ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১

হাঁটার সময় যে ১০টি ভুল কখনোই করবেন না

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ১০ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৪:৫৯, ১০ মার্চ ২০২৫

হাঁটার সময় যে ১০টি ভুল কখনোই করবেন না

ছবি: সংগৃহীত

 

হাঁটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি শরীরকে সুস্থ রাখার অন্যতম সহজ ও কার্যকর উপায়। তবে জানেন কি, সামান্য কিছু ভুলের কারণে হাঁটা থেকে কাঙ্ক্ষিত উপকার পাওয়া কঠিন হয়ে যায়? অনেকেই না জেনে এমন কিছু অভ্যাস গড়ে তোলেন, যা শরীরে ব্যথা, আঘাত বা দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই সাধারণ ভুলগুলো কীভাবে আমাদের ক্ষতি করে এবং কীভাবে এড়িয়ে চলা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত জানুন।

খুব বেশি নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটা

নিয়মিত নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটলে ঘাড়ের উপর বাড়তি চাপ পড়ে, যা ঘাড় ও কাঁধের ব্যথার কারণ হতে পারে। এটি মেরুদণ্ডের সঠিক অ্যালাইনমেন্ট নষ্ট করে এবং দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ভঙ্গিমার ওপর প্রভাব ফেলে। নিচের দিকে বেশি তাকিয়ে হাঁটলে ভারসাম্যও কমে যেতে পারে, যা হোঁচট খাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

বড় বড় পা ফেলে হাঁটা

অনেকে মনে করেন, লম্বা পদক্ষেপ নিলে দ্রুত হাঁটা সম্ভব, কিন্তু এটি হাঁটুর, কোমরের এবং গোড়ালির উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করে। এতে হাঁটার গতি বাড়ার পরিবর্তে শরীরে ব্যথা হতে পারে এবং হাঁটার গতি কমে যেতে পারে। হাঁটার সময় স্বাভাবিক এবং ছন্দময় পদক্ষেপ নেওয়াই সবচেয়ে ভালো।

হাত নাড়ানোর অভ্যাস না রাখা

হাত নাড়ানো আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক ছন্দ বজায় রাখে, যা হাঁটাকে আরও কার্যকর করে তোলে। যদি হাত নাড়িয়ে হাঁটা না হয়, তাহলে ভারসাম্য কমে যায়, ক্যালোরি খরচ কম হয় এবং হাঁটার কার্যকারিতা কমে যায়। হাত স্বাভাবিকভাবে সামান্য বাঁকানো ও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে দোলানো উচিত, যাতে শরীরের শক্তি ব্যালেন্স ঠিক থাকে।

সঠিক ভঙ্গিমা বজায় না রাখা

পিঠ বাঁকা করে বা সামনে ঝুঁকে হাঁটলে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে পিঠ ও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। হাঁটার সময় শরীর সোজা রাখতে হবে, কাঁধ ঢিলা রাখতে হবে এবং পেট সামান্য ভেতরের দিকে টেনে রাখতে হবে।

ভুল জুতো পরা

সঠিক সাপোর্ট না থাকা জুতো পরে হাঁটলে পায়ের গঠন নষ্ট হতে পারে, যা হাঁটুর ব্যথা, গোড়ালির ব্যথা এবং দীর্ঘমেয়াদে জয়েন্টের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সঠিকভাবে কুশনযুক্ত ও আরামদায়ক জুতো ব্যবহার করা উচিত, যা হাঁটার সময় সাপোর্ট দেয় এবং শরীরে চাপ কমায়।

ব্যথা উপেক্ষা করা

পায়ের ব্যথা বা হাঁটুর সমস্যা সাধারণ মনে হলেও, এটি দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর আঘাতের কারণ হতে পারে। ব্যথা আমাদের শরীরের একটি সতর্কবার্তা, যা উপেক্ষা করলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। হাঁটার সময় যদি কোনো অস্বস্তি অনুভূত হয়, তবে বিশ্রাম নেওয়া এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ওয়ার্ম-আপ এবং কুল-ডাউন বাদ দেওয়া

অনেকেই দ্রুত হাঁটা শুরু করে দেন, কিন্তু ওয়ার্ম-আপ না করলে পেশির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং আঘাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। একইভাবে, হাঁটা শেষ করেই বসে পড়লে পেশি শক্ত হয়ে যেতে পারে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে। হাঁটার আগে হালকা স্ট্রেচিং এবং ধীরগতিতে শুরু করা উচিত এবং হাঁটার পর কিছুক্ষণ ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে বিশ্রাম নেওয়া উচিত।

হাঁটার সময় অতিরিক্ত মনোযোগ বিভ্রান্ত করা

ফোন স্ক্রিনে তাকিয়ে হাঁটা বা অন্যকিছুতে মনোযোগ দেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। এতে রাস্তার খোঁচাখুঁচি, চলন্ত যানবাহন বা সামনে থাকা অন্য ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। হাঁটার সময় পরিবেশের প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত, যাতে নিরাপদে চলাফেরা করা যায়।

পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া

অনেকেই হাঁটার সময় পানিশূন্যতার শিকার হন, বিশেষ করে গরমের দিনে। শরীর পর্যাপ্ত পানি না পেলে পেশিতে টান ধরা, ক্লান্তি এবং মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিতে পারে। হাঁটার সময় বা পরবর্তী সময়ে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি, যাতে শরীর সুস্থ থাকে এবং শক্তির ঘাটতি না হয়।

অতিরিক্ত হাঁটা বা বিশ্রামের অভাব

হাঁটা স্বাস্থ্যকর হলেও অতিরিক্ত হাঁটা শরীরে ক্ষতির কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত হাঁটার ফলে জয়েন্টে চাপ পড়ে, পায়ের পেশি ক্লান্ত হয়ে যায় এবং হাঁটুর উপর বাড়তি স্ট্রেস পড়ে। ধীরে ধীরে হাঁটার সময় ও গতি বাড়ানো উচিত, যাতে শরীর ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং আঘাতের ঝুঁকি না থাকে।

এই সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চললে হাঁটার উপকারিতা আরও ভালোভাবে পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত সঠিক ভঙ্গিমায় ও উপযুক্ত জুতো পরে হাঁটা, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং ব্যথা হলে বিশ্রাম নেওয়া শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।

কানন

×