
ছবিঃ সংগৃহীত
অনেক বয়স্ক মানুষকে দেখে মনে হয় তারা সবসময় সজাগ, উদ্যমী এবং মানসিকভাবে চটপটে। তাদের দেখে অনেকেই ভাবেন, এর পেছনের রহস্য কী?
গবেষণা ও পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, তারা প্রতিদিন কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস চর্চা করেন, যা তাদের মস্তিষ্ককে সুস্থ ও সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে। আসুন, এমনই আটটি কার্যকর অভ্যাস সম্পর্কে জেনে নিই—
১. তারা কখনো শেখা থামান না
জীবনভর শেখার প্রবণতা বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। একবার এক ৭৬ বছর বয়সী ব্যক্তির সাথে দেখা হয়েছিল, যিনি অনলাইনে কোডিং শেখার কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। কারণ? তিনি নিজেকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, “বুদ্ধিবৃত্তিক বৃদ্ধি জন্ম থেকে শুরু হওয়া উচিত এবং মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকা উচিত।” নতুন কিছু শেখা মানসিক সুস্থতার জন্য ব্যায়ামের মতোই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, ধারাবাহিক শেখার অভ্যাস বয়সজনিত স্মৃতিশক্তির অবনতি রোধ করতে পারে।
২. তারা শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকেন
নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটেন বা হালকা ব্যায়াম করেন, তাদের স্মৃতিশক্তি ও মানসিক তীক্ষ্ণতা দীর্ঘদিন অটুট থাকে।
৩. তারা সামাজিকভাবে যুক্ত থাকেন
বয়স্কদের মধ্যে যারা সবসময় চটপটে থাকেন, তারা সাধারণত প্রাণবন্ত সামাজিক জীবনযাপন করেন। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, পরিবারের সাথে সময় কাটানো কিংবা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত থাকা—এসব কর্মকাণ্ড তাদের মস্তিষ্ককে সচল ও সক্রিয় রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত সামাজিক মিথস্ক্রিয়া স্মৃতিশক্তির অবনতি রোধ করে এবং মানসিক স্বচ্ছতা বাড়ায়।
৪. তারা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন
জীবনে চ্যালেঞ্জ থাকবেই, তবে সফল ব্যক্তিরা চাপকে ইতিবাচকভাবে মোকাবিলা করতে জানেন। অনেকে ধ্যান, প্রার্থনা, যোগব্যায়াম বা ডায়েরি লেখার মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি খুঁজে নেন। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. তারা অর্থবহ লক্ষ্য নির্ধারণ করেন
অবসর জীবনে সময় পার করা নয়, বরং নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ রাখে। নতুন ভাষা শেখা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করা, ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করা বা বই লেখা—এসব কাজ বয়স বাড়লেও মানসিকভাবে সজীব থাকতে সাহায্য করে।
৬. তারা সৃজনশীল কাজে যুক্ত থাকেন
চিত্রাঙ্কন, সংগীত, লেখা, বাগান করা কিংবা ফটোগ্রাফির মতো সৃজনশীল কর্মকাণ্ড বয়সজনিত মানসিক অবনতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সৃজনশীল কাজে নিয়মিত যুক্ত থাকেন, তারা দীর্ঘদিন মানসিকভাবে সক্রিয় থাকেন।
৭. তারা স্বাস্থ্যকর খাবার খান
একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। তাজা ফল, সবজি, স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন অলিভ অয়েল ও অ্যাভোকাডো), মাছ ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের মাত্রা কমিয়ে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
৮. তারা সবসময় কৌতূহলী ও খোলা মনের হন
যারা দীর্ঘদিন মানসিকভাবে তীক্ষ্ণ থাকেন, তারা সবসময় নতুন কিছুর প্রতি আগ্রহী থাকেন। নতুন প্রযুক্তি, আধুনিক ট্রেন্ড কিংবা নতুন দক্ষতা শেখার ব্যাপারে তারা ইতিবাচক মনোভাব রাখেন।
তাই বয়স বাড়লেও শেখার আগ্রহ বজায় রাখা, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা এবং সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করা আমাদের মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ রাখতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, জীবন কখনো থেমে থাকে না, শেখারও শেষ নেই!
ইমরান