ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

এই ৮টি শক্তিশালী অভ্যাস আপনাকে বিপদ মোকাবিলা করতে সহায্য করবে

প্রকাশিত: ২২:১১, ১২ মার্চ ২০২৫

এই ৮টি শক্তিশালী অভ্যাস আপনাকে বিপদ মোকাবিলা করতে সহায্য করবে

দুর্দশার মুখোমুখি হওয়া এমন একটি অভিজ্ঞতা, যা আমরা সবাই একদিন না একদিন অনুভব করি। তবে, সমস্যাটি কতটা কঠিন তা নয়, বরং এটি আমরা কিভাবে তার মোকাবিলা করি তা আসল কথা।
কিছু মানুষ দুঃখের সামনে এসে নীচে চলে যায়, আবার কিছু মানুষ দুর্দশার মধ্যে শক্তি খুঁজে পায়। তারা শুধু টিকে থাকে না, বরং জীবনকে শক্তি ও আশায় পূর্ণ করে।এই দৃঢ় মনোভাবসম্পন্ন মানুষগুলো কিছু অভ্যাস ধারণ করে, যেগুলো তাদের জীবনকে চ্যালেঞ্জের পরিবর্তে বিকাশের সুযোগে পরিণত করতে সাহায্য করে।

এই লেখায়, আমরা আপনাকে এমন ৮টি অভ্যাস জানাবো, যা দুর্দশায় শক্তি খুঁজে পাওয়া মানুষদের মধ্যে সাধারণভাবে দেখা যায়। এটি কোনোভাবেই কঠিন সময় এড়ানোর ব্যাপার নয়, বরং কিভাবে সাহস এবং শ্রদ্ধা নিয়ে সেই কঠিন সময়গুলো অতিক্রম করা যায়, তা শেখা।


১) পরিবর্তনকে গ্রহণ করা
যারা দুর্দশায় শক্তি খুঁজে পায়, তাদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো তারা পরিবর্তনকে স্বীকার করে।
জীবন অনিশ্চিত, আর দুর্দশা প্রায়ই আমাদের অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন নিয়ে আসে। পরিবর্তন আসতে থাকলে, অনেকেই প্রতিরোধ করতে চায়, কিন্তু যারা কঠিন সময়ে এগিয়ে যেতে পারে তারা জানে, পরিবর্তনকে ঠেকানো সম্ভব নয়।
তারা প্রবাহের বিপরীতে নয়, বরং তার সাথে সাঁতার কাটতে শিখে। পরিবর্তনকে তারা একটা হুমকি হিসেবে দেখে না, বরং একটি সুযোগ হিসেবে।
তারা মানিয়ে নেয়, তারা বদলায়, তারা আরও শক্তিশালী হয়। পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করার এই অভ্যাসই তাদের দুর্দশার মধ্যে শক্তি খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
তবে মনে রাখবেন, পরিবর্তনকে গ্রহণ করা মানে এই নয় যে আপনাকে প্রতিটি পরিবর্তন পছন্দ করতে হবে। এর মানে হলো পরিস্থিতি কী, তা মেনে নিয়ে সেটা সেরাটা কিভাবে করা যায়, তা ভাবা।


২) কৃতজ্ঞতা চর্চা করা
আরেকটি অভ্যাস যা  দুর্দশায় শক্তি খুঁজে পাওয়া মানুষের মধ্যে দেখা যায়, তা হলো কৃতজ্ঞতা চর্চা।
এক সময়ে আমি এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম, যেখানে সবকিছু যেন ভুল হচ্ছিল। কোনো আলো দেখতে পাচ্ছিলাম না।

তখন এক বন্ধু আমাকে কৃতজ্ঞতা চর্চার কথা বলেছিল। আমি প্রতিদিন তিনটি বিষয় লিখে রাখতাম, যার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কিছু দিন, ছোট্ট ব্যাপারও যেমন ভালো খাবার, স্নিগ্ধ রাতের ঘুম ছিল।
এই অভ্যাসের মাধ্যমে, আমি বুঝতে পারলাম যে কিভাবে দুঃখের মধ্যে থেকেও ছোট ছোট সুখ খুঁজে বের করা যায়। এটা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিল, কঠিন সময়েও ভালো কিছু আছে, সেটা খুঁজে বের করা আমাদের উপর নির্ভর করে।


৩) বৃদ্ধির মনোভাব তৈরি করা
যারা দুর্দশায় শক্তি খুঁজে পায়, তারা প্রায়ই একটি বৃদ্ধির মনোভাব ধারণ করে। এটি এমন একটি চিন্তাধারা, যা মনোবিজ্ঞানী ক্যারল ডুয়েক প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
যারা বৃদ্ধির মনোভাব ধারণ করে, তারা বিশ্বাস করে যে তাদের দক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তা চেষ্টা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বাড়ানো যায়। তারা চ্যালেঞ্জগুলোকে বাধা হিসেবে দেখে না, বরং শেখার এবং উন্নতির সুযোগ হিসেবে দেখে।
তারা যখন দুর্দশায় পড়ে, তখন তারা “কেন আমার সাথে এটা ঘটলো?” এমন প্রশ্ন করে না। তারা বরং ভাবে, “এটা থেকে আমি কী শিখতে পারি?” এই চিন্তাধারা তাদের দুর্দশাকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ দেয়।


৪) যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাতে মনোযোগ দেয়
দুর্দশার সময়, আমাদের অনেক সময় অসহায় এবং বিপর্যস্ত মনে হয়। কিন্তু যারা কঠিন সময়ে শক্তি খুঁজে পায়, তারা জানে যে কি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাতেই মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তারা বুঝে যে তারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা তাদের হাতে। তারা তাদের শক্তি ব্যয় করে না, এমন কিছু নিয়ে চিন্তা করতে যা তারা পরিবর্তন করতে পারবে না। বরং তারা নিজেদের কাজ এবং মনোভাবের উপর মনোযোগ দেয়।
এই অভ্যাস তাদের উদ্বেগ কমাতে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। এটি তাদের একটি নতুন দৃষ্টিকোণ দেয় এবং শক্তিশালী করে।


৫) সহায়ক সম্পর্কগুলির উপর নির্ভর করা
 দুর্দশা একা মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে। যারা দুর্দশায় শক্তি খুঁজে পায় তারা জানে, একা কিছু করা সম্ভব নয়, তাই তাদের পাশে সহায়ক মানুষ থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
 তারা সাহায্য চাওয়া এবং বন্ধু বা পরিবারের সাথে তাদের অনুভূতি শেয়ার করতে ভয় পায় না। তারা জানে, সাহায্য চাইতে কোনও লজ্জা নেই, এবং সবাই সময়ে সময়ে সহায়তা চায়।
 সহায়ক সম্পর্ক তাদেরকে একাকিত্বের অনুভূতি থেকে মুক্তি দেয় এবং তাদের মনে করিয়ে দেয় যে, তারা একা নয়। এটি তাদের সাহস জোগায় এবং দুর্দশাকে মোকাবিলায় শক্তি দেয়।


৬) আত্ম-যত্ন চর্চা করা
আত্ম-যত্ন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস, যা দুর্দশায় শক্তি খুঁজে পাওয়া মানুষদের কাছে অপরিহার্য।দুর্দশা মোকাবিলা করতে হলে প্রথমে নিজের যত্ন নিতে হবে।যথেষ্ট বিশ্রাম, স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম  এবং নিজেকে সময় দিতে হবে।দুর্দশাকে সহজে সামলাতেনিজের যত্ন নেওয়া কোনো রকম আত্মকেন্দ্রিকতা নয়, বরং এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।


৭) তারা আশাবাদী থাকে
আশা একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যখন আমরা দুর্দশার সম্মুখীন হই। যারা শক্তি খুঁজে পায়, তারা আশা রাখতে জানে, এমনকি যখন পরিস্থিতি মনে হয় অন্ধকারে ঢাকা।তারা জানে, দুর্দশা চিরকাল স্থায়ী নয় এবং ভালো দিন আসবে। তারা বিশ্বাস রাখে, তারা যে সমস্যার সম্মুখীন তা কাটিয়ে উঠতে পারবে।


৮) তারা এগিয়ে চলতে থাকে
শেষ পর্যন্ত, যারা দুর্দশায় শক্তি খুঁজে পায়, তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস হলো তারা কখনো থেমে থাকে না। যত কঠিনই হোক, তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে থাকে। তারা জানে, পুরোপুরি পারফেক্ট হওয়ার চেয়ে, ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়াই মূল কথা।এই অবিচল অগ্রগতি তাদেরকে দুর্দশা পার করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়।

যখন আমরা দুর্দশার মুখোমুখি হই, তখন আমাদের সত্যিকারের শক্তি আসলে আমাদের ভিতরের মনোভাব থেকে আসে।হেলেন কেলার একবার বলেছিলেন, “যদিও পৃথিবী কষ্টে পূর্ণ, তবুও এটি সেই কষ্টকে কাটিয়ে ওঠারও সাক্ষী।” যারা দুর্দশায় শক্তি খুঁজে পায়, তারা এই ধারণা ধারণ করে, যে প্রতিটি কঠিন সময় আসলে আমাদের আরো শক্তিশালী করে।
এটা কেবল দুর্দশা নয়, বরং কিভাবে আমরা সেটাকে পার করে বেরিয়ে আসি, যা আমাদের আসল শক্তি তৈরি করে।


সূত্র:https://tinyurl.com/jsu6845d
 

আফরোজা

×