ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১

সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তির ৩টি শক্তিশালী অভ্যাস

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ১০ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২৩:৩১, ১০ মার্চ ২০২৫

সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তির ৩টি শক্তিশালী অভ্যাস

সংগৃহীত

বিশ্বের এক বিলিয়নেরও বেশি খ্রিস্টানের জন্য, অ্যাশ বুধবার লেন্টের আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে চিহ্নিত হয়। এটি ৪০ দিনের একটি বিশেষ সময়, যেখানে প্রার্থনা, উপবাস এবং দানশীলতার মাধ্যমে ইস্টারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এই মৌসুমের মূল লক্ষ্য হল নিজের জীবনকে পর্যালোচনা করা এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। আধ্যাত্মিক নবজাগরণ ও ক্ষমাশীলতা এই সময়ের প্রধান অনুষঙ্গ।


লেন্ট শুরু হওয়ার সাথে সাথে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনা, উপবাস এবং দানশীলতার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতির চর্চা করেন। কিন্তু আধুনিক সময়ে অনেকেই এই মৌসুমকে শুধুমাত্র কিছু ত্যাগ করার সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন। তবে সত্যিকারের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য, আমাদের কিছু ইতিবাচক অভ্যাস গ্রহণ করা উচিত।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপবাস, প্রার্থনা বা ধ্যান এবং দান—এই তিনটি অভ্যাস কেবল ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নয়, আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যেও গভীর প্রভাব ফেলে। এই অভ্যাসগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে এবং এগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করতে পারে।


১. উপবাস: শরীর ও মনের শুদ্ধিকরণ
উপবাস শুধু ধর্মীয় অভ্যাস নয়, এটি আমাদের শরীর এবং মনের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (অনিয়মিত উপবাস) শারীরিক বিপাকক্রিয়া উন্নত করতে, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে এবং দীর্ঘায়ু বাড়াতে সহায়ক।
২০২৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত উপবাস মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। আরও একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, রমজান উপবাস পালনকারী ৭৭০ জনের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে। তাদের উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা কমে গিয়েছিল, এবং আনন্দের অনুভূতি বৃদ্ধি পেয়েছিল।এটি শুধু ধর্মীয় কারণে নয়, স্বাস্থ্যগত কারণেও উপকারী। উপবাসের মাধ্যমে শরীর বিষাক্ত উপাদান থেকে মুক্ত হতে পারে এবং মনের শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।


২. প্রার্থনা বা ধ্যান: মানসিক প্রশান্তির চাবিকাঠি
প্রার্থনা এবং ধ্যান হাজার বছর ধরে মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। এই অভ্যাসগুলি শুধু আধ্যাত্মিক উন্নতি নয়, মানসিক প্রশান্তি এবং মানসিক চাপ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দলগত প্রার্থনা মানুষের আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। অন্যদিকে, আধ্যাত্মিক ধ্যান সাধারণ ধ্যানের তুলনায় উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ কমাতে আরও কার্যকর।
ধর্মীয় কিংবা অধর্মীয় যেকোনো পদ্ধতিতেই ধ্যান বা প্রার্থনা করা যেতে পারে। এটি আমাদের মনকে প্রশান্ত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় এমনও দেখা গেছে, আধ্যাত্মিক ধ্যানের ফলে মাইগ্রেনের রোগীরা অধিক সুবিধা পেয়েছেন।


৩. দানশীলতা: সুখ ও মানবতার সংযোগ
দানশীলতা শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, আমাদের শারীরিক এবং মানসিক সুখের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন আমরা দান করি, তখন আমাদের মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সেন্টার’ সক্রিয় হয়, যা আমাদের সুখী অনুভূতি দেয়।
দানশীলতার ফলে শুধু অন্যদের উপকার হয় না, এটি দাতার মানসিক অবস্থাও উন্নত করে। যারা নিয়মিত দান করেন, তারা বিষণ্নতা কম অনুভব করেন এবং তাদের আত্মসম্মানবোধ বৃদ্ধি পায়। এমনকি যারা নিজেদের জন্য না ব্যয় করে অন্যদের জন্য ব্যয় করেন, তারা বেশি সুখী বোধ করেন।দানশীলতা মানবিকতার একটি অপরিহার্য অংশ। এটি কেবল অর্থ দিয়েই নয়, সময় এবং শ্রম দিয়েও করা যেতে পারে। দানের মাধ্যমে আমরা সমাজে সহানুভূতি, ভালোবাসা এবং সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পারি।


আপনি ধর্মীয় হন বা না হন, উপবাস, প্রার্থনা বা ধ্যান এবং দান—এই তিনটি অভ্যাস আপনার মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে। এগুলো আপনাকে আরো আত্মবিশ্বাসী, শান্ত এবং পরিপূর্ণ জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে।


সূত্র:https://tinyurl.com/39k49zdk

আফরোজা

×