
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্বাস হল একটি সুস্থ ও শক্তিশালী সম্পর্কের মূলভিত্তি। এটি আমাদের নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং মানসিকভাবে সংযুক্ত অনুভব করায়। তবে, যখন বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যায়, তখন এটি আত্মরক্ষার প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে, যা ঘনিষ্ঠতার পরিবর্তে দূরত্ব সৃষ্টি করে।
২০২৪ সালে Annual Review of Psychology-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপদ অনুভব করার একটি মৌলিক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু, আত্মরক্ষার চেষ্টায় আমরা অনেক সময় বিশ্বাস ও নিরাপত্তার অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হই। এতে দেখা যায়, যারা সহজে বিশ্বাস করতে পারেন না, তারা তাদের সঙ্গীর ইতিবাচক সংকেতগুলোও ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন।
গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন, "যাদের ব্যক্তিত্বে অবিশ্বাসের প্রবণতা বেশি, তারা সাধারণত সম্পর্কের ঝুঁকির দিকগুলোর প্রতি বেশি মনোযোগ দেন। তারা নিরাপত্তাহীনতার সংকেতগুলোকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেন এবং দ্রুত আত্মরক্ষামূলক আচরণ করেন।"
আপনার যদি আপনার সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস নিয়ে দ্বিধা থাকে, তাহলে হয়তো অজান্তেই এমন কিছু আচরণ করছেন যা আপনাকে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা ও নিরাপত্তার অনুভূতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। গবেষণাটি থেকে পাওয়া ৩টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ জেনে নিন—
১. আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে দূরত্ব সৃষ্টি করেন
বিশ্বাসের অভাবের অন্যতম সাধারণ প্রতিক্রিয়া হল সঙ্গীর থেকে দূরত্ব তৈরি করা। যদি আপনি মনে করেন যে আপনার সঙ্গী পুরোপুরি সহানুভূতিশীল বা নির্ভরযোগ্য নন—যেমন কখনও কখনও উদাসীন, সমালোচনামূলক বা অসঙ্গত আচরণ করেন—তাহলে হয়তো নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে অজান্তেই দূরত্ব তৈরি করছেন।
পরিত্যক্ত বা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় আপনাকে মানসিকভাবে দূরে ঠেলে দিতে পারে। ফলে, কঠিন সময়ে সঙ্গীর কাছে সাহায্য চাওয়ার পরিবর্তে আপনি হয়তো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করছেন বা কাজ, শখ কিংবা কাল্পনিক জগতে (যেমন সেলিব্রিটিদের অনুসরণ করা বা ফিকশনাল কনটেন্টে মগ্ন থাকা) নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন।
গবেষকরা বলেছেন, "যদি কেউ সম্পর্কের বাইরের অভিজ্ঞতায় প্রত্যাখ্যাত বা অবহেলিত বোধ করে, তবে তারা রোমান্টিক সম্পর্কে নিরাপদ অনুভব করতে কম সক্ষম হয় এবং আত্মরক্ষামূলক আচরণ করে।"
এই অভ্যাস সাময়িকভাবে নিরাপত্তা দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা নষ্ট করতে পারে। তাই, নিজেকে প্রশ্ন করুন—আপনার সঙ্গী কি কখনো আপনাকে সমর্থন করেন? ছোট ছোট মুহূর্তে vulnerability প্রকাশ করা—যেমন নিজের অনুভূতি শেয়ার করা বা সান্ত্বনা চাওয়া—বিশ্বাস পুনর্গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে।
২. আপনি সম্পর্কের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখার চেষ্টা করেন
গবেষণা বলছে, যখন মানুষ মনে করে যে তাদের সঙ্গীর তুলনায় তাদের ক্ষমতা কম, তখন তারা নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করে। এর ফলে, কেউ কেউ সঙ্গীর থেকে দূরত্ব বজায় রাখে, আবার কেউ কেউ নিজের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে আপস করে সঙ্গীকে খুশি রাখার চেষ্টা করে, যাতে সম্পর্কের উপর তাদের প্রভাব বজায় থাকে।
বিশ্বাস কম থাকলে কেউ কেউ সম্পর্ককে নিরাপদ করতে তাদের সঙ্গীর উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা করে। যেমন—
- তাদের বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো নিরুৎসাহিত করা,
- তাদের নিজস্ব চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য অপরাধবোধ তৈরি করা,
- বা এই ধারণা দেওয়া যে, তারা আপনাকে ছাড়া একা টিকে থাকতে পারবে না।
এটি মূলত এক ধরনের ভয় থেকে জন্ম নেয়—যদি সঙ্গী সম্পর্কের বাইরে অন্যদের কাছ থেকে আবেগিক সমর্থন পান, তবে হয়তো তাদের প্রতিশ্রুতি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তবে, সম্পর্ক কখনো নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিরাপদ হয় না; এটি তখনই নিরাপদ হয়, যখন উভয়েই নিজেদের মূল্যবান ও নিরাপদ অনুভব করেন।
আপনি যদি লক্ষ্য করেন যে, আপনার আচরণ সঙ্গীর স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করছে, তাহলে ভাবার চেষ্টা করুন—এই আচরণগুলোর পেছনে আসল কারণ কী? সুস্থ সম্পর্ক গঠনের জন্য খোলামেলা যোগাযোগ ও পারস্পরিক সম্মানের প্রয়োজন।
৩. আপনি সন্দেহজনক আচরণকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন
বিশ্বাসের সমস্যা থাকলে মানুষ খুব সহজেই সামান্য বা দ্ব্যর্থক আচরণকেও নেতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। যেমন—
- আপনার সঙ্গী যদি একদিন মনমরা বা চিন্তিত থাকে, আপনি ধরে নিতে পারেন যে এটি আপনার প্রতি বিরক্তির ইঙ্গিত, যদিও তাদের মনোযোগ অন্য কোনো সমস্যায় থাকতে পারে।
- তারা যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে, আপনি ভাবতে পারেন তারা আপনাকে যথেষ্ট ভালোবাসে না, যদিও বাস্তবে এটি ক্লান্তি বা অন্য কোনো কারণেও হতে পারে।
এটি এক ধরণের "Insecurity Cycle" তৈরি করে। যত বেশি আপনি সন্দেহ করেন, তত বেশি আত্মরক্ষামূলক বা দূরত্ব সৃষ্টিকারী আচরণ করেন, যা সঙ্গীকেও মানসিক চাপে ফেলে দেয়।
গবেষকদের মতে, "যারা কম বিশ্বাসী, তারা তাদের সঙ্গীর সামান্য নেতিবাচক আচরণকে বড় করে দেখে এবং ভালো দিকগুলো উপেক্ষা করে।"
এমনকি, যাদের আত্মবিশ্বাস কম, তারা নিজেদের মূল্য কমিয়ে দেখে এবং মনে করে যে তাদের সঙ্গীও হয়তো তাদের যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় না।
এর পরিবর্তে, আপনার সন্দেহের পিছনের কারণ সম্পর্কে চিন্তা করুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন—"এই আচরণের অন্য কোনো ব্যাখ্যা থাকতে পারে কি?" আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সরাসরি যোগাযোগ আপনার ভুল বোঝাবুঝি কমাতে সাহায্য করবে।
ইমরান