
ছবিঃ সংগৃহীত
সময় যত গড়ায়, অনেকেই উপলব্ধি করেন যে প্রকৃত সুখ কোনো বড় অর্জনের মধ্যে নয়, বরং দৈনন্দিন ছোট ছোট অভ্যাসের মাধ্যমেই আসে। বিশেষ করে রাতের সময়ের কিছু অভ্যাস মানুষকে আরও প্রশান্ত ও ইতিবাচক করে তুলতে পারে। গবেষণা বলছে, যে ব্যক্তিরা বয়সের সাথে আরও সুখী হয়ে ওঠেন, তাদের কিছু নির্দিষ্ট রাতের রুটিন থাকে যা পরের দিনের জন্য ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তোলে।
সুতরাং, যদি আপনি আপনার রাতের সময়টাকে আরও অর্থবহ করতে চান এবং জীবনকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে চান, তাহলে এই পাঁচটি অভ্যাস আপনার জন্য উপকারী হতে পারে।
১) তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন
দিনের শেষবেলায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা সুখী মানুষের অন্যতম সাধারণ অভ্যাস। এটি মানসিক অবস্থাকে ইতিবাচক দিকে পরিবর্তন করে এবং উদ্বেগ কমিয়ে আনে।
হার্ভার্ড হেলথের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, "কৃতজ্ঞতা মানুষের ইতিবাচক আবেগকে বাড়ায়, ভালো অভিজ্ঞতাগুলো উপভোগ করতে সাহায্য করে, স্বাস্থ্য উন্নত করে, প্রতিকূলতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখায় এবং সম্পর্ককে দৃঢ় করে।"
এজন্য কেউ ডায়েরিতে তিনটি কৃতজ্ঞতার বিষয় লিখে রাখেন, কেউ প্রিয়জনকে ধন্যবাদ জানান, আবার কেউ নীরবে দিনটির ভালো মুহূর্তগুলোর কথা স্মরণ করেন। যেভাবেই হোক, এই ছোট্ট অভ্যাসটি মস্তিষ্ককে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রশিক্ষিত করে, যা শান্তিপূর্ণ ঘুম ও সুন্দর সকালে সাহায্য করে।
২) তারা প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ করেন
অর্থ বা পেশাগত সাফল্যের চেয়ে সুস্থ সম্পর্কই দীর্ঘমেয়াদি সুখের প্রধান নিয়ামক বলে প্রমাণিত হয়েছে। হার্ভার্ডের একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় বলা হয়েছে, "ভালো সম্পর্ক আমাদের সুখী ও সুস্থ রাখে।"
এ কারণে যারা বয়সের সাথে সুখী হন, তারা রাতের সময়টায় পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান। এটি হতে পারে একটি ছোট ফোনকল, রাতের খাবারের টেবিলে আন্তরিক আলোচনা, বা কেবল একটি বার্তা পাঠানো। সম্পর্কের গভীরতা ও সংযোগ বাড়ালে মানসিক প্রশান্তি আসে এবং একাকীত্ব দূর হয়।
৩) তারা রাতে প্রযুক্তি থেকে বিরতি নেন
স্মার্টফোন ও প্রযুক্তি আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠলেও, রাতে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম মানসিক চাপ বাড়াতে পারে।
বয়সের সাথে যারা সুখী হন, তারা সাধারণত ঘুমের আগে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ডিজিটাল ডিটক্স করেন। কেউ বই পড়েন, কেউ ধ্যান করেন, আবার কেউ পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এতে মানসিক চাপ কমে, ঘুমের মান ভালো হয় এবং মস্তিষ্কের অতিরিক্ত চাপ হ্রাস পায়।
৪) তারা রাতে হাঁটতে যান
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১২০ মিনিট প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকলে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধি পায়।
যারা বয়সের সাথে আরও সুখী হন, তারা প্রায়শই সন্ধ্যায় বা রাতে হাঁটতে যান। এটি হতে পারে পার্কে, পাশের রাস্তায়, বা নদীর ধারে। হালকা ব্যায়াম ও প্রকৃতির পরিবেশ মনকে প্রশান্ত করে, দুশ্চিন্তা কমায় এবং ঘুমের গুণগত মান বাড়ায়।
৫) তারা পরবর্তী দিনের জন্য ছোট ছোট আনন্দ পরিকল্পনা করেন
সুখী মানুষদের আরেকটি সাধারণ অভ্যাস হলো পরবর্তী দিনের জন্য কিছু আনন্দদায়ক পরিকল্পনা করা। এটি হতে পারে সকালের কফি, একটি প্রিয় বইয়ের পরবর্তী অধ্যায় পড়া, কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিকল্পনা।
বড় কোনো ভ্রমণ বা অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় না থেকে, তারা প্রতিদিনের ছোট ছোট আনন্দকে গুরুত্ব দেন। এভাবে আগামী দিনের জন্য আশাবাদী থাকা যায় এবং রাতের সময়টিও ইতিবাচকভাবে কাটানো সম্ভব হয়।
সুখী জীবন কোনো বড় ঘটনা বা মোড় নেওয়া পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে না; বরং প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই এটি গড়ে তোলে।
যদি আমরা আমাদের রাতের সময়কে পরিকল্পিত ও অর্থবহ করি, তবে এটি আমাদের শুধু রাত নয়, বরং পরবর্তী সকাল, সপ্তাহ এবং সার্বিক জীবনের মান উন্নত করতে সহায়তা করবে। তাই এই অভ্যাসগুলো অনুসরণ করে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারেন, আর দেখবেন ধীরে ধীরে সুখবোধ বাড়ছে।
রিফাত