
ছবি: সংগৃহীত
শিশুরা অনেক সময় নিজেদের নিকট আত্মীয় থেকেই যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, এবং এর পেছনে একাধিক মানসিক, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক কারণ রয়েছে। নিম্নলিখিত কয়েকটি কারণ বিশ্লেষণ করা হলো:
বিশ্বাস এবং নিরাপত্তার অনুভূতি:
শিশুরা সাধারণত তাদের পরিবার ও নিকট আত্মীয়দের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখে। বাবা-মা, চাচা-চাচী, মামা-মামী, বা অন্য নিকট আত্মীয়রা তাদের কাছে নিরাপত্তার প্রতীক। এমন বিশ্বাসের কারণে শিশুরা সহজে আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে, যা অপরাধী ব্যক্তির জন্য সুযোগ তৈরি করে।
পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে আস্থাহীনতা বা অবহেলা:
অনেক ক্ষেত্রে পরিবারে কোনো সদস্যের পক্ষ থেকে শারীরিক বা মানসিক অবহেলা থাকতে পারে, যার ফলে শিশুরা তাদের পরিবার বা নিকট আত্মীয়দের কাছ থেকে সঠিক নিরাপত্তা বা স্নেহ পায় না। এই ধরনের পরিস্থিতি শিশুদের একা এবং অসহায় অনুভূতিতে ফেলতে পারে, যা যৌন নিপীড়নের জন্য এক ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করে।
প্রতিবন্ধকতা বা সামাজিক নিষেধাজ্ঞা:
অনেক পরিবারে যৌন নিপীড়নের বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করা হয় না, এবং এর ফলে শিশুরা তাদের অভিজ্ঞতা অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারে না। এটি তাদের আরও বেশি অসহায় এবং নিপীড়কের প্রতি নির্ভরশীল করে তোলে।
আত্মীয়দের পক্ষ থেকে ম্যানুপুলেটিভ আচরণ:
অনেক সময় আত্মীয়স্বজন বিশেষ করে শারীরিকভাবে শক্তিশালী বা মানসিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা শিশুর প্রতি তাদের ক্ষমতা বা প্রভাব ব্যবহার করে। তারা শিশুদের বুঝিয়ে বা ভয় দেখিয়ে, কখনো কখনো শারীরিক বা মানসিক চাপ দিয়ে, যৌন নিপীড়ন করতে পারে।
শিশুর অজ্ঞতা এবং পারিবারিক শিক্ষা:
শিশুরা প্রায়শই যৌন নির্যাতনের প্রকৃতি বা এর ক্ষতিকর পরিণতির ব্যাপারে সচেতন নয়। বিশেষ করে, যদি পরিবারের মধ্যে সঠিক যৌন শিক্ষা না দেওয়া হয়, তাহলে শিশুদের পক্ষে বুঝতে অসুবিধা হয় যে তারা শিকার হচ্ছে কিনা, এবং এই কারণে তারা নির্যাতনের শিকার হয়ে এটি সম্পর্কে কাউকে জানাতে পারে না।
পারিবারিক সহিংসতা বা মাদকাসক্তি:
কিছু পরিবারে মাদকাসক্তি বা শারীরিক ও মানসিক সহিংসতা থাকে, যা ব্যক্তির আচরণকে অস্থির এবং অসুস্থ করে তোলে। এই ধরনের পরিবেশে, শিশুরা প্রায়ই নিপীড়নের শিকার হয়, বিশেষত যখন অপরাধী ব্যক্তি তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শক্তি বা আস্থা ব্যবহার করে।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংস্কৃতি:
কিছু সমাজ বা সংস্কৃতিতে পুরুষ শাসিত মনোভাব এবং নারীদের বা শিশুদের অধিকারকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই ধরনের সামাজিক পরিবেশে, যৌন নিপীড়নকে অনেক সময় একটি "গোপন" বিষয় হিসেবে দেখা হয়, এবং শিশুরা তাদের অভিযোগ প্রকাশ করতে বাধাগ্রস্ত হয়।
এই সমস্ত কারণের সমন্বয়ে, শিশুরা তাদের পরিবারের মধ্যে নিজেদের নিরাপত্তাহীনতা বা নিপীড়ন নিয়ে কিছু বলতে পারে না। এটি একটি জটিল সামাজিক সমস্যা, এবং এর বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি, সঠিক শিক্ষা এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এটি মোকাবিলা করা যেতে পারে।
ফারুক