
ছবিঃ সংগৃহীত
নিজেকে শান্ত, দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন করা অনেকেরই অভ্যাস। হয়তো তিনি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন, বাহু গুটিয়ে রেখেছেন, মাঝে মাঝে হালকা হাসছেন। তার কণ্ঠস্বর স্থির, কথাবার্তা মেপে বলছেন—সব মিলিয়ে তিনি যেন একদম নির্ভার।
কিন্তু সত্যিই কি তিনি এতটা স্বচ্ছন্দ?
অনেক সময়, যারা সবচেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হয়, তাদের ভেতরেই লুকিয়ে থাকে এক অদৃশ্য নার্ভাসনেস। তারা এটিকে ঢাকতে যতই চেষ্টা করুক না কেন, শরীরের ছোট ছোট সংকেত কিন্তু সত্যিটা ফাঁস করে দেয়।
চলুন, জেনে নিই এমন ৮টি সূক্ষ্ম শরীরী ভাষার লক্ষণ, যা দেখলে বুঝতে পারবেন—কেউ হয়তো ভিতরে ভিতরে নার্ভাস, কিন্তু বাইরে থেকে আত্মবিশ্বাসী দেখানোর চেষ্টা করছে।
১) অস্বাভাবিকভাবে স্থির হয়ে থাকা
প্রকৃত স্বস্তি মানেই শরীরের স্বাভাবিক গতিবিধি। কিন্তু যদি কেউ নিজেকে খুব বেশি স্থির রাখেন, যেন প্রতিটি অঙ্গবিন্যাস একেবারে নিয়ন্ত্রিত—তাহলে বুঝতে হবে তিনি মনের ভেতর অস্থিরতা চেপে রাখছেন।
২) অত্যন্ত সচেতনভাবে অঙ্গভঙ্গি করা
স্বাভাবিক অবস্থায় হাতের নড়াচড়া, মাথা চুলকানো, ভঙ্গির পরিবর্তন—সবকিছুই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে। কিন্তু যদি কেউ অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিতভাবে তার অঙ্গভঙ্গি করেন, তবে সেটি এক ধরনের ভেতরের স্নায়ুচাপের লক্ষণ হতে পারে।
৩) ইচ্ছাকৃতভাবে ধীরগতিতে চোখের পলক ফেলা
স্বাভাবিক অবস্থায় চোখের পলক স্বতঃস্ফূর্তভাবে পড়ে। কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ধীরগতিতে পলক ফেলেন, তবে বোঝা যায় তিনি নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করছেন।
৪) ঠোঁট চেপে রাখা
ঠোঁট চেপে রাখা বা ঠোঁট শক্ত করে বন্ধ রাখা এক ধরনের অজান্তে স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া। এটি বুঝিয়ে দেয়, তিনি হয়তো কিছু বলার আগে খুব সতর্ক, অথবা মানসিক চাপে আছেন।
৫) শ্বাসপ্রশ্বাস অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত রাখা
সচেতনভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা অনেক সময় চাপ বা নার্ভাসনেসের ইঙ্গিত দেয়। যখন কেউ চেষ্টা করেন প্রতিটি শ্বাস ধীরস্থির ও পরিমিত রাখতে, তখন সেটি স্বাভাবিক স্বস্তির পরিবর্তে কৃত্রিম আত্মবিশ্বাসের সংকেত হতে পারে।
৬) চোখের যোগাযোগ ধরে রাখার অতিরিক্ত চেষ্টা
নিজেকে আত্মবিশ্বাসী দেখানোর জন্য কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘক্ষণ চোখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু সত্যিকারের আত্মবিশ্বাসী মানুষদের দৃষ্টির চলাচল স্বাভাবিকভাবে ঘটে।
৭) প্রতিক্রিয়ায় হালকা বিলম্ব
প্রকৃত স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে কথোপকথনে প্রতিক্রিয়া আসতে দেরি হয় না। কিন্তু যদি কেউ কথা বলার সময় একটু দেরি করে মাথা নাড়ান বা প্রতিক্রিয়া দেন, তবে বুঝতে হবে তিনি অত্যন্ত সচেতনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করছেন।
৮) হাসি দ্রুত মিলিয়ে যাওয়া
আসল হাসি চোখের কোণায় পৌঁছায় এবং বেশ কিছুক্ষণ থাকে। কিন্তু যদি কারও হাসি খুব সংক্ষিপ্ত হয় বা মুখের পেশি একেবারে টানটান থাকে, তবে সেটি নিয়ন্ত্রিত ও কৃত্রিম মনে হতে পারে।
আত্মবিশ্বাস কেবল বাহ্যিক ভঙ্গির ওপর নির্ভর করে না, বরং এটি আসে মনের গভীর থেকে। কেউ যদি নিজেকে অত্যন্ত সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন, তবে সেটি প্রকৃত স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবর্তে লুকানো নার্ভাসনেসের প্রকাশ হতে পারে।
এই সূক্ষ্ম শরীরী ভাষার সংকেতগুলো বুঝতে পারলে, আপনি মানুষকে আরও গভীরভাবে পড়তে শিখবেন। আসল আত্মবিশ্বাস তখনই প্রকাশ পায়, যখন আমাদের আর সেটি জাহির করার প্রয়োজন হয় না।
রিফাত