
ছবিঃ সংগৃহীত
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন অনেকটাই নির্ভর করে ব্যক্তির দৈনন্দিন অভ্যাসের ওপর। কিছু মানুষ না বুঝেই এমন কিছু অভ্যাস রপ্ত করে ফেলেন, যা তাদের আর্থিক অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অর্থের ব্যবস্থাপনা কেবলমাত্র আয় ও ব্যয়ের হিসাব নয়; এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও। তাই অর্থনৈতিক অভ্যাসের মূল কারণ ও প্রভাব বুঝতে পারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজ আমরা এমনই সাতটি সূক্ষ্ম অভ্যাস সম্পর্কে জানব, যা মানুষকে সত্যিকারের আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করতে বাধা দেয়।
১) আয়ের চেয়ে বেশি খরচ করা
অনেকেই না বুঝেই এমন জীবনযাপন করেন, যা তাদের আয়ের তুলনায় বেশি ব্যয়সাপেক্ষ। বিলাসবহুল জীবনযাপনের আকর্ষণ বা সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়ার মানসিকতা অনেক সময় মানুষকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচে প্ররোচিত করে।
উদাহরণস্বরূপ, নিয়মিত দামি রেস্তোরাঁয় খাওয়া, উচ্চমূল্যের গ্যাজেট কেনা বা বড় ঋণ নিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি কেনার মতো সিদ্ধান্ত আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ণ করে।
সত্যিকারের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নিজের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি।
২) চক্রবৃদ্ধি সুদের শক্তি অবহেলা করা
অল্প পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করে বেশি লাভ অর্জন সম্ভব – এই বিষয়টি অনেকেই বুঝতে পারেন না। চক্রবৃদ্ধি সুদের (Compound Interest) মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে ছোট ছোট বিনিয়োগও উল্লেখযোগ্য মূল্যে পরিণত হতে পারে।
বিনিয়োগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় অনেকেই সঞ্চিত অর্থকে অব্যবহৃত রেখে দেন, যা ভবিষ্যতে আর্থিক স্বাধীনতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
৩) অর্থ নিয়ে কথা বলতে না চাওয়া
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে অর্থ নিয়ে আলোচনা করা অস্বস্তিকর বলে মনে করা হয়। ফলে, অনেকেই ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক সমস্যা বা বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে চান না।
কিন্তু অর্থের ব্যাপারে খোলাখুলি আলোচনা করলে নতুন কৌশল শেখা যায়, অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া সম্ভব হয় এবং আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
৪) বাজেট না থাকা
বাজেট ছাড়া অর্থ ব্যয়ের ফলে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে না, যা ধীরে ধীরে ঋণের বোঝা বাড়িয়ে দেয়।
সত্যিকারের আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মাসিক বাজেট তৈরি করা এবং তা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
৫) আর্থিক ঝুঁকি নিতে ভয় পাওয়া
অনেক মানুষ বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে ভয় পান। ফলে, তারা শুধুমাত্র নিরাপদ সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকে অর্থ রেখে দেন, যা দীর্ঘমেয়াদে আশানুরূপ মুনাফা দেয় না।
স্মার্ট বিনিয়োগ মানে বুদ্ধিমানের মতো ঝুঁকি নেওয়া। শেয়ারবাজার, ব্যবসা, বা সম্পত্তি কেনার মতো বিনিয়োগ পরিকল্পনায় যুক্ত হলে ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য আর্থিক লাভ হতে পারে।
৬) নির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্য না থাকা
অর্থ সঞ্চয়ের উদ্দেশ্য স্পষ্ট না থাকলে অনেক সময় মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খরচ করে ফেলে।
অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা জরুরি। এটি হতে পারে – জরুরি সঞ্চয় গঠন, একটি বাড়ি কেনা, ব্যবসা শুরু করা, বা অবসরকালীন পরিকল্পনা।
৭) অর্থনৈতিক শিক্ষার অভাব
আর্থিক বিষয়ে সচেতনতা ও জ্ঞান না থাকলে ভুল বিনিয়োগ বা খরচের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
বিনিয়োগ, কর ব্যবস্থাপনা, সুদহার, ও মুদ্রাস্ফীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকলে মানুষ আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ে।
আর্থিক স্বাধীনতা শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের বিষয় নয়, বরং এটি সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলার ফল। ছোট ছোট সঠিক সিদ্ধান্ত ও নিয়মিত আর্থিক পরিকল্পনা একজন ব্যক্তিকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে।
অতএব, আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা, বিনিয়োগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া, এবং আর্থিক বিষয়ে শিক্ষিত হওয়া – এই তিনটি মূলনীতি মেনে চললে যে কেউ আর্থিক মুক্তির পথে এগিয়ে যেতে পারেন।
রিফাত