ্টিভঙ্গিই মানুষকে আলাদা করে।

৪. রাগ ও অভিমান পুষে রাখা

কোনো ক্ষোভ বা রাগ ধরে রাখার চেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক আচরণ আর কিছু হতে পারে না। পরিপক্ক মানুষ সময় নষ্ট করেন না অতীতের কষ্ট নিয়ে। তারা ক্ষমা করতে জানেন এবং সামনে এগিয়ে যান।

বিজ্ঞানও বলছে, দীর্ঘদিন রাগ ধরে রাখা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিপরীতে, ক্ষমা করার মানসিকতা আমাদের মনের প্রশান্তি ও সুস্থতা নিশ্চিত করে। এর মানে এই নয় যে, আপনাকে নেতিবাচক বা বিষাক্ত মানুষদের আবার গ্রহণ করতে হবে। বরং আপনি শুধু তাদের আপনার মানসিক শান্তি নষ্ট করতে দেবেন না।

৫. সবার কাছ থেকে অনুমোদন খোঁজা

যদি আপনার চিন্তা-ভাবনার মধ্যে সব সময় "লোগেরা কী ভাববে?" এই প্রশ্ন থাকে, তাহলে আত্মবিশ্বাসের অভাব বোঝায়।

পরিপক্ব মানুষ অন্যদের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করেন না। তারা নিজেদের আত্ম-মূল্যায়নের ওপর বিশ্বাস রাখেন। এটি অবশ্যই মানে নয় যে, আপনাকে সব ধরনের মতামত অগ্রাহ্য করতে হবে। কিন্তু এটি নিশ্চিত করা উচিত যে, আপনার আত্মসম্মানবোধ সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়ার ওপর নির্ভরশীল নয়।

৬. পরনিন্দা করা

গসিপ বা পরনিন্দা অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় মনে হতে পারে। কিন্তু সত্য হল, অধিকাংশ মানুষ গসিপকারীদের পছন্দ করে না। একটি জরিপে দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে গসিপ করা সবচেয়ে বিরক্তিকর অভ্যাসগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

বুদ্ধিমান ও পরিপক্ক ব্যক্তিরা বুঝতে পারেন যে, কেউ যদি আপনার সাথে অন্য কারও গসিপ করে, তাহলে সে অবশ্যই অন্যদের সাথেও আপনার গসিপ করবে। তাই তারা গঠনমূলক আলোচনা ও ইতিবাচক কথোপকথনের দিকেই মনোযোগ দেন। পরবর্তীবার যখন গসিপ করার ইচ্ছা হবে, তখন নিজেকে প্রশ্ন করুন—এই কথা আমি যদি তার সামনেই বলতে না পারি, তাহলে বলা কি উচিত?

৭. আবেগপ্রবণ হয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানো

সত্যিকারের প্রজ্ঞা হলো পরিস্থিতির প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সেটি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা।

অনেকেই হুটহাট প্রতিক্রিয়া দেখান, যার ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। কিন্তু বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে কিছু সময় নেন, চিন্তা করেন এবং তারপর উত্তর দেন। এটি আবেগ লুকানোর কথা নয়, বরং আবেগ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তা শেখার কথা।

পরবর্তীবার যখন কোনো বিষয়ে রেগে যাবেন, তখন নিজেকে প্রশ্ন করুন—এই প্রতিক্রিয়া কি পরিস্থিতি ভালো করবে, নাকি খারাপ করবে?

শেষ কথা

পরিপক্বতা ও প্রজ্ঞা শুধু অভিজ্ঞতা বা বয়সের ওপর নির্ভর করে না। এটি নির্ভর করে আমাদের দৈনন্দিন আচরণের ওপর। এই সাতটি অভ্যাস ত্যাগ করলে শুধু অন্যদের চোখে আপনি বুদ্ধিমান বলে মনে হবেন না, বরং সত্যিকার অর্থেই আরও পরিপক্ব ও জ্ঞানী হয়ে উঠবেন। তাহলে, এই সাতটি আচরণের মধ্যে কোনটি আপনার মধ্যে আছে? এবং কোনটি আপনি প্রথমে বাদ দিতে চান? সফলতার পথে ছোট ছোট পরিবর্তনই বড় পার্থক্য গড়ে তোলে!

সূত্রঃ https://dmnews.com/mal-if-you-really-want-to-come-across-as-a-wise-and-mature-person-say-goodbye-to-these-7-subtle-behaviors/

ইমরান

×